মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার হাট-বাজার ইজারায় ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে সমঝোতা করার অভিযোগ ওঠেছে ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল কতিপয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। কাগজ-কলমে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কৌশলে সরকারকে বঞ্চিত করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে। এ নিয়ে সরকারদলীয় একাংশের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, বাংলা ১৪২৯ সনে উপজেলার ২৫ টি হাট-বাজার ইজারার দরপত্র আহবান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উপজেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী গত ৮ মার্চ ছিল দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। পরদিন ৯ মার্চ দুপুর পর্যন্ত দরপত্র দাখিল করা হয়। তার আগেই গুরুত্বপূর্ণ সিরাজপুর পশু ও সাধারন হাট, বায়রা পশু ও সাধারন হাট, জয়মন্টপ পশু ও সাধারণ হাট এবং সাহরাইল দৈনিক বাজার ইজারা নিয়ে সমঝোতার ফন্দি আঁটে একটি চক্র। চক্রটি এ হাটগুলোর দরপত্র ক্রয় করতে আসা ব্যক্তিদের বাঁধা প্রদান করে। নানা বাঁধা বিপত্তির মুখে ওই হাট- বাজারগুলোর প্রতিটিতে ১০/১২ টি দরপত্র বিক্রি হয়। প্রত্যকটিতে জমা পড়ে ৩টি করে। অধিকাংশ ক্রেতাই তোপের মুখে দরপত্র গুলো জমা দিতে পারেননি।
সুত্র মতে, ৯ মার্চ বিকেল ৩ টায় দরপত্র বক্স খোলা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী ,সিরাজপুর পশু ও সাধারণ হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা দেখানো হয়েছে চান্দহর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মো. আজিজুর রহমান, বায়রা পশু ও সাধারন হাটের ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মো. মহিদুর রহমান, জয়মন্টপ সাধারন হাটের ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মঞ্জুরুল করিম , জয়মন্টপ পশু হাটের উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন ও সাহরাইল দৈনিক বাজারের ইজারাদার আব্দুল জলিল পত্তনদারকে।
সুত্র জানায়, সিরাজপুর পশু ও সাধারন হাটের ইজারা মূল্য ৬০ লাখ, বায়রা পশু ও সাধারন হাট ৩৩ লাখ ২৫ হাজার, জয়মন্টপ পশু হাট ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা, জয়মন্টপ সাধারন হাট ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা ও সাহরাইল দৈনিক বাজার ৭ লাখ ৪০ হাজার ৫০২ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে উপজেলার ২৫ টি হাট-বাজারের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণগুলোসহ প্রায় সবগুলোই ইজারা মূল্যে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি হাট-বাজার ইজারা মূল্যের ২-৩ গুণ বেশি মূল্যে সমঝোতা হয়েছে। বর্তমান প্রতিযোগীতামুলক সময়েও ইজারা মূল্যে হাট-বাজার বরাদ্ধ হওয়া নিয়ে সকল মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলা ১৪২৭ সনে সমঝোতা না হওয়ায় উপজেলার সর্ববৃহৎ সিরাজপুর পশু হাটটি সর্বোচ্চ ১ কোটি ৪ লাখ টাকায় ইজারা হয়। এ বছর ওই হাটটিসহ অন্যান্য হাটগুলো সমঝোতার মাধ্যমে ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় প্রায় কোটি টাকা চলে গেছে এ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের পকেটে। ফলে সরকার বঞ্চিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।
সিরাজপুর হাট ইজারাদার মো. আজিজুর রহমান দু’বছর আগে ১ কোটি ৪ লাখ টাকার হাট ৬০ লাখ টাকায় পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ৩ বছরের গড় মুল্যে হাটের ইজারা নির্ধারণ হয়। সে অনুযায়ী আমার এ বছর ভ্যাটসহ ৭৫ লাখ টাকা খরচ পড়বে।
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মমতাজ বেগম বলেন, আমি জানি সরকারি নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই। এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, আমরা ঠিকঠাক মতোই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেই। যারা ড্রপ করে তাদের মধ্যে থেকে বৈধ ও যোগ্যকেই আমরা ইজারা দিতে বাধ্য। এর বাইরে তো আমরা কিছু করতে পারি না। বাহিরের লেনদেনের বিষয়টি জ্ঞাত নন বলেও তিনি জানান।