1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
সম্প্রীতি সভার মধ্যদিয়ে ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রায় শতবর্ষের বিরোধের অবসান
বাংলাদেশ । সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সম্প্রীতি সভার মধ্যদিয়ে ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রায় শতবর্ষের বিরোধের অবসান

আতাউর রহমান:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ২৭৪ বার পড়েছে

কুমিল্লার ব্রা‏হ্মণপাড়ায় সম্প্রীতি সভার মাধ্যমে দুই দলের দীর্ঘ ৮৮ বছরের বিরোধ নিস্পত্তি হয়েছে। সম্প্রীতি সভায় বিরোধে না জড়াতে আনুষ্ঠানিক ভাবে উভয় পক্ষকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়েছে। শনিবার ( ১১ অক্টোবর) দিনব্যাপী সিদলাই শান্তি পরিষদের আয়োজনে সিদলাই আমীর হোসেন জোবেদা ডিগ্রী কলেজ মাঠে এ সম্প্রীতি সভা ও শান্তিচুক্তিনামা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দুই দলের কাছে থাকা টেট্টা, বল্লম ও লাটিসোটা জমা নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলার সিদলাই ইউনিয়নের সিদলাই গ্রামের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ছোট দল এবং বড় দলের মাঝে দীর্ঘ ৮৮ বছরের বিরোধ লেগে ছিল। ছোট খান ঘটনা ঘটলেই দলা-দলি সৃষ্টি হয়ে বড় ঘটনা ঘটে যায়। ওই বিরোধ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে। এ পর্যন্ত ১৮টি মামলা হয়েছে। ছয়শতাধিক মানুষকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখনো আড়াই শতাধিক মানুষ গ্রেপ্তারী পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এ নিয়ে উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে একটি শান্তি পরিষদ নামে একটি সংগঠন করা হয়েছে। ওই সংগঠনের সভাপতি করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে। ওই সংগঠনের উদ্যোগে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।

এ সংগঠনের উদ্যোগে আজ শনিবার কলেজ মাঠে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই পক্ষ কোন ধরনের দলাদলি বা সংঘর্ষে জড়াবে না মর্মে শপথ পাঠ করেন। এ শপথ বাক্য পাঠ করার কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের সাংসদ আবুল হাসেম খান। এ সময় দুই দলের সমর্থকদের কাছে থাকা লাঠিসোটা, টেট্টা ও বল্লম উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা করেছেন।
সম্প্রীতি অনুষ্ঠানে ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল রানা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আবুল হাসেম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান¡ মুহাম্মদ আবু জাহের, আমীর হোসেন জোবেদা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন মুহাম্মদ, থানার অপ্পেলা রাজু নাহা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, গনমাধ্যম কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বড় দলের সমর্থনকারী জাহাঙ্গীর মিয়া ও লিটন মিয়া বলেন, বিগত দিনে দলাদলি করে ভুলের মধ্যে ছিলাম। এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করার জন্য উপজেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা স্বাগত জানাচ্ছি। পাশা-পাশি আমরা ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা যেন এ ভুল না করে। আমরা প্রত্যেকে মিলে-মিশে বসবাস করব । কোন ধরনে দলাদলিতে অংশ নিব না। এতে আমরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ছোট দলের সমর্থনকারী সাবেক ইউপি সদস্য অহিদ মিয়া বলেন, দলাদলির করে মামলা হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উভয় পক্ষ দলাদলির মামলার কারনে দীর্ঘদিন গ্রাম ছাড়া থাকতে হয়েছে। দলাদলির কারনে ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা থেকে বঞ্চিত ছিল। বর্তমানে সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ যে উদ্যোগ নিয়ে সমাধান করে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করার পরিবেশ করেছেন এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতে যেন তাদের ছেলে-মেয়েরা এ ধরনে কাজে জড়িত না থেকে বেড়িয়ে এসে শান্তিপূর্ণ ভাবে সহঅবস্থান করতে পারেন সে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

সিদলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ছোট দল ও বড় দল নামে দুটি দলের মধ্যে দীর্ঘ ৮৮ বছর ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ কারনে তিনটি হত্যা হয়েছিল। লোকজন পালিয়ে বেড়াছিল। তাদের মধ্যে কোন শান্তি ছিল না। স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের উদ্যোগে শান্তি পরিষদ নামে একটি সংগঠন করা হয়েছে। ওই শান্তিচুক্তি পরিষদ দীর্ঘ দিনের বিরোধ মিটিয়েছেন।

ব্রা‏হ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, তিনটি হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে। এ পর্যন্ত ১৮টি মামলা হয়েছে। ছয়শতাধিক মানুষকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখনো আড়াই শতাধিক মানুষ গ্রেপ্তারী পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবানের জন্য শপথ নেওয়া হয়েছে। আপনারা শপথ ভঙ্গ করবেনা। যে কোন সমস্য দেখা দিলে পুলিশকে অবহিত করবেন। আইন হাতে তুলে নিবেন না।

ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, আপনারা যদি আগামী পাচঁ বছর এ ধরনের দল গঠন না করেন কিংবা কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে জড়িত না হলেই আপনাদের মধ্যে এ শান্তিচুক্তি চিরতরে প্রতিষ্ঠা হবে এবং আর কোন ধরনের সংঘর্ষ হবে না। আপনারা ছোট খাট কোন ধরনে অঘটন ঘটলে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে অবহিত কবিবেন। নিজেরা আইন হাতে তুলে নিবেন না।

ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবু জাহের বলেন, আজকে যে শান্তিচুক্তি শপথ বাক্য পাঠ করা হয়েছে তা আপনারা ধরে রাখবেন। ছোটখাট বিষয় নিয়ে দল গঠন করবে না। নিজেরাই শেষ করে ফেলবেন। না পারলে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করবেন। আমরা তা সমাধান করব।

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের সাংসদ আবুল হাসেম খান বলেন, দলাদলির কারনে ছেলে-মেয়েরা লেখাপাড়া থেকে বঞ্চিত। তারা টেট্টা, বল্লম ও লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। সন্তানের ভবিষ্যত লেখাপড়া ও ভাল রাখার চিন্তা করতে হবে। এ কারনে দলাদলি করে দল গঠন করা যাবে না। আপনারা শান্তিচুক্তি করেছেন। দলগঠন করবেন না এবং দলের অংশ নিবেন না। গ্রামকে সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে নিতে শপথ নিয়েছে, এ শপথ যেন ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD