কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের সাদকপুর এলাকায় ভুয়া কবর নমুনা তৈরি করে বাড়ির চলাচলের রাস্তা দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বুড়িচং থানা ও কুমিল্লা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন তাজুল ইসলামের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। যার পিআর নং ১৩২৭/২১। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,দীর্ঘ এক যুগ ধরে পিতৃসম্পত্তির অংশতে রাস্তায় চলাচল করতেন সুফিয়া খাতুন ও তার স্বামী পরিবার এবং স্থানীয় লোকজন। সুফিয়ার বাবা আব্দুল আহাদ মৃত্যুর আগে তার ছেলে ও মেয়েদের অংশ ভাগ করে দিয়ে যান।
বাবার বাড়ির সাথে সুফিয়ার স্বামীর বাড়ি হওয়ায় তাই তার পিতৃসম্পত্তি সুফিয়ার অংশে জায়গাতে কবরস্থান সংলগ্নে খাল থাকায় নিজ অর্থায়নে ভরাট করে রাস্তা তৈরি করে চালাচল করে আসছে। কিন্তু খাল ভরাট করার পর পিতৃসম্পত্তি দিতে নারাজ সুফিয়ার ভাই আব্দুস কুদ্দুছ ও আব্দুল করিমসহ তাদের ছেলেরা। কিছু দিন পূর্বে পারিবারিক কবরস্থান ও ভরাট করা জায়গাতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে বাঁধা প্রদান করেন সুফিয়ার ভাইয়েরা এবং কয়েকবার মারামারি ঘটনাও ঘটে যায়।
আবার তাদের এ সমস্যা নিয়েও গ্রাম্য সালিশ বসে সেখানেও মিমাংসা করতে ব্যর্থ হয় স্থানীয় সাহেব সর্দাররা। গ্রাম্য সালিশের পর কয়েক দফায় মারামারি হয় তাদের মধ্যে। এ বিষয়ে বুড়িচং থানাতে অভিযোগ করে সুফিয়া খাতুন। ঘটনাস্থলে আসার আগেই মাটি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে ৪টি ভুয়া কবরের নমুনা তৈরি করে রাখেন। অভিযোগ পরিপ্রেক্ষিতে বুড়িচং থানার ওসি আলমগীর হোসেনের নির্দেশনায় ঘটনাস্থলে যায় এসআই বিনোদ দস্তগীর। তাদের সমস্যা মিমাংসা জন্য উভয় পক্ষকে নিয়ে থানার গোলাঘরে বৈঠক বসেও সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
তাই সুফিয়া খাতুন বাধ্য হয়ে বাবার সম্পত্তির পাওনা অংশে ফিরে পেতে (২২ আগষ্ট ২০২১) রবিবার কুমিল্লা আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে যান কয়েকজন সাংবাদিক,সেখানে গিয়ে ভুয়া কবর সম্পর্কে আব্দুস কুদ্দুছকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে তার পক্ষ হয়ে মুজিবুর রহমান নামের এক পথিক হঠাৎ করে এসে সাংবাদিকদের সাথে চড়াও হয়ে উঠে এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে শুরু করে।
তখন এ পথিক বলেন, এ বিষয়ে কোনো নিউজ করলে সাংবাদিককে দেখে নিবেন এবং হুমকি প্রদান করেন। জানা যায়, হুমকিদাতা মুজিবুর রহমান একজন প্রবাসী।সে কুদ্দুছের ভাড়াটিয়া লোক এবং পথিক সেজে সাংবাদিকদের সাথে গালমন্দ করেছে।স্থানীয়রা জানান,সেও খাস জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে রেখেছে। অভিযোগ ভিত্তিতে ভূয়া কবর তৈরি বিষয়ে আব্দুস কুদ্দুছ বলেন; সুফিয়া আমার বোন না,তার নামে কোনো জায়গার অংশ আমাদের কাছে নেই। কবরস্থানের ১১ শতকের জায়গাতে আমি মরে গেলেও কোনো রাস্তা দিমু না। ভুয়া কবর তৈরি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এখানে অনেক কবর আছে। তবে ৪টি কার কার তিনি বলতে পারিনি।
এ বিষয়ে পীরযাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু তাহের বলেন, তাদের এ বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে। আমরা কয়েকবার মিমাংসা করে ব্যর্থ হয়েছি। তবে চলাচল রাস্তায় কোনো কবর ছিলো না। জায়গা দখলের জন্য ভূয়া কবর তৈরি করেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সর্দার ও আওয়ামীলীগের উপজেলা তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ রেজাউল করিম জানান,তাদের জায়গাতে আগে খাল ছিলো। আমার বাড়ির পাশে তাদের বাড়ি। তবে আমার ৫০ বছরের জীবনে এ জায়গাতে কোনো কবর দেখি নাই। তবে আশে পাশে কবর থাকতে পারে। স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, চলাচলের রাস্তার কবরগুলো ইদানিং করেছে। এগুলো সাজানো কবর। তারা আমাদের কোনো কথা মানতে চায় না।
এ বিষয়ে বুড়িচং থানার এসআই বিনোদ দস্তগীর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আমি ঘটনারস্থলে কয়েকবার গিয়ে দেখে এসেছি এবং গোল ঘরে উভয় পক্ষকে এনেও সমাধানের চেষ্টা করেছি। মঙ্গলবার কোর্টের নির্দেশনায় উক্ত জায়গা কেউ দখল না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়ে এসেছি।