সিলেটের বন্যার পর থেকে পাহাড়ি ও লাইতে দিনে বৃষ্টিতে বাড়ি ঘর তলিয়ে গেইছে, এখন পুলার কোন কাজ নাই আমরা না খাইয়ে থাকতে হয়েছে।এলাকার মেম্বর-চেয়ারম্যান কেউ আমরার খোঁজ নেই না। তার ভাষায় কথাগুলো সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের ভৃইশ্বর এলাকার নুর মিয়া এমন করে বলছিলেন।
এভাবেই সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছে পানিবন্দি মানুষের। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের অপেক্ষায় পানিবন্দি মানুষ। ত্রাণের আশায় তারা করছে। ৮০ বছরের সুমির মিয়া বলেন, এই বয়সে আমি কোনো কাজকর্ম করতে পারি না তবে আমার পুলারা মাটির কাজ করে। পানি আইসে পরে আয় রোজগার করে না,আমার তিন পোলা বসা মাটিকাটা আর নাই। পানি যেভাবে বাড়তাছে অতলা মানুষ কি খামু এই চিন্তায় মাথা ধরে না। কিতা কইতাম বাবা আছি বড় কষ্টে ! এদিকে জানাযায়,সরকারি ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও গ্রামে পানি বন্দি আশ্রয় নেয়া কিংবা পানিতে আটকে পড়া মানুষ ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ও বলছেন তারা বরাদ্দ পাচ্ছেন না। গবাদিপশু ও গোখাদ্য নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ।
অনেকে কোরবানির ঈদের জন্য লালনপালন করা গরু লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এদিকে প্রকৃতির ডাক এলেই চরম ভোগান্তিতে পড়েন ভাটি অঞ্চলের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকে পানিতেই সারছেন প্রাকৃতিক কাজ। ফলে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগবালাই ছাড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিএনজি চালক দুলাল মিয়া বলেন, ভৃইশ্বর আমার বাড়ি সিএনজি চালিয়ে সংসার চালায়। মা বাবা ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনভাবে সংসার চলে। রাস্তা পানির নিচে চলে যাওয়ায় এখন আর সিএনজি চালাতে পারি না। মানুষ ভূইশ্বর বাজার থেকে নৌকা দিয়ে অরুয়াইল চলে যায়। আমরা এখন কষ্টে আছি।
উপজেলার অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, গতকাল আমরা সরকারের তরফ থেকে যে ত্রাণ পেয়েছি তা আমরা স্কুলে পরিবার আশ্রয় নিয়েছে এবং যারা ত্রাণ পাওয়ার উপযুক্ত তাদেরকে আমরা পৌঁছে দিয়েছি,তবে এখনও সে পরিমাণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে না। প্রয়োজনে আমরা সকলে সমন্বয় করে মানুষের যাতে কষ্ট না হয়। অবস্থার অবনতি হলে পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
পাকশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার হোসেনের সাথে কথা তিনি বলেন, আমার পাকশিমুল ইউনিয়ন পুরাটাই পানিতে তলিয়ে গেছে।আমি নৌকা নিয়ে গ্রামে গ্রামে খুঁজ নিয়েছি। প্রায় সব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। অনেক গ্রামের মুসল্লীরা মসজিদে যেতে পারে না।
সেইসব এলাকায় আমি এই পর্যন্ত দশ-বারোটি বাঁশের সাঁকো করে দিয়েছি। আমার ইউনিয়নে এখনো আমি ত্রাণ পাইনি তবে আমরা মেম্বার দের মাধ্যমে যারা ত্রাণ পাওয়ার উপযুক্ত তাদের নাম আইডি কার্ড সংগ্রহ করার কাজ শেষ। তবে কাল থেকে পানিবন্দি মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হবে।
উপজেলা অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব মিয়া বলেন, অরুয়াইল ইউনিয়নের অনেক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে সরাইল- অরুয়াইল রাস্তা এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেড়েছে চলাফেরায় দুর্ভোগ। আমি অনুরোধ করবো পানিবন্দি মানুষেকে যথা সাধ্য মতে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দিতে। পানিবন্দি মানুষের যাতে কষ্ট না হয়। এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় তলিয়ে গেছে।
আমরা ইতিমধ্যেই আশ্রয়ন প্রকল্পে সহ পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের যাতে কষ্ট না হয় আমরা তৎপর রয়েছি বলে ইউএনও বলেন, আজ শাহজাদাপুর ইউনিয়নে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী আছে, পর্যায়ক্রমে এলাকার পানিবন্দি মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
উল্লেখ্য থাকে যে,কয়েকদিনের মুষলধারে বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে মেঘনাওতিতাস নদীর পানি বৃদ্ধিতে। সরাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানিতে তলিয়ে যায়। এর কারণে সরাইল- অরুয়াইল রাস্তায় পাকশিমুল এলাকার রাস্তার অংশ পানির নিচে। তবে আজ অনেকে বলেছেন যে পানি কমা শুরু করেছে।