কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের একসঙ্গে ৪০ শিক্ষার্থীকে শোকজ করেছে বিভাগটি৷ বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন পিএইচ.ডি’র স্বাক্ষরিত এই নোটিশে বলা হয়েছে, এই শিক্ষার্থীরা বিভাগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ, সরাসরি উপাচার্যের কাছে যাওয়া ও ফেসবুকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও বিভাগীয় শিক্ষকদের নিয়ে নানা ধরণের কটুক্তি ও বিব্রতকর মন্তব্য করেছেন।
রোববার বিভাগটির শিক্ষার্থীদের হাতে এই নোটিশটি তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আগামী ৭ দিনের মধ্যে এই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে তাদেরকে।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, আপনারা বিভাগীয় ৪র্থ ব্যাচ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা গত পহেলা সেপ্টেম্বর তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে অনলাইন প্লাটফর্ম, সোসাল মিডিয়া এবং ফেইসবুকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও বিভাগীয় শিক্ষকদের নিয়ে নানা ধরণের কটুক্তি ও বিব্রতকর মন্তব্য করেছেন। এমন কি শিক্ষকের সাথে আপনাদের একাডেমিক আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ভাষা উন্মুক্তভাবে উপস্থাপন এবং স্কিনশট শেয়ার করে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এটি আপনারা করতে পারেন কি না সে বিষয়ে বিভাগ জানতে চায়।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, বিভাগীয় শিক্ষকেরা অবশ্যই শিক্ষার চলমান অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগ একাডেমিক বিষয়ে তৎপর। তথাপি আপনাদের এধরনের অশোভন আচরণে বিভাগ মর্মাহত। তাছাড়া বিভাগীয় একাডেমিক বিষয় নিয়ে আপনারা বিভাগীয় ছাত্র-উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধানের সাথে আলোচনা ব্যতিরেকে বিভাগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও সরাসরি উপাচার্য মহোদয়ের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। আপনাদের ও ধরণের আচরণ বিভাগীয় শৃঙ্খলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধিকে লঙ্ঘণ করেছে।
এ বিষয়ে ব্যাচটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যেহেতু পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষমতা বিভাগের হাতে নেই, তাই আমরা সরাসরি উপাচার্য স্যারেরপ্প কাছে গিয়েছিলাম আমাদের পরীক্ষার দাবিতে৷ আর এসব নিয়েই ফেসবুকে আমরা লেখালেখি করেছিলাম৷ কিন্তু পরবর্তীতে বিভাগের কারণ দর্শানোর এমন নোটিশে আমরা শংকিত, হতবাক।
তবে এ কারণ দর্শানোর নোটিশ নিয়ে বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন পিএইচডি বলেন, ছাত্রদের দাবি দাওয়া ছাত্ররা করবেই। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো শিক্ষককে বিব্রত করা যায় না৷ আর কোনো বিষয়ে বিভাগে আলোচনা না করে সরাসরি উপাচার্য স্যারের কাছে গেলে বিভাগে শৃঙ্খলা থাকে না। এসব কারণেই তাদেরকে এ নোটিশটি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঐ ব্যাচের ক্লাস প্রতিনিধিকে আমি জানিয়েছি। তাদেরকে ঐভাবে জবাব দিতে হবে না। যেহেতু তাদের পরীক্ষা চলছে, ঐ পরীক্ষা শেষে আমরা তাদের সাথে বসবো এবং উদ্ভূত বিষয়গুলো আলোচনা করে সমাধান করবো।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, আমি আগামীকালই এ ব্যাপারে ওই বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ডাকবো, কথা বলবো। সবসময় শিক্ষার্থীদের বিষয়ে একশনে চলে গেলে তো হয় না।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দীর্ঘদিন ধরেই সেশনজটে বিপর্যস্ত। কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া ব্যাচটি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও এরা প্রায় পাঁচ বছরে মাত্র ৪ টি সেমিস্টার শেষ করতে পেরেছে৷ আজ রোববার থেকে ব্যাচটির ৫ম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়েছে৷