রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের নিজ বাসে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।এর আগে গত ৮ জুলাই আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্দেশনা মেনে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন রুটে যাওয়ার তথ্য জমা দিয়েছিলো। পরবর্তীতে লকডাউন শিথিলের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায়, আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বাড়ি ফেরার সকল প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু হুট করে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ। কারণ লকডাউনের সময় গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি ও ভাড়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলেও বেশির ভাগ মালিক সেসব মানেন না। এক্ষেত্রে অনেক বেশি আদায় করা হয়। অর্থিক অসচ্ছল অনেক দূরের শিক্ষার্থী আছেন, যাদের কাছে এখন বাড়ি ফেরার সামর্থও নেই।
এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লেমন আহমেদ বলেন, স্থগিত পরীক্ষা দেওয়ার জন্য দুইবার রাজশাহী আসলাম কিন্তু নানা কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। লকডাউনে রাজশাহীতে আটকে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সেবার বিষয়টি জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। কারণ আমার বাড়ি কুমিল্লায়। লকডাউনের সময় গণপরিবহনে বাড়ি ফেরা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু শেষ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছি। এখন সুস্থ্যভাবে বাড়ি ফিরে ঈদ করতে পারবো নাকি দ্বিধায় আছি।
ফিসারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ শেখ বলেন, আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ। লকডাউনে আটকে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বাড়ি যেতে পারবো এমন সিদ্ধান্তে যেমন খুশি হয়েছিলাম।আজ সেবাটি স্থগিতের কথা শুনে অনেকটা দ্বিধায় পড়ে গেছি। গণপরিবহণ চালু হলেও তারা অনেক বেশি ভাড়া আদায় করে। ফলে বাড়ি যাবো কিনা এই সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় পরে গেলাম।
বাস সেবা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চত করে পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক মকছিদুল হক বলেন, আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারটি জেলার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু লকডাউন শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহণ চালুর সম্ভবনায় বাস সেবা স্থগিত করা হয়েছে। যদি গণপরিবহন না চলে তাহলে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুনরায় সেবা চালু করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক সোয়াদ এক যৌথভাবে বিবৃতিতে বলেন, গত জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্থগিত পরিক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে আসলে হঠাৎ করেই কোনরকম বিবেচনা না করে পরিক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার ফলে রাজশাহীতে এসে চরম বিড়ম্বনার শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনে হঠকারী সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা আর্থিক, শারিরীক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক সময় শিক্ষার্থীদের চাপে তাদের বাড়ি পৌছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে প্রশাসন। যা সম্পূর্ণ অবিবেচনাপ্রসূত এবং অগণতান্ত্রিক।