মাসের এখনও ৬ দিন বাকি। এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে হবিগঞ্জের ৪টি গ্যাস পাম্পের নির্ধারিত বরাদ্দ। ফলে পাম্পগুলোতে গ্যাস না থাকায় বিপাকে পরেছেন পরিবহণ চালকরা। চালু থাকা পাম্পগুলোতে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থেকেও মিলছে না গ্যাস। এতে গাড়ি রাস্তায় নামাতে পারছেন না অনেক চালক। জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলায় ৮টি সিএনজি পাম্প রয়েছে। প্রতিটি পাম্পে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্যাস বরাদ্দ দেয় জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানী।
কিন্তু মাসের এক সপ্তাহ বাকি থাকতেই চারটি পাম্প বরাদ্দকৃত গ্যাস বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে এই পাম্পগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানী। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাম্পগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। পাম্পগুলো হলো, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কদমতলী জিএস ব্রাদার্স, শায়েস্তাগঞ্জ সিএনজি পাম্প, মাধবপুরে আল-আমীন সুশান।
সরেজমিনে চালু থাকা কয়েকটি ফিলিং স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনের সড়কের উভয় পাশে গ্যাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে শত শত গাড়ি। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার একমাত্র সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও বাহুবলের মীরপুর সিটকো মাধবপুরের সেমকো স্টেশনে গ্যাস নেওয়ার জন্য অটোরিকশার প্রায় এক কিলোমিটার করে দীর্ঘ লাইন হয়েছে।
জেলার ৪টি গ্যাস স্টেশন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে গ্যাস নেওয়ার জন্য এ দীর্ঘ লাইনে কয়েক ঘণ্টা ধরে অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চালকরা। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গ্যাস স্টেশন কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। ফলে বাহুবল, মিরপুর, চুনারুঘাটের, আসাম পাড়া, শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৫ শতাধিক অটোরিকশা গ্যাস ভর্তি করতে না পারায় বন্ধ রয়েছে।
গ্যাস নিতে আসা শায়েস্তাগঞ্জের মাসুক মিয়া, বাহুবলের আব্দুস শহীদ, চুনারুঘাটের ফজর আলী, হবিগঞ্জ সদরের সুরুজ আলীসহ বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তাদের মধ্যে অনেকে ভোর সাড়ে ৪ টার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সকাল ৮টার সময় গ্যাস পেয়েছেন। আবার কেউ দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর শোনেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। গ্যাস না পেলে গাড়ি কিভাবে চালাব আর পরিবারের জন্য কি নিয়ে যাব জানি না। ফজর রহমান জানান, গ্যাস সংকটে আমাদের স্ট্যান্ডের প্রায় দেড় শতাধিক গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল রবিবারের ছেয়ে সোমবার দুদিনের চেয়ে গতকাল সোমবার সবচেয়ে বেশি গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমদের অনাহারে থাকতে হবে। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর সমস্যা সমাধান করে তারাতাড়ি গ্যাস স্টেশন খুলে দেওয়ার দাবী চালকদের। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্যাস কর্তৃপক্ষের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানান, সরকার নির্ধারিত লোড আমাদেরকে মেনে চলতে হবে।
সরবরাহ বন্ধকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০ জুলাই বরাদ্দের পরিমাণ শেষ হয়েছে। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে বরাদ্দের ভেতরে তারা সরবরাহ করে। বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, বর্তমানে সরকার সবক্ষেত্রেই গ্যাস সরবরাহ সীমিত করছে। তাই এখন বাড়ানোর বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে চলতি মাস শেষ হলে পুনরায় তারা বরাদ্দকৃত গ্যাস পাবে এবং যানবাহনে সরবরাহ করতে পারবেন। এদিকে স্টেশন মালিকরা জানান, বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য বারবার আবেদন করার পরও বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ফলে হাজার হাজার চালক গ্যাস না পেয়ে পড়েছেন দুর্ভোগে।
হাজার হাজার যানবাহন গ্যাস না থাকায় সড়কের পাশে অবস্থান করছে। বরাদ্দের পরিমাণ শেষ হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে যে ৪টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন চালু রয়েছে সেগুলো যানবাহনের চাপ সামলাতে পারছে না। একদিকে সিএনজি অটোরিক্সা, গণপরিবহন ও প্রাইভেট যানবাহনের কারণে স্টেশনে প্রতিদিনই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যানবাহন চালক ও স্টেশনের কমরত স্টাফের সাথে ঝগড়া-বিবাদও হচ্ছে।
গ্যাস নিতে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করার কারণে যানবাহনের চালকের দিনপ্রতি আয়ও কমেছে। জিএস ব্রাদাস এর ম্যানেজার অপু ভট্রাচার্য জানান, মাসে ১লাখ ৫৩ ঘনমিটার লিমিট ছিল তা হঠাৎ করে বরাদ্দ সংকট দেখা দেয়, আশা করছি আগামী ১ তারিখ পুণরায় সরবরাহ করতে পারব। একই সমস্য শায়েস্তাগঞ্জ সিএনজি কোম্পানীতেও ম্যনাজার ফজলে রাব্বি জানান, তাদের ১ লক্ষ ৯১৬৬৬ ঘনমিটার লিমিটি ছিল তাও শেষ হয়ে যায়, ফলে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানী সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
এদিকে জেলাসদরসহ উপজেলার সড়কগুলোতে গ্যাস সংকটের অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন সিএনজি চালকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে জনসাধারণ। উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে যদি কেহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।