সারা জীবনের উপার্জনের টাকায় কেনা জমি দখল বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করে হয়রানীর প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবী করেছেন অসহায় এক দম্পতি। বুধবার (৯ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেছেন তারা। স্কুল শিক্ষািকা সেলিনা বেগম (মায়া) জানান, আমরা উভয়ই গুরুতর অসুস্থ। আমার স্বামী সরকারী কর্মচারী আব্দুল কাদের এক্সিডেন্ট করায় দীর্ঘ দিন থেকে ভুক্তভোগী। সাথে হৃদরোগে আক্রান্ত। আমি কিডনী সমস্যায় ভুগছি।
জীবনের রক্ত ঘাম করা টাকায় ৫ শতক জমি কিনেছি। এখন সেই জমি বিক্রেতা নিজেই জবর দখল করে রেখেছে। দুই বছর থেকে সেই ভোগান্তিতে অস্থিরতায় আছি। তার মধ্যে এভাবে মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করে বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলছে তথাকথিত মিডিয়াকর্মীরা। আব্দুল কাদের বলেন, এমনিতে বৈধভাবে কেনা জমি কাজে লাগানো দূরে থাক সেখানে যেতেও পারছিনা। মাথা গোজার ঠাঁই করতে গিয়ে আজ নিঃস্ব অবস্থা। চিকিৎসাও করাতে পারছিনা। তার উপর বাড়তি হয়রানী এই মিথ্যে খবর। মিথ্যে বলছি একারনেই যে, প্রকৃত ঘটনা তুলে না ধরে অহেতুক প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, মূলতঃ ২০১৯ সালে সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া জোড়াপুকুর সংলগ্ন জুহি বেগমের ১০ শতকের মধ্যে ৫ শতক জমি ৪৬ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। কেনার পর টিনের বেড়া দিয়ে দখল বুঝে নিয়েছি। কিন্তু এরই মধ্যে এক্সিডেন্ট করায় এক বছরেরও বেশী সময় স্বপরিবারে ঢাকায় অবস্থান করে চিকিৎসারত ছিলাম। ফিরে এসে ওই জমিতে গিয়ে দেখি জমি বিক্রেতা জুহি বেগম আমাদের সীমানায় ঢুকে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরী করে বসবাস করছে। তখন তিনি জানান, আমার ঘরগুলোর ভালো করতেছি তাই এখানে উঠেছি। কাজ শেষ হলে ছেড়ে দিবো। কয়েকমাস পরেও তিনি নিজ ঘরে না ফিরে উল্টো বলেন জমির দখল বুঝে নিতে হলে আরও ৬ লাখ টাকা দিতে হবে। এভাবে জমিটি বেদখল করে।
বিষয়টি স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী নজরুল ইসলাম রয়েলকে জানালে তিনি মিমাংসার উদ্যোগ নেন। জুহি বেগম তাকে পাত্তা না দিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক কে মিথ্যে অভিযোগ দেন যে যুবলীগ নেতা দিলনেওয়াজ খানকে দিয়ে আমরা জমি দখলের চেষ্টা করছি। এর প্রেক্ষিতে তিনি আমাদের ডেকে পাঠালে দেখা করে সবিস্তার জানাই। এতে মহসিন ভাই বুঝতে পারেন যে, জুহি বেগম মিথ্যে বলেছেন।
এরই সূত্র ধরে একদিন সৈয়দপুর থানায় উভয়পক্ষ কে নিয়ে বসেন মহসিনুল হক, পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত খান। কাগজপত্র দেখে তাঁরা জুহি বেগমকে দখল ছেড়ে দিতে বলেন। এতে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে সবাইকে অপমান করে থানা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ অনুযায়ী গত ৭ মার্চ সকালে আমরা ওই জমিতে যাই এবং টিনের বেড়ার স্থলে ইট দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করি। তখন জুহি বেগম বা অন্য কেউ বাধা দেয়নি। ফলে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু বিকালের দিকে হঠাৎ পুলিশ এসে ডিআইজি’র নির্দেশ উল্লেখ করে কাজ বন্ধ রাখতে বলে।
অথচ এই ঘটনাকে রং চং দিয়ে সাজিয়ে দৈনিক প্রথম আলোতে বুধবার (৯ মার্চ) “সৈয়দপুরে যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে বাড়ী দখলের চেষ্টার অভিযোগ” শিরোনামে মিথ্যে, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। যেখানে উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক দিল নেওয়াজ খানকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আব্দুল কাদের বলেন, সেদিন হামলা, ভাংচুর বা জবর দখলের কোন কিছুই হয়নি। এমনকি সামান্য বিকবিতন্ডা বা গালমন্দ করেনি কেউ। অথচ খবরে লুটপাট পর্যন্তও উল্লেখ করে দোষ চাপানো হয়েছে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে। কারণ এখানে দিলনেওয়াজ ভাইয়ের কোন সম্পৃক্ততাই নেই। তাছাড়া আমার যে বক্তব্য তুলে ধরেছেন তা ঠিক নয়। পত্রিকাটির সৈয়দপুর প্রতিনিধির সাথে কথাকালে এমন কোন মন্তব্য আমি করিনি।
আমরা এমন সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে সত্য স্বীকার পূর্বক প্রতিবাদ প্রকাশেরও দাবী জানাচ্ছি। সেইসাথে প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। দেশে আইন থাকতেও যদি এভাবে নিজের পরিশ্রমের টাকায় কেনা সম্পত্তি দখলে নিতে বার বার হয়রানী হতে হয় তাহলে বেঁচে থেকে লাভ কি? সহসাই এই সমস্যা সমাধান না হলে স্বপরিবারে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। তাই দ্রুত এই অন্যায় থেকে আমাদের মুক্তি দিন।