আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়গড়িয়ে পড়ে পানি। একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে—–। গ্রাম-বাংলার অজোপাড়া গায়ে এখনও অনেক আসমানীরা শত কষ্টে নিভৃতে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে একজন অমেলা বিশ্বাস। বয়স ৬২ বছর হবে। তাঁর বৃদ্ধ স্বামী নারায়ণ বিশ্বাস।
বয়স ৭০ ছুই ছুই।খুলনা জেলার পাইকগাছা সদর থেকে ১৪/১৫ কিলোমিটার দূরে কপিলমুনি ইউপির মামুদকাটি গ্রামটি। পাশদিয়ে বহে চলেছে কপোতাক্ষ নদ। কোল ঘেঁষে এ পল্লীতে শতাধিক জেলে পরিবারের বসবাস। প্রায় ৫শ বছর ধরে বংশ পরশপরাই এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে৷ ঝড়ঝঞ্চাট, জলোচ্ছ্বাস সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে নদের পাড় আঁকড়ে বাস করছে এ পরিবার গুলো। শুধু ভিটার সামান্য জায়গা ছাড়া কোন আবাদি জমি নেই এখানকার জেলেদের। এদের প্রধান উপজীব্য মাছ ধরা।
এ গ্রামের বৃদ্ধ নারায়ণ-অমেলা দম্পতির মাত্র ১০ শতকের ভিটা এখানে। একমাত্র ছেলে অন্যত্র বসবাস করলেও বৃদ্ধ পিতা মাতার খোঁজ নেয় না সে। বয়সের ভারে ন্যুজ নারায়ণ বিশ্বাস এখন নদী বা সমুদ্রে মাছ ধরতে পারেনা তাই নিকটবর্তী মৎস্য ঘের থেকে দু-এক কেজি মাছ কিনে এনে গ্রামের হাটে বিক্রি করে। আর বৃদ্ধা স্ত্রী অমেলা তাদের জীর্ণ কুঠিরের বারান্দায় বসে জাল বুনেন। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই কষ্টে দিন কাটে তাদের। মাঝে মধ্যে পেটে দানা পানি না পড়লেও ক্ষোভ নেই তাদের। তাদের দুঃখ নিজেদের কুঁড়ে ঘরে বসবাস করতে পারছেন না। রাতে একটু স্বস্থিতে ঘুমাতেও পারছেন না তারা।
পাশের প্রভাবশালী অনিল বিশ্বাস লোভের বশবর্তী হয়ে অসহায়ত্বের সুযোগে তাদের ভিটার সিংহভাগ জমি জবর দখল করে রাতারাতি ঘর বানিয়েছেন। বাকি এক চিলতে জায়গায় ভাঙ্গা ছোট্ট ওই কুঁড়ে ঘরের বারান্দার এক কোণে অতি কষ্টে নাওয়া খাওয়াসহ রাত যাপন করতে হয় তাদের। সেটাও গ্রাস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে অনিল বিশ্বাস। নানা ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে তাদেরকে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঘুনেধরা কয়েকটি বাঁশের খুঁটির উপরে তাবু দেওয়া ঘরটি দক্ষিনমুখি একেবারে হেলে পড়েছে। যে কোন দমকা বা ঝড়ো হাওয়ায় ঘরটি মাটিতে মিশে যেতে পারে। বৃদ্ধ নারায়ণ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী অমেলা বিশ্বাস কান্না জড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘরটি সংস্কার করতে দিচ্ছেনা অনিল বিশ্বাস। এ নিয়ে অনেকবার তাদের হাতে আমরা শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তারা আরও জানান, মোকদ্দমায় উপজেলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিলেও সে রায় তোয়াক্কা করছেন না অনিল বিশ্বাস।
সে কারণেই এই ভাঙ্গাচুরা ঘরের স্যাঁৎসেতে বারান্দায় ইটের উপরে কয়েকটি তকতা দিয়ে তাদের থাকতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। অসহায় অনীলদের একটাই দাবি, খাদ্য চাই না, বস্ত্র চাই না দখলে করে নেয়া তাদের শেষ সম্বল এই পৈত্রিক ভিটের জায়গাটি ফিরে পেতে চাই। ঘরটি সংস্কার করে যেনো শেষ বয়সে মাথা গুঁজতে পারি। চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে বসবাস করা এই বৃদ্ধ বৃদ্ধার বসতঘরটি আশু সংস্কার করতে ও দখল হয়ে যাওয়া ভিটের পুরো জায়গাটি উদ্ধারের জন্য স্হানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক সহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসি।