ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একটি প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক নিজেই একজন চিকিৎসাধীন প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করার পরে ওই প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে।একবছর আগে একই ধরনের অভিযোগে ওই হাসপাতাল মালিককে ৬ মাসের সাজা দেয়ার পরে আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটলো।আলোচিত ওই হাসপাতালের নাম পদ্মা হাসপাতাল এন্ড ডায়গনোস্টিক সেন্টার।মামুনুর রশীদ (৩৬) নামে এক ব্যক্তি সম্প্রতি ভাঙ্গা পৌর সদরে উপজেলা হাসপাতালের পাশে সেটি চালু করেছেন।
মাত্র একবছর আগে এই মামুনুর রশীদ ভুয়া ডাক্তার সেজে অপারেশন করার অপরাধে ছয় মাসের জেল খেটে বেরিয়ে এসে নতুন করে এই হাসপাতালটি চালু করেন।এদিকে,এবার একইভাবে ডাক্তার সেজে অপারেশন করার পর রোগীর মৃত্যু হলে এর দায় চাপানো হচ্ছে ফরিদপুরের একজন গাইনিকোলজিস্টের ঘাড়ে।তবে সংশ্লিষ্ট ওই গাইনোক্লোজিস্ট জানিয়েছেন,সেদিন তিনি ওই প্রাইভেট হাসপাতালেই যাননি।
পদ্মা প্রাইভেট নামের ওই হাসপাতালের সরবরাকৃত তথ্য সূত্রে জানা যায়,গত সোমবার (২৩ আগস্ট) বিকেল পাঁচটা দশ মিনিটে উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের মোফাজ্জেল দফাদারের স্ত্রী সন্তান সম্ভবা তাসলিমা বেগম (২০) পদ্মা হাসপাতাল এন্ড ডায়গনোস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তামান্না আশরাফের দ্বায়িত্বে ভর্তি হন।
এর এক ঘন্টা পরে তাকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য সেখানকার ওটিতে নেয়া হয়।এরপর তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেও অপারেশনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়।সন্ধা সাতটার দিকে তাকে ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করার পর রাত তিনটার দিকে তিনি মারা যান।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,কোন প্রশিক্ষিত চিকিৎসক নন বরং ওই প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক নিজেই ওই প্রসূতির অপারেশন করার পর এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।২৫ আগস্ট বুধবার এব্যাপারে খোঁজ নিতে সরেজমিনে যেয়ে প্রাপ্ত ডকুমেন্টস যাচাই করে দেখা যায়,পদ্মা নামের ওই অননুমোদিত হাসপাতালের ডকুমেন্টসে তাসলিমার সিজার অপারেশনকারী সার্জন হিসেবে ডা. ইয়াসমিন আকতারের নাম রয়েছে।
বিষয়টি জানতে ডা. ইয়াসমিন আকতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাসলিমা নামে ওই প্রসূতিকে অপারেশনের তথ্য সঠিক নয় জানিয়ে বলেন,সেদিন তিনি ফরিদপুরের শিশু হাসপাতালে কর্মস্থলে ছিলেন।ওই অপারেশন তিনি করেননি।এব্যাপারে জানতে উক্ত মামুনুর রশীদের মোবাইলে বারবার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে,২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল আমীনের নেতৃত্বে ডাক্তার না হয়েও একজন অ্যাপেন্ডিক্স রোগীর অপারেশনের অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালায় র্যাব।সেসময়ে মামুনকে আটক করে ছয় মাসের জেল দেয়া হয় এবং পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের ওই অননুমোদিত হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে পুরনো সেই প্রতিষ্ঠানেরই একটু দুরে নতুন করে আবারও সেই হাসপাতালটি চালু করে সে।
এব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ মোহসিন উদ্দিন ফকির বলেন,পদ্মা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবারে এমন একটি অভিযোগের ব্যাপারে আমি মৌখিকভাবে শুনেছি।তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি এখনো।প্রাইভেট ওই হাসপাতালটি অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন,তারা ২০২০ সালে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে।