1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়,বিলিনের দ্বারপ্রান্তে হাজারিকা গুড়
বাংলাদেশ । বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়,বিলিনের দ্বারপ্রান্তে হাজারিকা গুড়

সাইফুল ইসলাম তানভীর:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
  • ৬৪২ বার পড়েছে

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রস ছাড়াই চুন ও চিনি দিয়ে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরির খবর পেয়ে, কারখানা বন্ধসহ আর্থিক জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৬ থেকে থেকে মানিকগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেলরে নেত্রীত্বে উপজেলার ঝিটকা, মজমপাড়া, গোড়াইল ও গোপিনাথপুর এলাকায় ভেজালবিরোধি অভিযান পরিচালিত হয়।

জানা যায়, মজমপাড়ার মোঃ ককেল এর বাড়িতে খেজুরের রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে গুড়। খবর পেয়ে সেখানে ভ্রাম্যমান টিম অভিযান চালালে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন ভেজাল কারী মূল হোতা মোঃ ককেল। এসময় তার রান্নাঘর থেকে ভেজাল গুড় তৈরির সরঞ্জাম- চুন, বাসি ঝোলা ও প্রায় ১ মণ ভেজাল গুড় জব্দ করে ধ্বংস করা হয় এবং ২হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়াও ভেজাল গুড় তৈরির দায়ে মজমপাড়া, গোড়াইল ও মালুচি গ্রামের গাফফার,খলিল, মোয়াজুদ্দিন, আলাউদ্দিন ও সেন্টু মিয়াকে সর্বমোট ৬হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানকালে পাঁচ মণের অধিক ভেজাল গুড়ও ধ্বংস করা হয়। এছাড়া মজমপাড়ার ককেল ও রাজশাহী থেকে আগত মৌসুমি গুড় ব্যবসায়ী সেন্টু মিয়ার গুড় কারখানা স্থায়িভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও গত ২৩ ডিসেম্বর একই অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দিয়ে কয়েকজনকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছিল। হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা এলাকার ইতিহাসখ্যাত হাজারী গুড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি দু’হাতে গুঁড়ো করে ফুঁ দিলে তা ছাতুর মতো বাতাসে উড়ে যায়। এ ঐতিহ্য দু’একদিনের নয়, প্রায় ২০০ বছরের। বর্তমানে এক শ্রেণীর অসাধু গুড় তৈরিকারক সাদা রংয়ের গুড়ের ওপর খোদাই করে হাজারী গুড় লিখে বাজারজাত করে সাধারণ ক্রেতাদের ধোঁকা দিচ্ছে। নির্বিচারে খেজুর গাছ কেটে ইট ভাটায় লাকড়ি হিসেবে পুড়িয়ে এই গুড়শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ছাড়াও গাছি সঙ্কট তো রয়েছেই। ফলে দিন দিন জৌলুস আর জনপ্রিয়তায় ভাটা পরছে হাজারী গুড়ের। ভোজন রসিকরা এর মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তুললেও প্রকৃত হাজারী পরিবারের তৈরি গুড় এখনো স্বাদে-গন্ধে সারা বাংলায় তুলনাবিহীন এবং

এর চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু বতর্মানে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং গুড় শিল্পের প্রতি অযত্ন, অবহেলায় বাইরের পৃথিবীতে হাজারী গুড়ের সেই সুনাম দিন দিন ফিকে হয়ে আসছে। দিন দিন অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছে মানিকগঞ্জের ২০০ বছরের ঐতিহ্য ‘হাজারী গুড়’। নিরুপায় হয়ে অনেকেই মৌসুমি এ পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় ঝুকছেন। দেখা গেছে, ঝিটকা শিকদারপাড়া গ্রামে এখনো প্রায় ৪২টি পরিবার এই গুড় তৈরির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ।

গুড়ের বিভিন্ন ধরনের ওপর এর দাম নির্ভর করে। গুড়ের দাম প্রতি কেজি ৬০০-১২০০ টাকা এর মধ্যে হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু প্রিমিয়াম গুড় প্রতি কেজি ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে যেগুলো গাছিদের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কথিত আছে, প্রায় দুইশ বছর আগে ঝিটকা অঞ্চলের হাজারী প্রামাণিক নামে একজন গাছি ছিলেন। যিনি খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করতেন। হঠাৎ একদিন বিকেলে খেজুরগাছ কেটে হাঁড়ি বসিয়ে গাছ থেকে নামামাত্রই একজন দরবেশ তার কাছে রস খেতে চায়।

