মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় অনুমোদন ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার,অকটেন ও পেট্রোল। যত্রতত্র দাহ্যপদার্থ বিক্রির বিধান না থাকলেও এ উপজেলায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব গ্যাস সিলিন্ডার। সেই সঙ্গে হাতের নাগালেই মিলছে বোতলভর্তি পেট্রোল ও অকটেন। এভাবে যত্রতত্র দাহ্যপদার্থ বিক্রির কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা।
সরকারি বিধি অনুযায়ী, গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল, মবিল বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধা পাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী এসব শর্ত পূরণ করলেই কেবল পেট্রোলজাতীয় দাহ্যপদার্থ বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। এলপিজি সিলিন্ডার ও পেট্রোল বিক্রির জন্য বিস্ফোরক লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র রাখার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নেই।
ঢাকা বিভাগীয় বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্র জানা যায়, খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে একজন বিক্রেতা সর্বোচ্চ ১২কেজির ১০টি পর্যন্ত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ রাখতে পারবেন। পেট্রোল বা ডিজেল বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ হাজার লিটার পর্যন্ত মজুদ করতে পারবেন। তবে আবাসিক এলাকায় মুজদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিংগাইর সদর, ধল্লা, বাস্তা, খাসেরচর, জায়গীর, ভূমদক্ষিন, রায়দক্ষিন, জয়মন্টপ, সায়েস্তা, মানিকনগর, চান্দহর, শান্তিপুর, পাড়াগ্রাম, জামশা, গোলাইডাঙ্গা, চারিগ্রাম, গোবিন্দল, বায়রা, বাইমাইল ও তালেবপুরের বিভিন্ন মুদি দোকান, স্যালুন (নর সুন্দর দোকান), ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকান, ফটোকপির দোকান, চায়ের দোকানসহ প্রত্যান্ত অঞ্চলের অলিগলি, পাড়া-মহল্লার হাটে-বাজারে দেদারছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে। উপজেলায় তিনটি পেট্রোল পাম্প থাকলেও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বা নির্দিষ্ট দোকানে প্লাস্টিকের বোতলে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল। যে কেউ ইচ্ছা করলেই সেগুলো কিনতে পারছেন। ১০টির জায়গায় ২’শত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করলেও এতে কর্তৃপক্ষের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা এলপিজি গ্যাস ব্যবসায়ী (ডিলার) সমিতির সভাপতি সিংগাইরের সেলিম হোসেন বলেন, যে কারো ১২কেজি সমপরিমানের ১০টি বোতল মজুদ রেখে বিক্রি করার অধিকার আছে। তাই আমার লোকজন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এর অধিক বোতল সরবরাহ করেনা। কোন বিক্রেতা যদি তথ্য গোপন করে ১০টির বেশি বোতল মজুদ করে সেটা দেখার দায়িত্ব আমার না। সেটা দেখবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার জয়মন্টপে বোতলে করে পেট্রোল বিক্রি করেন এমন একজন বলেন, এ কাজে তার কোনো লাইন্সেস নেই। এলাকার মানুষের উপকার হয় তাই এভাবে বিক্রি করি। এ প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লাইসেন্স পরিদর্শক আব্দুল হামিম বলেন, দাহ্যপদার্থ, গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল-ডিজেলের ব্যবসার ক্ষেত্রে অবশ্যই ফায়ার লাইসেন্স নিতে হবে। যত্রতত্র এসব দাহ্যপদার্থ বিক্রির কারণে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। ১৯৬১ এবং ২০০৩ এর বিধান অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই দাহ্যপদার্থ বিক্রির ব্যবসা করতে হবে।
এ ব্যাপারে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, খুচরা মার্কেটে যত্রতত্র যেভাবে গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল বিক্রি হচ্ছে তার ৯৮ শতাংশই অবৈধ। মানুষ হাতের কাছে পায় বিধায় খরচ কম পড়ে এবং বিক্রেতারাও এ ব্যবসায়ে হরহামেশায় জড়িয়ে পরছে। এতে যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে গ্যাস সরবরাহের আগে বিস্ফোরক লাইসেন্স আছে কি না তা দেখে নেওয়া উচিত। বিনা লাইসেন্সে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন এলপিজি বা দাহ্যপদার্থ বিক্রি করতে না পারে তার জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশ যদি সহযোগীতা করে তাহলে কাজটা আমাদের জন্য সহজ হয়। এছাড়া জনবল আর পরিবহন সংকটে প্রত্যান্ত অঞ্চলে যথাযথভাবে মনিটরিং করা হয়ে ওঠে না বলেও তিনি জানান।