ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে জীবিত বাচ্চাকে মৃত দেখানোয় গর্ভপাত ঘটনার সময় নবজাতকের একটি হাত কেটে ফেলতে হচ্ছে। এ ঘটনায় নবজাতকের দরিদ্র পিতা পড়েছেন বিপাকে। দোষীদের শাস্তিও দাবী করেছেন তিনি। ভুক্তভোগী এই দরিদ্র পিতা মিঠাপুকুরের চিথলী রামপুরা গ্রামের বাসিন্দা আইনুল হক জানান, গত ১০ মার্চ সন্ধ্যা রাতে তার ৮মাসের গর্ভবতী স্ত্রী র সমস্যা দেখা দিলে তিনি মিঠাপুকুর থানার সামনে অবস্থিত আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান পরীক্ষা করানোর জন্য।
সেখানে তার স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। আলট্রাসনোগ্রামকারী ডাক্তার তার স্ত্রীর বাচ্চা পেটেই মারা গেছে বলে জানান এবং আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, থানার পুর্বপাশে, মিঠাপুকুর, রংপুর এর প্যাডে রিপোর্ট দেন এবং প্রসূতির জীবন রক্ষায় দ্রুত গর্ভপাত ঘটানোর পরামর্শ দেন। এসময় সেখানে সারবক্ষনিক অবস্থান করা পুতুল নামের এক মহিলা দালাল মিঠাপুকুরে স্থানীয় ধাত্রীর সহায়তায় গর্ভপাত করানোর জন্য বার বার পীড়াপিড়ি করলেও আইনুল হক দম্পতি তার কথা না শুনে রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান এবং ভর্তি করান।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিঠাপুকুরের আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট দেখে মৃত বাচ্চা বের করার জন্য ব্যবস্থা নেন এবং বাচ্চাটিকে বের করার চেষ্টা করেন। এসময় বাচ্চাটির নড়াচড়া টের পেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জীবিত ফুটফুটে এক মেয়ে বাচ্চা প্রসব করান। এসময় উপস্থিত চিকিৎসকগণের মধ্যে উল্লাস করতেও দেখা গেছে।
পরবর্তীতে বাচ্চাটিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান মৃত বাচ্চা ভেবে তা বের করার চেষ্টাকালে বাচ্চার ডান হাত মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শিশুটির ঐ হাত কেটে ফেলতে হবে। এঘটনায় আইনুল হক দম্পতির মধ্যে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। অপারেশনের ব্যয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন তারা। এ ব্যাপারে শিশুটির পিতা আইনুল হক অভিযোগ করে বলেন, আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টের কারনে আমার এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমি এর বিচার চাই। এ ব্যাপারে ডা. আহসান কবীর রনি বলেন, ঐসময় যে অবস্থায় পেয়েছি সেই রিপোর্ট দিয়েছি। এমন ভুল রিপোর্টের কারণ জানতে চাইলে নানা কারনের মধ্যে কমদামি মেশিনের কথাও বলেন তিনি।
আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দায়িত্বরত মাসুদ, তারেক এবং পুতুল-দের সাথে কথা বললে তারা জানান মালিক পক্ষের কেউ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত মাসুদ, তারেক এবং পুতুল-গনই আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি চালায়। পরে, মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেবুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার নিকট কোন অভিযোগ আসেনি। কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র আছে কিনা জানাতে চাইলে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির কোন লাইসেন্স কিংবা আবেদনও নেই। কোন অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, এর আগেও এই আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে কিন্তু বিষয়গুলো দেখার কেউ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানান সচেতন মহল।