তখন ওই গাছি দরবেশকে বলেছিলেন, সবে গাছে হাঁড়ি বসানো হয়েছে। এ অল্প সময়ে বড়জোর ১০-১৫ ফোঁটা রস হাঁড়িতে পড়েছে। তবুও দরবেশ তাকে গাছে উঠে হাঁড়ি থেকে রস খাওয়ার আকুতি জানান। দরবেশের রস
খাওয়ার ইচ্ছায় গাছি সত্যি সত্যি খেজুরগাছে উঠেই হতবাক হয়ে যান। গাছি দেখতে পান, সারা রাত ধরে রস পড়তে থাকলে যে পরিমাণ হওয়ার কথা ছিল মাত্র কয়েক মিনিটে পুরো হাঁড়ি রসে ভরে গেছে। গাছি হাঁড়িভরা রস নিয়ে নিচে নেমে দরবেশকে রস খাওয়ান এবং পা জড়িয়ে ধরেন।

গাছিকে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে দরবেশ বললেন, কাল থেকে তুই যে গুড় তৈরি করবি তা সবাই খাবে এবং তোর গুড়ের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। তোর সাত পুরুষ এ গুড়ের সুনাম ধরে রাখবে বলেই দরবেশ দ্রুত চলে যান। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওই দরবেশকে পাওয়া যায়নি। ওই দিন থেকেই হাজারি প্রামাণিকের নামেই এ গুড়ের হাজারীকা নামকরণ করা হয়।

এছারাও মতান্তর রয়েছে যে, ব্রিটিশ আমলে রানী এলিজাবেথ ভারতবর্ষ সফরকালে রানীর খাবার টেবিলে দেওয়া হয়েছিল এই গুড়। রানী কৌতূহলবশত হাতে নাড়াচাড়া করে একটু চাপ দিতেই গুড়ের দলা ভেঙে হাজার টুকরা হয়ে গেলো। এই গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে রানী হাজারী নামে একটি সীলমোহর প্রদান করেন। আর সেই থেকে এর নাম হয় হাজারী গুড়।

সরেজমিনে ঝিটকা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় গাছিরা দুপুরের পর থেকে খেজুরগাছ কেটে হাঁড়ি বসিয়ে দেন। সারা রাত ওই হাঁড়িতে রস পড়ার পর ভোরে গাছ থেকে হাঁড়ি নামানো হয়। এরপর গাছি পরিবারের মহিলারা ওই রস ছেকে ময়লা পরিষ্কার করে। পরবর্তীতে মাটির চুলায় টিনের পাত্রে জ্বাল দিয়ে ঘন করেন। রসের ঘনত্ব বেড়ে গেলে একটি মাটির হাঁড়িতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘুঁটে ঘুঁটে তৈরি করা হয় সাদা রঙের হাজারী গুড়। বেশি শীত এ গুড় উৎপাদনের উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। গুড় উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে কাঠ-বাঁশের চলা,খড়কুটো,নাড়া ও কাশবন।

খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার ঝিটকা, গালা, চালা, বয়রাসহ বেশ কিছু গ্রামে অসাধু কয়েকটি চক্র ভেজাল গুড় তৈরি শুরু করেছে। এসব গুড় কারিগররা জানান, প্রতি দুই মন গুড় তৈরীতে একমন চিনি মেশানো হয়। এছাড়া গুড়ের রঙের জন্য মেশানো হয় চুন, যা দিয়ে ক্ষতিকর জীবানুও ধ্বংস হয় বলে দাবি গুড় কারিগরদের। তারা আরও জানান, শুধুমাত্র খেজুর রসের গুড় তৈরিতে খরচ পড়ে অনেক
বেশী। বেশি দাম দিয়ে গুড় কিনতে চায়না ক্রেতারা।

এলাকাবাসী ও ক্রেতারা এসব অসাধু গুড় বেপারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখে গুড় উৎপাদন করে আসা গাছি সাইফুল ইসলাম হাজারী জানান, বর্তমানে এলাকায় খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় আগেরমতো আর রস সংগ্রহ করতে পারিনা। তাছাড়া গুড় উৎপাদনে ব্যবহৃত লাকরীর দাম বেশি হওয়ায় খরচ বেশি পড়ে। ফলে বিক্রি মূল্যও অধিক পড়ে যায়। আবার অসাধু লোকের তৈরি ভেজাল
গুরের জন্যও আমরা অরজিনাল হাজারী গুড় তৈরিকারীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।

মানিকগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল জানান, অভিযানে ভেজাল উপাদান দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রস ছাড়াই গুড় তৈরির অপরাধে আর্থিক জরিমানা করে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD