1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
সরাইলে করোনার চেয়ে ভয়ঙ্কর এখন মাদক -ইউপি চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ । শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সরাইলে করোনার চেয়ে ভয়ঙ্কর এখন মাদক -ইউপি চেয়ারম্যান

মো. তাসলিম উদ্দিন
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২
  • ৫৮৫ বার পড়েছে

 সরাইলে মাদক এখন ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে শুধু তাই নই করোনা থেকে ভয়ানক ধারণ করেছে মাদক। এখন করোনার চেয়ে ভয়ঙ্কর মাদক এমন করে বললেন সরাইল উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় ইউপি চেয়ারম্যান। সর্বশেষ সরাইল পুলিশের অভিযানে ৭০ লিটার দেশী চোলাই মদ উদ্ধারের ঘটনায়ই বুঝা যায় মাদকের ভয়াবহতা বর্তমানে কোন পর্যায়ে। এটি এখন পর্যন্ত আটক হওয়া সর্ববৃহৎ চালান। চালানটি ধরা পড়ায় জনমনে স্বস্তি এসেছে। কিন্তু মাদক চোরাচালানিরা তো বসে থাকবে না। তাদের অপতৎপরতা চলতেই থাকবে।

এরফলে ঘটবে মাদকের বিস্তার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে একটি জাগরণ সৃষ্টি করতে না পারলে এই গুরুতর সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো পথ পাওয়া যাবে না। মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা নগদে। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার সরাইল উপজেলা জুড়ে এর মাঝে গাঁজা। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। সরাইল জুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ সিন্ডিকেট।

তাই গত ২৪ জানুয়ারি আইন-শৃঙ্খলা সভায় সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জবার তার বক্তব্যে বলেন, সরাইল সদরে ৫টি মাদকের স্পট রয়েছে,যার তথ্য আমার কাছে আছে, কারা এর পিছনে থেকে পরিচালনা করতেছে আমরা তাদেরকে ভালো করে চিনি বা জানি।বর্তমান পরিস্থিতি অনেক উদ্বেগজনক তাই মাদকের ছড়াছড়ি থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমার এলাকা শাহবাজপুর ইউনিয়নে করোনা থেকে ভয়ানক ধারণ করেছে মাদক। করোনা থেকে বাঁচতে পারলেও, মাদকের কারণে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের পথে চলেছে।

আমার এলাকায় মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষার দাবী জানিয়ে।ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা বাদল বলেন, এলাকায় করোনা থেকে মাদক এখন ভয়ঙ্কর!মাদককে তারা স্বাগত জানায়। মাদকদ্রব্য সমাজে চরম বিরূপ প্রভাব যে ফেলে তার প্রমাণ রয়েছে অসংখ্য। উপজেলার কোনো না কোনো প্রান্তে প্রায় প্রতিনিয়তই মাদকের কারণে পরিবার ও সমাজের ওপর দিয়ে বয়ে যায় দুর্ভোগের কালো ছায়া। মাদকাসক্ত ব্যক্তির হাতে মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়স্বজন খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রতিনিয়িতই।

মাদকের কারণে উপজেলার অসংখ্য পরিবার ধ্বংস হচ্ছে। আমরা যদি বছর আগের দিকে তাকাই তবে এ ধরনের ভূরি ভূরি ঘটনার প্রমাণ আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অরুয়াইলের এক যুবক নেশায় ব্রীজ থেকে পড়ে মারা যায়।এদিকে অনুসন্ধানে জানাযায়,সরাইল উপজেলার- শাহবাজপুর- শাহজাদাপুর কালিকচ্ছ- সরাইল সদর-ইউনিয়নে পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদকদ্রব্য। মরণনেশা ইয়াবায় ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো মানুষ।

এ তালিকায় রয়েছে উঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল- কলেজের ছাত্রওব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এতে করে উপজেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এলাকায় উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকের মধ্যে ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা করছে। এসব মাদক বিক্রির তালিকায় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানেরাও জড়িত। আর প্রভাবশালীদের ও বিভিন্ন কারনে প্রশাসনও রয়েছে নিরব।

এলাকায় আলোচনা রয়েছে মাদকের সাথে অনেকেই জড়িত আছে ভিন্ন ভাবে। আর নয়তো দিনে রাতে সমান তালে তারা মাদক ব্যবসা করছে অনেক ওপেন ময়দানে মাদক সেবন করছে। তাদেরতো কিছু হচ্ছে না। মাদকের ব্যবহারে ক্যাশ টাকা পাওয়া যায়। যার জন্য বিভিন্ন অজুহাতে মাদকের টাকা হাত বদল হচ্ছে।প্রতিদিন বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। বর্তমানে শাহজাদাপুর আর কালিকচ্ছের দেশী চোলাই মদ এখন বিভিন্ন উপজেলায় চালান দেওয়া হচ্ছে।

