রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নের জানকিপুর গ্রামের বিয়ে পাগল যুবক শুভ মিয়া মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই পাঁচটি বিয়ে করে ফেলেন। তার এ ঘটনায় এলাকাবাসি তাক লেগে গেছেন। আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে একের পর এক বিয়ে করে যাচ্ছিলেন তিনি।
আড়াই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারপিট করে পঞ্চম স্ত্রীকেও বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তথ্য গোপন করে বিয়ে এবং যৌতুকের দাবিতে মারপিটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন পঞ্চম স্ত্রী কলেজ পড়ুয়া তরুণী। অভিযোগ এবং এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নের জানকিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে শুভ মিয়া (৩৫) একজন ভবঘুরে বেকার যুবক। বিদ্যালয়ের চৌকাঠ মাড়াননি কোনোদিন। ছোটোবেলা থেকে ঢাকায় পোশাক তৈরীর কারখায় কাজ করতেন। ১৫ বছর বয়সে সেখানে প্রথম এক কিশোরীকে বিয়ে করেন। কিন্তু সংসার টেকেনি। কিছুদিন পর আবারও বিয়ে করেন। পারিবারিক নানা কারণে সে স্ত্রীও চলে গেছেন। এরপর গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন। গ্রামে এসে আবারও বিয়ে করেন। কিন্তু কোন স্ত্রীই শুভর সাথে সংসার করতে চাননা। আগের স্ত্রীর তথ্য গোপন করে পরের সবগুলো বিয়ে করেছেন এই যুবক। একের পর এক বিয়ে করে তিনি এলাকায় ‘বিয়ে পাগল শুভ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছেন। সবশেষে ডিগ্রী পাশ এক তরণীকে বিয়ে করেন।
এ নিয়ে তার স্ত্রী সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচজনে। কিন্তু আগের ঘটনা জানতে পেরেছেন তার পঞ্চম স্ত্রী। তবে এবার নিজের অপকর্ম ঢাকতে আড়াই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য পঞ্চম স্ত্রীকে মারপিট করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন শুভ মিয়া। পঞ্চম স্ত্রীর নাম রিক্তা খাতুন। উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের আবদুর রশিদের মেয়ে তিনি। বিয়ের কিছুদিন পর রিক্তা জানতে পারেন, তার স্বামী আগে আরও চারটি বিয়ে করেছেন। এক স্ত্রীর সন্তানও রয়েছে। তবে সব স্ত্রীই সংসার ছেড়ে চলে গেছেন। স্বামীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তার ওপর নেমে আসে শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন। রিক্তা খাতুন বলেন, ‘আমার বাবা-মা গরীব। খুব কষ্টে পড়ালেখা করেছি। ডিগ্রী পাস করে চাকরির জন্য বিভিন্নস্থানে আবেদন করছি, পরীক্ষা দিচ্ছি। এরই মধ্যে আমার বিয়ের সম্বন্ধ আসতে শুরু করে। বাবুল ঘটকের মাধ্যমে একটি বিয়ের সম্বন্ধ পাই।’ তিনি আরও বলেন, কোথাও চাকরি হচ্ছেনা। অভাবী সংসারে বাবা মার বোঝা হয়ে থাকায় বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হই। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি, আমার আগে আরও ৪টি বিয়ে করেছিল স্বামী। আমি পঞ্চম স্ত্রী। তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে।
এ কথা জানার পর নিজেকে খুব ছোটো মনে হয়েছিল। লজ্জা, ঘৃণায় আত্নহত্যাও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। পাপ হবে বলে। এরই মধ্যে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে আড়াই লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু গরীব বাবার বাড়ি থেকে এতো টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানাই। তখনই আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে দেয় স্বামী ও শ^শুড়-শাশুড়ি। মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তারা।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানকিপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শুভ’র ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো নয়। শুনেছি, সে তথ্য গোপন করে একের পর এক অনেক বিয়ে করেছে। তবে, কোন স্ত্রীই টেকেনি।’ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শুভ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।
মিলনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, ‘শুনেছিলাম ছেলেটি বেশি ভালো নয়। বেশ কয়টি বিয়ে করেছে। এটা অন্যায়। তার কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’ মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’