খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকায়। একই আলু পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১৩ টাকায়। কৃষকের উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণের খরচের হিসাবে প্রতিকেজি আলুতে গড়ে লোকসান সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার টাকা। এভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে চলে যাচ্ছে কৃষকদের টাকা। চলতি বাজারে পাইকারিতে বস্তাপতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। লাভের আশায় আলু মজুত করে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টরিক্স জাতের আলু বেশি চাষ হয়। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আলু। এসব জমি থেকে আট লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা করলেও পরবর্তী সময়ে লক্ষ্যমাত্রা আট লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব আলুর চাহিদা কমে যায়। ফলে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত আলু গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এমনকি এর প্রভাবে আগামী মৌসুমে বীজ আলুর সাময়িক সংকটও হতে পারে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কয়েকজন কৃষক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বাজারে আলুর দাম গত বছরের তুলনায় কম। প্রতিকেজি ডায়মন্ড, কার্ডিনাল ও অ্যাস্টারিক্স (লাল) জাতের আলু উৎপাদন খরচ পড়ে ১৫ টাকার বেশি। বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত আলুর উৎপাদন খরচ সাড়ে ১৬ থেকে ১৭ টাকা। বর্তমানে বাজারে যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে, সে অনুযায়ী প্রতিকেজি আলুতে দুই টাকা ৫০ পয়সা এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন ও কিনে মজুত আলুতে সাড়ে চার টাকা লোকসান হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, সরকারের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
মোগনপুর উপজেলার আলুচাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। কোল্ড স্টোরেজে এখন আমার এক হাজার ২০০ বস্তা আলু আছে। বাজারে দাম ভালোই, কিন্তু পাইকারিতে দাম নেই। প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো লোকসান গুনতে হবে।’
একই উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের আলুচাষি ও ব্যবসায়ী আল-আমিন হোসেন বলেন, ‘সরকার ত্রাণ হিসেবে আলু দিলে আমাদের লোকসান হতো না। উৎপাদন খরচ ১৭ টাকা হিসেবে বিক্রি করতে পারলেও বাঁচতাম। আমার দুই হাজার ৪০০ বস্তা আলু বর্তমানে স্টোরে আছে। চলমান বাজারে বিক্রি করলে আট লাখ টাকা লোকসান হবে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বকর বলেন, বাজারে ২২ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আলু। আর পাইকারিতে ১৩ টাকা। এ হলো আমাদের দেশের সমস্যা, সিন্ডিকেটের পকেটে কৃষকের টাকা। বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। আমরা সরকারি দপ্তরে জানিয়েছি, কৃষকের এ সমস্যা সমাধানের জন্য। কী পরিমাণ আলু হিমাগারে রয়েছেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে হিসেব নেই তবে জেলার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৬টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে ৮০ লাখ বস্তা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, আলুর দাম কিছুটা কমে গেছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজারে আলুর দাম বাড়তে পারে। এখনও দু’মাস সময় আছে আলুর দাম বাড়ার। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর আলুর দাম কিছুটা বাড়বে।