মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের কলাবাগান মাজারসংলগ্ন গাজীখালী নদীর ওপর অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের ৩বছর পরেই ভেঙ্গে যাওয়ায় সিংগাইর ও ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার লক্ষাধিক লোক চরম দূর্ভোগে পড়েছে।বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সিংগাইর এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়,বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেনের নামে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীখালী নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণকরা হয়।৪০মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার ১০৬ টাকা।নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ১২ মে সেতুটি স্থানীয় সাংসদ ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর ) দেখা যায়,গাজীখালী নদীর দুই পারের দৈর্ঘ্য অপেক্ষা সেতুটি নির্মাণ করা হয় ছোট করে।এতে ২০২০ সালের বন্যায় পূর্বপাশের কলাবাগান মাজার সংলগ্ন সেতুর গোড়ার মাটি ধ্বসে পুরো সেতুটি নদীতে ভেঙ্গে পড়ে।এরপর প্রায় ৩বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ সেতুটি নতুন করে নির্মাণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
এতে বর্ষা মৌসুমে সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর,ইরতা,নতুন ইরতা,কাংশা ও পার্শ্ববর্তী ধামরাই উপজেলার খরারচর, বহুতকূল,আটি মাইঠানসহ প্রায় ২০টি গ্রামের লোকজন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।বর্তমানে সেতুটি ভেঙ্গে নদীগর্ভে পড়ে থাকায় জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী,অসুস্থ রোগী এবং কৃষির উৎপাদিত পণ্য পারাপারেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ওই এলাকার লোকজনকে। যানবাহনে কোন কিছু বহন করতে হলে প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে সিংগাইর সদর হয়ে রাজধানীতে যেতে হয়।এতে পরিবহন খরচ আগের চাইতে দ্বিগুণ হয়।ওই এলাকার লোকজনকে এক দিকে সময় অপচয় ও অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হতে হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন,সেতুটি ৪০ মিটারের পরিবর্তে ৬০ মিটার অধিক দৈর্ঘ্যের নির্মাণ করলে এমনটা হতো না।সেতুটি নির্মাণে কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও পরিকল্পনায় ভুলের কারণে সরকারের ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার ১০৬ টাকার প্রকল্প নদীতে ডুবে আমাদের মারাত্মক অসুবিধায় ফেলছে।স্থানীয় সাইদুর রহমান বলেন,সেতুটি নির্মাণ করায় সিংগাইর ও ধামরাই উপজেলার মানুষ খুব খুশি হয়েছিল।এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার হতো।নির্মাণের তিন বছর পর ভেঙে যায়।এরপর থেকে দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
কলাবাগান এলাকার মোকবুল হোসেন বলেন,সেতুটি দিয়ে সিংগাইর ও ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার যানবাহন ও মানুষ চলাচল করত।এখানে জরুরি ভিত্তিতে একটি সেতুটি নির্মাণ করা দরকার।এলাকার মানুষের প্রায় ১০কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।এতে যেমন সময় অপচয় হচ্ছে তেমনি গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
খড়ার চর এলাকার হাসানুজ্জামান বলেন,সেতুটি নির্মাণের সময় স্থানীয় প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার ছিল।প্রথমে সঠিক পরিকল্পনা করে সেতুটি নির্মাণ করলে এটি ভাঙ্গতো না।একই জায়গায় বারবার সেতু নির্মাণ করে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে।কাংশা গ্রামের মোঃ বকুল বলেন,সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এই এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চরম সমস্যা হচ্ছে।এ ছাড়া স্থানীয় কৃষকেরা পড়েছেন বিপাকে।তাঁদের অতিরিক্ত গাড়িভাড়া দিয়ে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বাজারে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
তালেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রমজান আলী বলেন,নদীর দুই পারের দৈর্ঘ্য অপেক্ষা সেতুটি ছোট করে নির্মাণ করা হয়েছে।তাই বন্যায় নদীর স্রোতে সেতুটি ভেঙ্গে গেছে।এতে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি।তারা আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছে খুব শিঘ্রই এখানে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ করবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রুবাইয়াত জামান বলেন,গাজীখালী নদীর ওপর ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।খুব তাড়াতাড়ি সয়েল টেস্ট করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।এরপর কাজ শুর হবে।