1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
মোটরসাইকেল কিনতে মুক্তিপণের আশায় শিশু আল আমিন কে হত্যা!
বাংলাদেশ । শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
ব্রেকিং নিউজ
ডাঃ তাহসীন বাহার সুচনার বিজয়ে কুমিল্লার লন্ডন প্রবাসীদের ইফতার ও মিষ্টি বিতরন এক মিনিটে ৮টি ক্রিম বিস্কুট খেয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ আবেদন । বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেন সাকিব আল হাসান অবরোধের প্রতিবাদে ইবি ছাত্রলীগের মোটরসাইকেল শোডাউন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বিএনপি জামায়াতকে অগ্নি সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে নির্বাচনে আসার আহবান-এমপি বাহার হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনে  সৈয়দপুর পুলিশের সাফল্য, গ্রেফতার ৩ কুলাউড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সুপারের তদারকি জাপার সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ কুমিল্লায় হরতাল-অবরোধে ২২ পিকেটিং-ভাংচুর মামলা গ্রেফতার ১০৪

মোটরসাইকেল কিনতে মুক্তিপণের আশায় শিশু আল আমিন কে হত্যা!

মোঃ সাইফুল ইসলাম তানভীর:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৪১৮ বার পড়েছে

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নিখোঁজের চারদিন পর লাশ উদ্ধার হওয়া আল-আমিন(৭) হত‍্যার রহস্য উনমোচন হয়েছে। গ্রেফতার ৩জনের স্বীকারোক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে হত‍্যার মূল রহস্য। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নজরে আসতে প্রথমেই নিজেদের মোটরসাইকেল থাকা প্রয়োজন। এমন ভাবনা থেকে টাকার সন্ধানে নামে হৃদয় হোসেন (২০), সাদ্দাম হোসেন (১৯) ও নাজমুল হোসেন (১৬) নামের তিন তরুণ। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। পরিবারের অবস্থাও তেমন ভালো না। শেষ পর্যন্ত এ তিন তরুণ সিদ্ধান্ত নেয়, মুক্তিপণের মাধ্যমে টাকা আদায় করার। আর ওই টাকা দিয়েই রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টিতে আসতে মোটরসাইকেল কেনার ছক কষে তারা।

যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। মুক্তিপণের জন্য তিন তরুণ টার্গেটে রাখা ব্যক্তিদের খুঁজতে থাকে। সেইসঙ্গে তারা তিনজনই সিদ্ধান্ত নেয়, মুক্তিপণ পেতে অপহরণ করা ব্যক্তিকে তুলে নেয়ার পর প্রথমে হত্যা করবে এবং হত্যার শিকার ব্যক্তির পরনের পোশাক চিহ্ন হিসেবে রেখে মুক্তিপণ আদায় করবে।

এমন রোমহর্ষক সিদ্ধান্তের এক পর্যায়ে এলাকার দুজনকে টার্গেট করে তারা। কিন্তু টার্গেটে থাকা ব্যক্তিরা বয়সে একটু বড় হওয়ায় অপেক্ষাকৃত বয়সে ছোট শিশু আল-আমিনের (০৭) সন্ধান পেয়ে যায় তারা। সুযোগ বুঝে শিশু আল-আমিনকে কৌশলে তুলেও নিয়ে যায়। এরপর পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আল আমিন অপহরণের পর দ্রুতই হত্যা করে তারা। হত্যার পর পরিকল্পনা মাফিক শিশুটির পরনের পোশাক চিহ্ন হিসেবে রেখে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা সফল হয়নি। তারাও রক্ষা পায়নি। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জালে ধরা পড়েছে দুই তরুণ।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ পিবিআইয়ের হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মানিকগঞ্জ ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন, ‘গত ২৮ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে শিশু আল-আমিন বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তার ওপর বাইসাইকেল চালানোর জন্য বের হয়। এরপর ঘণ্টা পার হলেও বাড়ি না ফেরায় তার মা খোঁজাখুজি শুরু করেন। বাড়ির আশপাশে ও সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া শেষে ছেলেকে না পেয়ে পর দিন আল-আমিনের বাবা শহিদুল ইসলাম মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানায় গিয়ে ছেলের নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি করেন।’

পরে গত ৩১ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশীরা আল-আমিনের সন্ধানে বেরুন্ডি গ্রামের চকে টেমা মিয়ার পরিত্যক্ত ভিটায় খোঁজ করলে ওই ভিটার পাশে বাঁশঝাড়ের ভেতর শিশুটির পরনের গেঞ্জির অংশবিশেষ, প্যান্ট ও মাছির আনাগোনা দেখতে পায়। সন্দেহজনক অবস্থায় সেখানে গিয়ে বাঁশপাতা সরিয়ে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি অবস্থায় সাদা রংয়ের একটি প্লাস্টিকের বস্তা দেখতে পান তারা। পরে সেটির ভেতর মেলে শিশু আল-আমিনের নিথর দেহ।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিশু আল-আমিন হত্যার বিষয়ে ওইদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা আমাদের নজরে আসে। এরপরই আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি এবং ঘটনার সম্ভাব্য সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করি। সেই সঙ্গে স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও শিশু আল-আমিনের সেদিনের চলাফেরার সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে হৃদয়, সাদ্দাম ও নাজমুল নামে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে। সকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তিন তরুণ জানিয়েছে, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য যে কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করে তারা। এজন্য তারা প্রথমে এলাকার বাসিন্দা রুপমের ছেলে রোহান ও তোতা মিয়ার ছেলে রহমতের মধ্যে যেকোনো একজনকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু রহমতের বয়স বেশি হওয়ায় তাকে অপহরণের চিন্তা বাদ দেয়। পরে রোহানকে অপহরণের ব্যাপারে তারা একমত হয়।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিপণ আদায়ের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, গ্রেফতার হৃদয় শিশু আল-আমিনকে বন্যার পানি দেখানোর কথা বলে সাপের ভিটায় (বড় বাঁশঝাড়) নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল নাজমুল। দুজনে মিলে প্রথমে আল-আমিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে নাজমুলের কাছে থাকা প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে মৃতদেহ ঢুকিয়ে ফেলে। আল-আমিনের পরণের গেঞ্জি ও প্যান্ট মুক্তিপণ আদায়ের প্রমাণ হিসেবে খুলে রাখে। এরপর লাশের বস্তাটি বাঁশঝাড়ের কাছাকাছি জায়গায় প্রায় হাঁটু পানিতে ডুবিয়ে রেখে একটি মুরগির নিটারের (বর্জ্য) বস্তা দিয়ে চাপা দেয়। এ সময় নাজমুলের ফোন থেকে হৃদয়, সাদ্দামকে ফোন দিয়ে বলে যে কাজ হয়ে গেছে।’

ঘটনার পরে আল-আমিনের ব্যবহৃত সাইকেল দিনের বেলায় হৃদয় ও নাজমুল লুকিয়ে রাখে এবং রাতে হৃদয়দের বাড়ির পশ্চিম পাশে পুকুরে ফেলে দেয়। তারা ২৮ আগস্ট আল-আমিনকে হত্যা করলেও হৃদয় যে জায়গায় বস্তা পুঁতে রেখেছিলো সেই বস্তা পানির নিচ থেকে তুলে পাশেই শুকনো জায়গায় মাটিতে গর্ত করে ৩০ আগস্ট আবারও পুঁতে রাখে। যেকারণে স্থানীয়রা ওইদিন মৃতদেহটা খুঁজে পায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তাদের পরিকল্পনা ছিলো শিশুটিকে হত্যার পর নতুন সিম থেকে শিশুর স্বজনদের ফোন দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করবে। কিন্তু সাদ্দাম ঘটনার দিন নতুন সিম সংগ্রহ করতে না পারার কারণে আল-আমিনের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। তাই তারা মুক্তিপণও চাইতে পারেনি। কিন্তু মুক্তিপণ চাওয়ার আগেই স্থানীয়রা শিশুটির মৃতদেহ পেয়ে যাওয়ায় তারা এলাকা ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।’

তিনি বলেন, ‘তারা পালানোর জন্য প্রথমে মানিকগঞ্জ থেকে সাভারের একটি হোটেলে উঠে। সেখানে হোটেল বয়ের ফোন থেকে ওই শিশুর বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় হৃদয়। কিন্তু তারা যেকোনো ধরা পড়ার ভয়ে ছিল। তাই মুক্তিপণ চাইলেও ওইদিন সাভার থেকে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে চলে যায়। তারা অবৈধভাবে ভারতে পালাতে চেয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারি এড়াতে পারেনি তারা। এছাড়া অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন তাদের পর্যাপ্ত টাকা দিতে না পারায় তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। পরে সেখান থেকে রাজবাড়ীতে পালিয়ে যায় তারা। সেখানে আত্মগোপনে থাকার চেষ্টা করলেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে পিবিআইয়ের জালে ধরা পড়ে।’

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত এসপি বলেন, ‘তারা আগে থেকেই অপহরণের পর হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। মূলত, তাদের অপহরণের পর অপহৃত ব্যক্তিকে নিয়ে পালানোর মতো সক্ষমতা ছিলো না। অপহৃত ব্যক্তিকে রাখতে হলে টাকা প্রয়োজন, গাড়ি প্রয়োজন, সেসব না থাকায় তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যাকেই অপহরণ করবে আগে হত্যা করবে। তারপর হত্যার শিকার ব্যক্তির পোশাক স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে টাকা আদায় করবে। এটাই ছিলো তাদের মোটিভ।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD