বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের অন্যতম শক্তিশালী সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।ইতিহাসের পাতায় চোখ মেললেই দেখা যায় দেশের যেকোন আন্দোলন,সুদিন-দুর্দিনে ছাত্রলীগের ভুমিকা ছিল অপরিসীম।তাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বেগবান ও শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগের যুগোপযোগি পরিমার্জিত কমিটির প্রয়োজন,বিশেষ করে রাজশাহীর রাজনীতিতে।চলতি বছরের জুলাই এর ১৬ তারিখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্তে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে রাজশাহী জেলা কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষনা করে এবং দশ কর্মদিবসের মধ্যে আগ্রহী প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) কেন্দ্রে জমা দেয়ার কথা বলা হয়।
এরপর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক জীবন বৃত্তান্ত কেন্দীয় সংসদে জমা দেয়া হয়েছে।কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে যারা জীবন বৃত্তান্ত দিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেরই নানান সমস্যা রয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,সভাপতি পদ প্রত্যাশী রয়েছে হাসিনুর ইসলাম সজল,সাকিবুল ইসলাম রানা,মুসফিকুর রহমান রাতুল।তবে হাসিনুর ইসলাম সজলের বিয়ের গুঞ্জন রয়েছে।এছাড়াও সে মহানগরে বসবাস করে জেলার রাজনীতি করার প্রত্যায় নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।বিষয়টি বেশ খতিয়ে দেখা দরকার।কারন ছাত্রলীগে বিবাহিতদের স্থান নেই।আরেক প্রার্থী সাকিবুল ইসলাম রানা,বাঘা উপজেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া ছাত্রলীগের রাজনীতিকে নেতৃত্ব দিতে চাচ্ছে।
কিন্তু আনুমানিক ২০১৪ বা ১৫ সালে রাজশাহী কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় কলেজের মুসলিম হোষ্টেলের সি-ব্লকে থাকতেন।অর্থাৎ তৎকালীন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন,মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।সে সময় জামায়াত শিবিরের কালো আন্দোলনে নিজেকে শামিল করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।এছাড়াও জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার দায়ে তাকে হোষ্টেল থেকে বের করে দিয়েছিল তৎকালিন রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি।অর্থাৎ তার পদ প্রত্যাশা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী রয়েছে,শ্রী প্রদীপ কুমার সাহা,পিংকু সাহা,মোঃ আফজালুর রহমান রাজীব,জাকির আহম্মেদ অমি,মোঃ হাসিবুল হাসান শান্ত।
প্রথমত শ্রী প্রদীপ কুমার সাহা পিংকু সাহার বর্তমান বয়স রয়েছে ৩১ বছর ৭ মাস।ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৯ বছরের বেশি হলে ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকার কোন নিয়ম নাই।অর্থাৎ পিংকু সাহা কমিটিতে আসলে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলে গণ্য হবে।এরপর আফজালুর রহমান রাজীব,তিনি বাঘা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।কিন্তু নিয়ম শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে গত ২৫ মে ২০২১ তারিখে ছাত্রলীগের প্যাডে লিখিত নোটিশের মাধ্যমে বহিষ্কার করে উপজেলা কমিটি।অর্থাৎ রাজীবকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসা মানে নিয়ম বহির্ভূত ও প্রশ্নবিদ্ধ।আরেক প্রত্যাশী প্রার্থী জাকির হোসেন অমি,যার কথা বলতে গেলে অনেক কিছুই বলতে হবে।
অর্থাৎ তাকে প্রতারক বললেও ভুল হবেনা।সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের বিডিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হয়ে ৪র্থ বর্ষের ভুয়া প্রত্যায়ন বানিয়ে কেন্দ্রে জমা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।সে কলেজের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবী হোষ্টেলে থাকাকালীন সময়ে বহিরাগতদের নিয়ে আড্ডাবাজি ও নিয়ম ভঙ্গের দায়ে হোষ্টেল কর্তৃপক্ষ লিখিত নোটিশ জারি করে।যার স্বারক নং ৪৭/১(ক)।সে গোপনে বিয়ে করে নগরীর হেতেম খাঁ (কলাবাগান) এলাকার এক বাড়িতে ভাড়া থাকা কালীন সময় বেশ কিছু টাকা না দিয়ে পালিয়ে যায়।এমনকি সহ-সভাপতি পদ পরিচয় (বাগমারা উপজেলা) বহন করে নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে দিয়ে রেখেছে।যা খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,সে এই পদে নেই।কারন বর্তমান তালিকায় তার নাম নেই।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাকরি দেয়ার নামের টাকা আত্নসাৎ এর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।তার এসকল তথ্যের প্রমান রয়েছে।সবশেষে হাসিবুল হাসান শান্তর তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।সে বর্তমানে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির যুগ্ন আহবায়ক পদে রয়েছে।প্রসঙ্গত,১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই সেখান থেকে এগিয়ে চলা সংগঠনের।সংগঠনটির জন্মলগ্ন থেকেই ভাঁষার অধিকার,শিক্ষার অধিকার,বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা,দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান,সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে দ্ব্যর্থহীন ভুমিকা রেখেছে ছাত্রলীগ।
৫২র ভাষা আন্দোলন,১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন,১৯৬২ সালে তৎকালীন আইয়ুব সরকার বিরোধী আন্দোলন,এমনকি ১৯৬৬ সালে এই ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরাই বাংলার মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ৬ দফা দাবির গুরুত্ব তুলে ধরেছিল।এরপর ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান,১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রলীগ।৭১র মহান মুক্তিযুদ্ধেও ছাত্রলীগের নিরঙ্কুশ অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশ যে কালো মেঘ গ্রাস করেছিল,সেই মেঘ সরাতে সুদ্বীপ্ত প্রত্যাশার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল।
সেদিনও প্রিয় নেত্রীর পাশে ভ্যানগার্ডের ভূমিকায় ছিল এই ছাত্রলীগ।সবশেষে ২০০৭ সালে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে আটক শেখহাসিনাকে মুক্তির আন্দোলনসহ সব রকম দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময়ই ছিল সামনের কাতারে।এছাড়াও ইতিহাসের সমিকরনে বলা যেতে পারে বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষ নেতার হাতেখড়ি হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে।এদিকে দেশ গঠনের পর থেকে উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে নেতৃত্বের বড় ভুমিকা রেখেছে রাজশাহীর নেতৃত্ব।রাজশাহীতে রাজাকার,আলবদর,দেশদ্রোহী,জামায়াত বিএনপির সন্ত্রসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সবচেয়ে শক্তিশালী ভুমিকা রেখেছে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব।
অতএব,বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া এই সংগঠন যদি কোন প্রশ্নবিদ্ধ নেতৃত্বে যায় তাহলে কে নিবে এর দায়? তাই সকল কিছু যাচাই বাছাই করেই আগামীর রাজশাহীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত ও আরও শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত করতে যোগ্য নেতা বাছাই করবে এমনটা প্রত্যাশা রাজনীতিবিদ ও তৃনমূল ছাত্রদের।