বরখাস্ত হলেন সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলাধীন বিবিয়ানা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশ তালুকদার। সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলা ৯নং কুলঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক মহিলা মেম্বারের দায়ের করা পর্ণোগ্রাফি মামলায় গত ২৪ জানুয়ারি থেকে জেল হাজতে থাকার প্রেক্ষিতে কলেজের গভর্নিং বডি সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতি, অবৈধভাবে কলেজের ৭২টি গাছ কর্তন এবং নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগ জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জ কর্তৃক সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি মামলার বাদীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করার প্রেক্ষিতে কৌশলে নিজের মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন। এক সময় তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হলে উক্ত মহিলাকে সমাজে হেও প্রতিপন্ন করার জন্য উক্ত অশ্লীল ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। এমন কি অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ধারণকৃত উক্ত মহিলার এডিট করা আপত্তির স্থির ছবি নিজের ফেসবুকের সস্টোরিতে পোস্ট করেন। অধ্যক্ষের ভাই হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা ১নং বড় ভাকৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রঙ্গল লাল দাশ উক্ত মহিলার এবং সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীর ছবি এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন।
এর প্রেক্ষিতে উক্ত মহিলা সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করেন । উক্ত মামলা তদন্ত করার জন্য সুনামগঞ্জ এর ডিবি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার কে আদালত থেকে দায়িত্ব প্রদান করেন । দীর্ঘ তদন্তের পর ডিবি’র ওসি ইকবাল বাহার আদালতে প্রতিবেদন জমা দিলে আদালত অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশ ও তার ভাই রঙ্গলা লাল দাশ এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেওয়ার পর মেয়াদান্তে কোর্টে আত্মসমর্পণ করার জন্য ২৪ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
জেল হাজতে থাকার প্রেক্ষিতে গভর্নিং বডির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিরাই মাহমুদুর রহমান মামুন অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশকে সরকারি নীতিমালা অনুসারে বরখাস্ত করার কথা থাকলেও তা না করে বিভিন্ন ধরনের তাল বাহানা করেন । ৩১ জানুয়ারী অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করার জন্য গলিশাল গ্রামের জুয়েল মিয়া ও ফজলে রাব্বি জিবি’র সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দিরাই বরাবর আবেদন করলেও তিনি কোন ধরনের পদক্ষেপ নেননি ।
১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ব্যারিস্টার ওমর সোয়েব চৌধুরী জেলহাজতে অন্তরীণ অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশের বরখাস্ত চেয়ে বিবিয়ানা মডেল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন এর কাছে উকিল নোটিশ প্রেরণ করেন । এরই প্রেক্ষিতে গভর্নিং কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করে উক্ত কলেজের সিনিয়র শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ফয়জুন নাহার রেবা কে ভার প্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করা হলেও জিবি তার বিরুদ্ধে এতদিন কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ইতোমধ্যে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিউল্লাহ অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন , আর্থিক দুর্নীতি ও অবৈধভাবে কলেজের গাছ কর্তন নিয়ে অভিযোগের তদন্ত করে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন । অবশেষে জেলা প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) জনাব জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা নৈতিক স্খলন ও বিধি বহির্ভূতভাবে কলেজের বাহাত্তরটি গাছ কর্তন করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় । সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পত্র প্রেরণ করেন ।