1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
র‍্যাবের গুলিতে ১পা হারানো ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন দাম্পত্য জীবনে
বাংলাদেশ । মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ ।। ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
ব্রেকিং নিউজ
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ইবি ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল সন্ধ্যা নামলেই এলইডির তিব্র আলো ঘটছে দুর্ঘটনা : চোখের মারাত্মক ক্ষতি শিলাবৃষ্টিতে দোয়ারাবাজারে সহস্রাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত!! ব্রিজ পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেই; জনগণের ভোগান্তি চরমে! ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ট দৌলতপুরের মানুষ! রেলক্রসিংয়ে গেটকিপার ঘুমিয়ে, অল্পের জন্য রক্ষা পেল দুটি ট্রাকসহ পথচারী চুরি হলো সেই শহীদ ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভে দোয়ারাবাজারে কলেজছাত্রী তমা হত্যার খুনি লিটনের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল ডাঃ তাহসীন বাহার সুচনার বিজয়ে কুমিল্লার লন্ডন প্রবাসীদের ইফতার ও মিষ্টি বিতরন এক মিনিটে ৮টি ক্রিম বিস্কুট খেয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ আবেদন ।

র‍্যাবের গুলিতে ১পা হারানো ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন দাম্পত্য জীবনে

কঞ্জন কান্তি চক্রবর্তী :
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৩৪৮ বার পড়েছে
র‍্যাবের গুলিতে ১পা হারানো ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন দাম্পত্য জীবনে

র‍্যাবের গুলিতে এক পা হারানো ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের সেই লিমন হোসেন বিয়ে করেছেন।কনে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওপাড়া এলাকার রাবেয়া বসরী।যশোরে কনে বাড়িতেই আজ শুক্রবার দুপুরে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়।এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে লিমনের গ্রামের বাড়িতে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয়।এতে লিমনের পরিবার, সহপাঠী ও আত্মীয়-স্বজনরা অংশ নেন।

লিমন হোসেন জানান,পরিবারের ইচ্ছায় বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে এবার জীবনে আরেকধাপ এগিয়ে যেতে চান তিনি।লিমনের স্ত্রী রাবেয়া বসরী জানান,লিমন নিজের সাথে যুদ্ধ করে ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন,দাম্পত্য জীবনেও তিনি দায়িত্বশীল হবেন।এটা বুঝেই আমি এ বিয়েতে রাজি হয়েছি।

১০ বছর আগে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ র‍্যাবের গুলিতে পা হারানন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন।সে বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তার।১৭ বছরের সেই কিশোর এখন ২৭ বছরের যুবক।ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়,প্রশ্নবিদ্ধ হয় র‍্যাবের অভিযান।ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের পা হারানো সেই কিশোর এখন সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের সহকারী প্রভাষক।বিয়ে করে এখন তিনি সংসার জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন।

বাবা মায়ের সাথে লিমন

বাবা মায়ের সাথে লিমন

১০ বছর আগে যা ঘটেছিল..
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বাড়ির কাছের মাঠে গরু আনতে গিয়ে হতদরিদ্র কলেজছাত্র লিমন হোসেন র‍্যাবের গুলিতে আহত হন।গুলিবিদ্ধ লিমনকে সন্ত্রাসী হিসেবে র‍্যাবের ডিএডি লুৎফর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন।তৎকালীন কলেজ ছাত্র লিমন হোসেন ও স্থানীয় সন্ত্রাসী মোরসেদ জমাদ্দার এবং তার সহযোগীসহ আট জনকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

এর একটি অস্ত্র আইনে এবং অপরটি সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগে।গুরুতর আহত লিমনকে ভর্তি করা হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে।যথাযথ চিকিৎসার অভাবে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ লিমনের বাম পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলা হয়।চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় লিমন হোসেন।

এ ঘটনায় লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল র‍্যাব-৮ এর ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ছেলে লিমনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুসরাত জাহানের আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন।আদালতের নির্দেশের ১৬ দিন পর ২৬ এপ্রিল ২০১১ রাজাপুর থানায় র‍্যাবের ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ছয়জনের নামে মামলাটি লিপিবদ্ধ করা হয়।

অন্য আসামীরা হলেন কর্পোরাল মাজহারুল ইসলাম,কনস্টেবল আবদুল আজিজ,নায়েক মুক্তাদির হোসেন,সৈনিক শ্রী প্রহল্লাদ চন্দ্র এবং সৈনিক কার্তিক কুমার বিশ্বাস।পুলিশ লিমন হত্যাচেষ্টা মামলায় ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট র‍্যাব সদস্যদের নির্দোষ উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।লিমনের মা হেনোয়রা বেগম পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট নারাজি দাখিল করেন।

দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোঃ শাহীদুল ইসলাম।এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন লিমনের মা।২০১৬ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচজন জেলা ও দায়রা জজ ২৬ বার রিভিশনের শুনানী গ্রহণ করেন এবং কোনো আদেশ না দিয়ে অধিকতর শুনানির জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করেন।

২০১৬ সালের ২২ আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৬ বার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।২০১৮ সালের ১ এপ্রিল ৪২তম শুনানি শেষে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান র‍্যাবের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেন।রিভিশন মঞ্জুর হওয়ায় লিমন হত্যাচেষ্টায় র‍্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়।

মামলার নথি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোঃ সেলিম হাসান লিমন হত্যাচেষ্টা মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।আদেশে উল্লেখ করা হয় কমপক্ষে সহকারী পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা দিয়ে মামলার তদন্ত করাতে হবে।এ আদেশ নিয়ে নানা জটিলতার পর ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআইর (হেডকোয়ার্টার) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম।

গত ফেব্রয়ারি মাসে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং কয়েকজন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলেন।অপরদিকে,লিমনসহ আটজনের বিরুদ্ধে র‍্যাব অস্ত্র আইনে এবং সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগে যে দুটি মামলা দায়ের করেছিল ওই মামলা থেকে সরকার লিমনের নাম প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়।২০১৩ সালের ১০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ মিজানুর রহমান ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক এবং পাবলিক প্রসিকিউটরকে লিমনের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহের জন্য আদেশ জারি করেন।

এ আদেশ ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ঝালকাঠি জেলা জজ ও মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে প্রেরণ করা হয়।আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল মান্নান রসুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারক কিরণ শঙ্কর হালদার ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই অস্ত্র মামলার দায় থেকে লিমন হোসেনকে অব্যাহতির আদেশ দেন।ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ আবু শামীম আজাদ সরকারের একই সিদ্ধান্তে সরকারি কাজে বাধা দানের মামলা থেকে লিমনকে অব্যহতি দেন ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর।

অপরদিকে যে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোরসেদ জমাদ্দারকে ধরতে গিয়ে লিমনকে গুলি করেছিল র‍্যাব সেই মোরসেদ জমাদ্দারসহ অপর সাত আসামী র‍্যাবের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ৪ আদালত থেকে ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এবং সরকারি কাজে বাধা দানের মামলায় মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত থেকে ২৯ মার্চ বেকসুর খালাস পান।রিভিশনের শুনানিতে লিমনের মায়ের আইনজীবীরা এ বিষয়টি আদালতে তুলে ধরেন।

এ দিকে গুলিবিদ্ধ লিমনের একটি পা কেটে ফেলার পরে ২০১১ সালের ৯ মে হাইকোর্ট লিমনের জামিন মঞ্জুর করে।জামিনে মুক্ত হওয়ার পর লিমনের উন্নত চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষ লিমনকে আর্থিক সাহায়তা করেন।ঢাকার সাভারের সিডিডি নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লিমনকে একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেয়।এই নকল পায়ে ভর করে লেখা পড়া করে ২০১৩ সালে লিমন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

একই বছর লিমন ডা. জাফরউল্রাহর সহযোগিতায় সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে এলএল.বি অনার্সে ভর্তি হন।২০১৭ সালের ডিসেম্বরে লিমন এলএল.বি অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন।কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রি নিয়ে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষা সহকারী পদে যোগ দেন।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সহকারী প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি হয় লিমনের।পা হারানোর সেই দুর্বিষহ দিন পেরিয়ে ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যুদ্ধে গর্বিত লিমনের বাবা-মা।ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তাঁরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD