১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ও হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়নের সাহেবাবাদ গ্রামের শহীদ ডা. আবুল কাশেম।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, শহীদ ডা. আবুল কাশেম ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার টানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি পেশায় ডাক্তার হওয়ার কারণে সম্মুখ যুদ্ধের পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ক্যাম্প চীপ অধ্যাপক আব্দুর রৌফ এবং পলিটিক্যাল ইন্সট্রাক্টর অধ্যাপক ইউনুস এর নেতৃত্বে ভারতের বকশনগর মুক্তিযোদ্ধা হোডিং ক্যাম্পে (ইউথ ক্যাম্প) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিয়োজিত হোন।
পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত ক্যাম্পে দায়িত্বরত অবস্থায় মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে অসুস্থ মাকে দেখতে বাড়িতে আসেন। এসময় আশপাশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সরাসরি দেখা করে পরামর্শমূলক বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। একইদিন বিকেলে বাড়ির পাশের বাজারে সহকর্মী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেখা করতে আসলে কতিপয় রাজাকার পাকবাহিনীকে খবর দেয়, খবর পেয়ে পাকবাহিনীর সদস্যরা এসে সমগ্র বাজার ঘেরাও করে ডা. আবুল কাশেমসহ আরও ১৪-১৫ জন সাধারণ মানুষকে আটক করে টেনেহেছড়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এসময় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা ডা. আবুল কাশেমকে বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করে।
এসময় তিনি বন্দুকের বাটের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এসময় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তাকে পায়ের বুটজুতো দিয়ে আঘাত করতে থাকে, একসময় বন্দুক দিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করে পাক-হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে জীবন বিলিয়ে দেয়া শহীদ ডা. আবুল কাশেম মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাঁর নাম নেই। অথচ তৎকালীন তাঁর সাথে মুক্তিযুদ্ধ করা জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি সেই সময়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডা. আবুল কাশেম। তাঁর স্ত্রীও গত হয়েছেন। তাঁর সন্তানেরা পিতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
এদিকে শহীদ ডা. আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ খোরশেদ আলম গতকাল ১২ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে ব্রাহ্মণপাড়ায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ” আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও আমার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নেই। এ নিয়ে আমি দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে বহুবার চেষ্টা করেও কোনো ফল পাইনি। আমার বাবার সাথে মুক্তিযুদ্ধ করা জীবিত অনেক মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন এবিষয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। “
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার ইদ্রিস মিয়া মাষ্টার, সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম পুলিশ, আবদুল কাদের, ফজলুল হক পেরা মিয়া, ফুল মিয়া, আবুল হাসেম, ফজলুর রহমান, নওসের আলম,মহসিন মিয়া,আবদুল মতিন ভূইয়া, আবু বকর ছিদ্দিক, ফজলুল হকসহ অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা একবাক্যে শহীদ ডা. আবুল কাশেমকে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।