যুবতীকে বিয়ের প্রলোভনে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে গিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন। শেষে অন্যত্র বিয়ে করে ফেলেন প্রতারক প্রেমিক যুবক। তাই প্রলোভনে ধর্ষনের অভিযোগ এনে থানায় লিখিত দিয়েছেন ওই যুবতী। পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় এনে সন্ধ্যায় বসে সালিশে। ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার রফাদফায় ভূক্তভোগি পেল ৮০ হাজার টাকা। বাকী ৬০ হাজার সালিশ খরচ। শনিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। এমন স্পর্শকাতর বিষয় থানায় সালিশ যোগ্য কিনা এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন ওঠেছে।
অভিযুক্ত শাহিন (২৫) উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউসুফনগর গ্রামের নূরু মিয়ার ছেলে। ভূক্তভোগি যুবতী (১৯) কুমিল্লা জেলা সদরের ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা। থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শাহিন প্রবাসে থাকাকালেই মুঠোফোনে সখ্যতা গড়ে ওঠে ওই যুবতীর সাথে। গত ১৭ আগষ্ট শাহিন বিদেশ থেকে দেশে আসেন। আগামী এক মাসের মধ্যে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই যুবতীকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে রাত্রিযাপন করেন এবং উভয়ের সম্মতিতেই শারীরিক সম্পর্ক হয়।
পরে অনেকটা গোপনীয় বজায় রেখে গত মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শাহিন অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে। এ খবর যুবতীর কানে গেলে সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। পরে পরিবার ও স্বজণদের সহযোগিতায় সে এ পথ থেকে সরে আসেন। তবে তার প্রতি অন্যায় করার বিচার পাওয়ার লক্ষে শনিবার সকালে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষনের অভিযোগ এনে মুরাদনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত শাহিনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারের ৫ ঘন্টা পরেই গনেশ পাল্টে গেল। থানায় বসালেন সালিশ। ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার রফাদফায় ভূক্তভোগির অন্যত্র বিবাহ বাবদ ৮০ হাজার টাকা। বাকী ৬০ হাজার টাকা সালিশ খরচ।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাহিন হাসিমুখে বাড়ি গেলেও ভূক্তভোগি যুবতী গেলেন চাপা ক্ষোভ নিয়ে। অভিযুক্ত শাহিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার বোন শাহিনা আক্তারের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারীকে যে কোন কারণে আমার ভাই বিয়ে করে নাই। ফলে সে থানায় অভিযোগ করেছে। ফলে শনিবার দুপুরে পুলিশ আমার ভাইকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। থানায় বৈঠকে প্রথমে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরো ৩০ হাজার টাকা নেয় বড় স্যার। টাকা নেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ওই নারীকে বিদায় করতে হবে, বাকী ৬০ হাজার টাকা থানার খরচ।’
ইউসুফনগর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ মাস্টার মুঠোফোনে বলেন, আমি থানার সালিশে উপস্থিত ছিলাম, তবে বিচার আমি করিনি। দু’পক্ষের উপস্থিতিতে থানায় বসে সালিশ শেষে এক ঘন্টার মধ্যে মেয়েকে ৮০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকী আর কিছু জানিনা।mভূক্তভোগি অভিযোগকারী মালেকা আক্তার (১৯) মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর থানায় আমাকে নিয়ে সালিশ বসে। আমি ৮০ হাজার টাকা পেয়েছি। এর বেশী কিছু বলতে পারব না।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই নূর-আজম বলেন, ওই যুবতীর অভিযোগের ভিত্তিতে শাহিনকে থানায় নিয়ে আসি। দু’পক্ষের অনুমতি ক্রমেই ওসি স্যারের নির্দেশে সালিশ করা হয়। আর সালিশে মেয়েকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান সালিশের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার অনুমতি নিয়েই এএসআই নূর-আজম এই সালিশটি করেছে। আমার জানামতে মেয়েটিকে বিবাহ দেয়ার জন্য ওই ছেলের পরিবারের কাছ থেকে এই টাকা নেয়া হয়েছে। আমি কুমিল্লায় আছি, রাতে এসে বিস্তারিত জেনে বলতে পারব।
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ এডভোকেট সাবেক এপিপি সৈয়দ তানভীর আহমেদ ফয়সালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধর্ষনের অভিযোগ থানায় কেন অন্য কোথাও বসেও আপস মিমাংসা করা যাবে না। এ ঘটনা মিমাংসা করলে আইন অবমাননার শামিল। কেননা এ অভিযোগে কেউ দোষী সাবস্থ্য হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় তার মৃত্যুদন্ড হতে পারে।