নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি থেকে রোগীরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টা ঘুরেও হেপাটাইটিস-বি এর ভ্যাকসিন দিকে পারেননি শারমিন নামে এক নারী। কর্তব্যরত নার্সরা তাকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন বারবার।
আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া একাধিক রোগী জানান,চিকিৎসা নিয়ে গিয়ে তাদের নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়।সময়মত হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না।সকাল থেকে রোগীরা হাসপাতাল এলাকায় ভীড় করেন।গত সোমবার শারমিন নামে এক নারী বাইরে থেকে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন কিনে হাসপাতালে যান দেওয়ার জন্য।
তিনি কাউকে না পেয়ে হাসপাতাল চত্বরে তত্বাবধায়কের কক্ষে যান।তত্বাবধায়ক ডা. আবু সাঈদ মোঃ মাহবুবুর রহমান ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সের কাছে পাঠিয়ে দেন তাকে।সেখানে গিয়ে দেখা যায় রেখা সাহা ও সাজেদা নামে দুইজন নার্স বসে গল্প করছেন।তাদেরকে ইঞ্জেকশান দেওয়ার ব্যাপারে বললে তারা এই ইঞ্জেকশান এর আগে দেন নি বলে জানান।
পরে এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. অভিজিৎ লোহ এর সাথে কথা বললে তিনি ইঞ্জেকশান দেওয়ার নিয়ম বলে দেন।তার পরও কর্মরত নার্সরা ইঞ্জেকশান না দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেন।তাকে ফিরে যেতে হয় ইঞ্জেকশান না দিয়েই।একই দিন সকালে জেলা শহরের মঈনপুর এলাকার খায়রুল রোগী নিয়ে সদর হাসপাতালে যান।
তাকেও অনেকটা সময় ঘুরতে হয় ডাক্তার না পেয়ে।অন্যদিকে সদর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের অলি উল্লাহ গত ক’দিন ধরে বুক ও পিটের বেদনায় অস্থির হয়ে পড়েন।রোববার দুপুরে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যান ডাক্তার দেখানোর জন্য।সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ১০৭ নাম্বার কক্ষে।কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ইসিজি করে যাওয়ার কথা বলেন।
পরে অলি উল্লাহ হাসপাতালেই ইসিজি করে দেখেন ডাক্তার চলে গেছেন।তাকে বেদনা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়।হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী অলি উল্লাহ বলেন,ডাক্তার আমাকে ইসিজি করানোর কথা বলায় ইসিজি করিয়েছি।কিন্তু আমার টাকাটই জলে গেল ডাক্তার চিকিৎসা না দিয়েই চলে গেল।
এই যদি হয় সরকারি হাসপাতালের অবস্থায় আমরা কোথায় যাব চিকিৎসা নিতে? আমরা স্থানীয় হওয়ায় যেতে পারব।জেলা সদরের বাইরে থেকে আসা রোগীদের অবস্থাটা কেউ চিন্তা করে না।নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৮টা থেকে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত ডাক্তার,নার্স কর্মচারীদের কাজ করার কথা।
গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে,জরুরী বিভাগে একজন ডাক্তার এবং তত্বাবধায়কের কক্ষে তত্বাবধায়ক ও দুইজন কর্মচারী বসে আছেন।তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের জনৈক কর্মচারী বলেন,স্যারের (তত্বাবধায়ক) কথা কেউ বেশি একটা শুনে না।যে যার খেয়াল খুশিমত আসা যাওয়া করছে।
নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আবু সাঈদ মোঃ মাহবুবুর রহমান হেপাটাইটিস-বি ইঞ্জেকশান দেওয়ার ব্যাপারে বলেন,নার্সদের কাছে ইঞ্জেকশান দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলাম।ওরা হয়ত ইঞ্জেকশান দেওয়ার বিষয়টি জানে না।ওই দুই নার্সের নাম পরিচয় আমি জানি না।নার্স,সুপারভাইজার বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে নেত্রকোণার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন,আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে।রোগীদের সেবার ক্ষেত্রে হাসপাতালের তত্বাবধায়কের সাথে সমন্বয় করা হবে।নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান বলেন,আধুনিক সদর হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।ইতিমধ্যেই আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।