মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের দক্ষিন জামশা গ্রামের রতন বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির বিরদ্ধে প্রতিবেশিদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।এতে চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিবেশি জহুরা বেগমের পরিবারসহ গ্রামের অনেক মানুষ।স্থানীয় সমাজপতি ও প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়েও প্রতিকার মেলেনি।সম্প্রতি গ্রামবাসী ওই দেয়ালের রাস্তার অংশটুকু ভেঙে দিলেও রতন বিশ্বাসের ভয়ে ওই রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করতে সাহস পাচ্ছে না।এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটেছে।বিষয়টি সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।
মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার সারারিয়া মৌজায় ৪৫ শতাংস জমির মালিক দক্ষিন জামশা গ্রামের মৃত নাজার আহাম্মদের স্ত্রী জহুরা বেগম ও তার সন্তানরা।ওই জমিতে বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন তারা।চলাচলের জন্য ৬ ফুট চওড়া একটি রাস্তা ব্যবহার করতেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ অন্যরা।কিন্তু তাদের তিন শতাংস জমিসহ প্রায় ৬মাস আগে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন প্রতিবেশি রতন বিশ্বাস।এতে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পড়েছেন জহুরা বেগমের পরিবারসহ গ্রামের অনেক মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে রতন বিশ্বাসের বাড়ির পাশ দিয়ে যে সরু একটি মাটির কাচা রাস্তা রয়েছে তার উত্তর প্রান্তে জহুরা বেগমের বাড়ি।তার বাড়ির চারপাশে রতন বিশ্বাসসহ অন্যদের জমি।চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা জহুরা বেগমের বাড়ি থেকে বেড় হওয়ার বন্ধ হয়ে গেছে।সম্প্রতি ওই দেয়ালের রাস্তার অংশটুকু ভেঙে দেন স্থানীয়রা।কিন্তু নতুন করে হামলা-মামলা ও হয়রানীর আশঙ্কায় ওই রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করতে সাহস পাচ্ছেনা।
জহুরা বেগমের মেয়ে সায়মা পারভীন বলেন,আমাদের তিন শতাংস জমি দখল করে দেয়াল তুলে চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন রতন বিশ্বাস।এখন জোর জঙ্গল ও অন্যের জমির উপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।কোনো মালামাল নেওয়া আনা করতে পারছি না।একমাত্র আয়ের উৎস মুরগির খামারটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে বিচার চেয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি।রাস্তা নিয়ে কথা বললে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে হয়রানি করেন তিনি।কখন কোন ঘটনা ঘটিয়ে রতন বিশ্বাস আমাদের ফাঁসিয়ে দেন সেই চিন্তায় পুরো পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছে।
অভিযুক্ত রতন বিশ্বাস বলেন,এতদিন মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার জায়গার উপর দিয়ে প্রতিবেশীদের চলাচল করতে দিয়েছি।নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাড়ির বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করায় রাস্তাটি বন্ধ হয়েছে।এতে কার কি সমস্যা হলো,সেটা আমার দেখার বিষয় না।সালিশী বৈঠকে বসলে সবাই রাস্তার জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন।রাস্তার জায়গা না ছাড়ার কারণে বাউন্ডারি ওয়াল,ঘর-বাড়ি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।এসময় আমাদের মারধর করে দুই লাখ টাকার ক্ষতি সাধনসহ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় তারা।
ঘটনার প্রতেক্ষদর্শী রতন বিশ্বাসের চাচা জগদীশ বিশ্বাস,প্রতিবেশী ইজ্জত আলীর স্ত্রী হাবিয়া বেগম ও ফরজ আলীর স্ত্রী মালেকা বেগম বলেন, ঝগড়াঝাটির আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখি এলাকার কিছু লোক দেয়ালের রাস্তার মুখের অংশ ভেঙ্গছেন।কিছুক্ষণ পর তারা চলে যায়।কাউকে রতন বিশ্বাসের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট করতে দেখিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিঠু বলেন,আমি চেষ্টা করেছি সমস্যাটি সমাধান করার।রতন বিশ্বাসও রাস্তার জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছিলেন।কিন্তু তার প্রতিপক্ষের লোকজনের অসহযোগীতার কারণে সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব হয়নি।সহযোগীতা করলে রতন বিশ্বাসের সাথে কথা বলে তাদের রাস্তার ব্যবস্থা করে দেব।
সহকারি পুলিশ সুপার (সিংগাইর সার্কেল) রেজাউল হক বলেন,লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জহুরা বেগম ও রতন বিশ্বাসের মধ্যকার বিরোধ নিস্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।উভয় পক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলা হয়।মানবিক কারণ ও বাস্তবতার নিরিখে রতন বিশ্বাসকে রাস্তার জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়।কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি তা ছাড়েননি।মুলত রাস্তার জায়গা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে।তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।