মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চান্দহর নদী পারাপারে জনগণের ভোগান্তির পালা আরও বেড়ে গেল।ওই নদীর ওপর নির্মাণাধীন ব্রীজটির কাজ দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকায় অবশেষে চুক্তি বাতিল করেছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।সরেজমিনে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দেখা যায়,স্থানীয় লোকজন নির্মাণাধীন ব্রিজ সংলগ্ন পশ্চিম পাশের চান্দহর বাজারে কেনাকাটা করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে।
এছাড়া স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী,অসুস্থ রোগী এবং কৃষির উৎপাদিত পণ্য পারাপারেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় ওই এলাকার লোকজনকে।ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তি নিয়ে খেয়া নৌকার ওপরই নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে স্থানীয়দের।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে,সরকারি অর্থায়নে পল্লী সড়কের গুরত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চান্দহর নদীর ওপর ৩১৫ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রীজের কাজ পান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
সে অনুযায়ী ৩৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৩০ টাকা ব্যয়ে গেলো ২০১৮ সালের ৩০জানুয়ারি ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও দু’বছর মেয়াদে শেষ হওয়ার সময়সীমা ছিল গত ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি।কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও ব্রীজ নির্মাণস্থলে পল্টন আনা এবং বালুমাটির দর সংক্রান্ত জটিলতার কারণে চুক্তির সময়সীমার মধ্যে কাজের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ দুই দফায় কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে যার সর্বশেষ সময়সীমা ছিল ২০২১ সালের ৩০জুন।
দেখা গেছে এ সময়ের মধ্যে ব্রিজটি দৃশ্যমানতো দূরের কথা মোট কাজের অর্ধেকও সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।পিলারেই সীমাদ্ধ রয়েছে গেছে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ।ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশনের সাইট অফিসের সহকারি প্রকল্প প্রকৌশলী মোঃ মোহসীন বলেন,চান্দহর নদীটির প্রবেশ পথ পার্শ্ববর্তী ইটাভাড়া এলাকায় নদীর মুখ বন্ধ থাকায় ব্রীজ নির্মাণস্থলে পল্টন আনা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ছাড়া সরকারি রেট অনুযায়ী বালু ধরা হয়েছে প্রতি ঘনফুট ৫ টাকা।অথচ এখানে খরচ পড়ে ১২ টাকা।কোনোভাবেই নদী থেকে বালু উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না।আদৌ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ওই প্রকৌশলী।এদিকে এলজিইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বর্ষা মওসুমে পল্টন আনার জন্য চিঠি দেয়া হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা করেনি এবং চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ না করে বন্ধ রাখায় আমরা ব্রীজ নির্মাণের চুক্তিটি বাতিল করছি।
চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন,এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।চান্দহর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শওকত হোসেন বাদল বলেন,চীফ ইঞ্জিনিয়ারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার ও মানিকগঞ্জ-০২ আসনে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে দিয়ে বলা সত্ত্বেও কোন কাজ হয়নি।একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের ভোগান্তি লাগবে ব্রীজটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ্যের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মুহাম্মদ রুবাইয়াত জামান বলেন,বর্ষা মওসুমে লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য চিঠি দিয়ে পল্টন আনার রিমেন্ডার দেয়াসহ দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি।তাই চুক্তির বর্ধিত মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন পার হওয়ার পর চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে।বতর্মানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিমাণ এবং আর্থিক পাওনাদির হিসাবের কাজ চলছে।চুক্তি বাতিলের পর অবশিষ্ট কাজের ব্যয় নির্ধারণ করে তা অনুমোদনের জন্য এলজিইডি দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ্যের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।