মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস শাহাবুদ্দিন শেখ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী রাকিব (২৬) কে আটক করেছে র্যাব-১১। ০৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার শালবনে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামী মো. রাকিবথকে গ্রেফতার করা হয়।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, গত ২০২০ সালের ২৭ মে তারিখে মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল ইউনিয়নের উত্তর কুড়মিরা নামক এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ীর জঙ্গলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অর্ধ গলিত লাশ পাওয়া যায়। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মো. আবুল শেখ নামক এক ব্যক্তি লাশটি ছেলে শাহাবুদ্দিন শেখ এর লাশ বলে সনাক্ত করে। উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরূদ্ধে নিহতের বাবা মো. আবুল শেখ বাদী হয়ে টংগিবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৪(০৫)২০ ইং। প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গত ২৭ ডিসেম্বর ২০ তারিখে র্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সহযোগী ও অন্যতম আসামী মো. ইলিয়াস শেখ (৩২) কে সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আটক আসামী কর্তৃক ১৬৪ ধারায় প্রদেয় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী উক্ত হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মো. রাকিব (২৬) ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল। পরবর্তীতে ছায়া তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার দীর্ঘ ০১ বছর ০৪ মাস পর তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব-১১।
অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ঘটনার বিবরণ, রাকিবের মামা ইলিয়াস শেখ ব্যবসার জন্য কোন একটি এনজিও থেকে ২৫ হাজার টাকা লোন নেয় এবং লোভে পড়ে জুয়া খেলে উক্ত টাকা হারায়। অতঃপর রাকিব ও ইলিয়াস উক্ত লোন পরিশোধ করার জন্য ইজিবাইক ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৭ মে সকাল আনুমানিক ৮ টায় তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তালের শাস ক্রয় করার কথা বলে একটি ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ভাড়া করে। অতঃপর রাকিব ও ইলিয়াস পরস্পর যোগসাজশে ছিনতাই ও হত্যা করার উদ্দেশ্যে ইজিবাইক চালক শাহাবুদ্দিন শেখথকে কৌশলে ঘটনাস্থলে জনৈক হাজী হাসেম হালদার এর পরিত্যক্ত বাড়ীর জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে রাকিব ও তার সহাযোগী ইলিয়াস শেখ গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে দুই দিকে থেকে দুইজনে টেনে শ্বাসরুদ্ধ করে ইজিবাইক চালক শাহাবুদ্দিন শেখথকে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে তালের শাস কাটার ধারালো দা দিয়ে গলা কেঁটে হত্যা নিশ্চিত করে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মোঃ ইলিয়াস শেখথকে গ্রেফতার করার পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র্যাব-১১ উক্ত হত্যায় ব্যবহৃত দা, ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও ইজিবাইক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। হত্যাকান্ডের পর হত্যাকারী রাকিব গ্রেফতার এড়ানোর জন্য গাজীপুরে আত্মগোপন করে। এই সময়ে সে ইজিবাইক চালক, রাজমিস্ত্রি, ট্রাক হেলপার সহ বিভিন্ন ধরনের পেশা বদল করে ও গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি, এনায়েতপুর, কাপাসিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পরিবর্তন করে। আসামী ১৪ জুলাই ২০২১ তারিখে আরিফা আক্তার (১৮) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং সর্বশেষ সে স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার সূর্যনারায়ণপুরে শালবনের দুর্গম এলাকায় একটি ঘরে বসবাস করে আসছিলো।
প্রাসঙ্গিক, গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।