তাই এসব এলাকায় মাদকের আখড়া বলে অভিহিত করেছেন অনুষ্টিত উপজেলা আইন- শৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত বক্তারা। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেছেন,তিন-চারটি ইউনিয়নে কমপক্ষে১৫-২০টি স্পটে মাদকসেবীদের আড্ডা রয়েছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে,যারা কিছুটা বিত্তশালী তারা ফেনসিডিলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। আর ইয়াবা -গাঁজার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে নজর ও আকৃষ্ট সবার। বিজয়নগর – কসবা ও আখাউড়া উপজেলা থেকে শাহবাজপুর এবং বিশ্বরোড় থেকে সদর বাজার হয়ে কালিকচ্ছ ও নোয়াগাঁ বাজার ও অরুয়াইল পর্যন্ত ইয়াবা সেবন-পাচার ও ব্যবসা জমজমাট।

এই সব মাদক বর্ডার থেকে চান্দুরা হয়ে ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক হয়ে অত্র অঞ্চলে আসেন বলে জানান অনেকেই। শাহবাজপুর বাজার এলাকা নিরাপদ আস্তানা ভেবে মুলত ঐ স্থানে কয়েকটি সিন্ডিকেট মাদক সেবন ও পাচারের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে ইয়াবা ব্যবসার প্রান কেন্দ্র মইন-বাড়িউড়া বাজার।নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর হোসেন তিনি তার বক্তব্যে বলেন,আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন রোডকে মাদক পাচারকারীরা ব্যবহার করছে।দিন- রাতে হেঁটে বা গাড়ি করে সহজ ভাবে মাদক পৌঁছে দিয়েছে স্কুল কলেজ সহ যুবকেরদের হাতে।

এ থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।মাদকসেবীরা বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের মধ্যে যেমন- ইয়াবা, চোলাই মদ গাঁজা, ফেনসিডিল, বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন, ইয়াবা ট্যাবলেট, দেশী-বিদেশী মদ সেবন করে। শুধু এসবই নয় জুতায় লাগানোর আঠা বা ডান্ডি আঠা,পেইন্ট থিনার, গুল, আড়লের লেচ সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ে যুবসমাজ। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ঔষধ যেমন- এফ ফেটামিনস,সিডেটিড, হিপনোটিকস, ভ্যালিয়াম,ফ্রিশিয়াম, ইউনাকটিন, জায়া জিপাম, ইত্যাদি জাতীয় ঘুমের ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়।

যেগুলোর অধিক সেবনে মৃত্যু ঘটতে পারে চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার উপজেলাজুড়ে।মুঠোফোনে যোগাযেগে ঘরে বসেও পার্সেলে পাওয়া যায় যে কোন ধরনের মাদকদ্রব্য। স্থানীয় যুবক ও কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা মাদকের ছোবলে হয়ে যাচ্ছে আসক্ত। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাদকের ব্যবসা হচ্ছে তিনটি ধাপে। একটি দল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা মাদক নিয়ে আসে শহরে। তারা পৌঁছে দেয় শহরের এজেন্টদের কাছে। এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে খুচরা বিক্রেতাদের দিয়ে এসব মাদক বিক্রি করায়।

দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুদের মাদক বিক্রি,পরিবহন ও খুচরা বিক্রির কাজে ব্যবহার করছে নেপথ্যের হোতারা।তারা থেকে যাচ্ছে আইনের নাগালের বাইরে। সরাইলের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এ জন্য সক্রিয়ভাবে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হবে।সরাইল উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি আইনজীবী মো.আশরাফ উদ্দিন মন্তু বলেন, সরাইলে মাদকের সয়লাব। এ অবস্থা থেকে মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা দরকার।

তাদেরকে আইনের নজরদারি রাখতে হবে। অনেক মাদক ব্যবসায়ীরা তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে এ জন্য পুলিশকে আরো সক্রিয়ভাবে মাঠে নামতে হবে বলে তিনি বলেন। সরাইল উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি সহ- সভাপতি মো. আরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, একজন মাদক একাই ব্যবসা করে না। এদের সঙ্গে সমাজের অনেক রাঘব বোয়ালরাও জড়িত। রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অনেকের সখ্য থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই ব্যবসার পরিধি বাড়ছে।সরকারের ডোপ টেস্টের আওতায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদেরও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান সাংবাদিক সুমন।

খাটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজালাল আলম এ প্রতিনিধিকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।এ ব্যপারে সরাইল থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, মাদকের ব্যাপারে কোন প্রকার ছাড় নেই। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।ওসি বলেন, তবে মাদকমুক্ত করতে হলে রাজনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন।ওসি মো.আসলাম হোসেন, সরাইল থানা পুলিশ মাদকের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেবে না, থানা মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স বলেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD