1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
জগন্নাথের মানবেতর জীবন
বাংলাদেশ । বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জগন্নাথের মানবেতর জীবন

আতিফ রাসেল :
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৮১০ বার পড়েছে

জন্ম থেকে দুই হাত নেই। তবুও অন্যের কাছে কখনো সাহায্য চাননি। বাচ্চাদের পড়িয়ে সংসার চালান তিনি। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় তার রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এতে জীবনযুদ্ধে অনেকটা হেরে গিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের বৃদ্ধ জগন্নাথ শীল (৭০)।

সরেজমিনে জগন্নাথের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি ভাঙা টিনের ঘরে স্ত্রী রানীকে নিয়ে থাকেন তিনি। পাশের আরেকটি টিনের ঘরে ছেলে থাকেন। কিন্তু ঘরের দরজা জানালা নেই। এক ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে জগন্নাথের সংসার।

হাট-বাজার থেকে শুরু করে সংসারের সকল কাজ বিশেষ কৌশলে করেন তিনি। পা দিয়েই লেখাপড়াসহ অধিকাংশ কাজ করেন। সহানুভূতি আর সরকারের সার্বিক সহায়তার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান তিনি।
জানা গেছে, মেট্রিক পাস করা জগন্নাথের কপালে জুটেনি চাকরি। তবুও হাল ছাড়েননি।

স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান। কিন্তু করোনার প্রভাবে সেটাও হচ্ছে না ঠিকঠাক মতো।আগের মতো হচ্ছে না ছেলে-মেয়ে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এর মধ্যে আবার জগন্নাথের পৈতৃক সম্পত্তি বেদখলে চলে গেছে। উপজেলার কয়েড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও ছোলায়মান নামের দুই ব্যক্তি জোরপূর্বক তার পৈতৃক ৭২ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন। এজন্য তিনি আদালতের দারস্থ হলে পরবর্তীতে আদালত তার নামে জমির ডিক্রি জারি করেন। পরে আদালত জমি বুঝিয়ে দেয়ার পর দখলদাররা পুনরায় ডিক্রি জারি বাতিলের জন্য মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী জগন্নাথ খুবই কষ্টে দিন পার করছেন। কিন্তু কারোর কাছে হাত পাতেননি তিনি। তার দুই ছেলের একজন বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। ছোট ছেলেটাও বেকার। এতে চরম কষ্টে আছেন পরিবার নিয়ে। প্রতিবন্ধী জগন্নাথ শীল বলেন, জন্ম থেকে দুই হাত নেই। অভাব অনটনের মাঝে ১৯৬৯ সালে  মেট্রিক পাস করি। কিন্তু মেট্রিক পরীক্ষার আগে বাবা ৬৫ টাকা ফিস দিতে পারেননি। সেই সময় ঢাকা গিয়ে মান্না ও কবিতা অভিনীত মলুয়া ছবিতে অভিনয় করি। অভিনয় করে যে টাকা পেয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে মেট্রিক পরীক্ষা দেই। কিন্তু কারো কাছে হাত পাতিনি। এরপর দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। তাদের বিভিন্ন খবর দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল বাজারে বই বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। তখন টেক্সবুক বোর্ডের লাইসেন্স পেয়েছিলাম। ভালোই চলছিলো ব্যবসা। পরে জিয়া সরকার ক্ষমতায় এসে লাইসেন্স বাতিল করে। এতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সারাদেশে সরকার বই বিতরণ শুরু করে। ২০ বছর ব্যবসার পর বই বিক্রি ছেড়ে দেই। এছাড়া বাপ-দাদার জমিও অন্যরা জবর দখল করে আছে। পৈতৃক ভিটা রক্ষার জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী অসহায় জগন্নাথ শীলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD