হাটে,বাজারে,ড্রেনে,পুকুরে,স্কুল কলেজের রাস্তার পাশে,সড়ক আর মহাসড়কে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা।হাসপাতাল,ক্লিনিকের সামনেও দেখা যায় ময়লার স্তুপ।কে বা কাহারা ফেলে তা কারো জানা নেই।দিনে রাতে নির্জন দুপুরে কারা যেন এ ময়লা ফেলে রেখে যায়।পঁচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।মশা মাছির উপদ্রব বাড়ছে।পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।রোগ বালাই ছড়াচ্ছে।এ ময়লা নিয়ে রূপগঞ্জবাসী পড়েছে মহাবিপাকে।
এ যেন নিজ দেশে পরবাসের মত,দেখার কেউ নেই।ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপের কারণে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত থাকলেও উপজেলার হাট-বাজারগুলোর ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনার দিকে কারও নজর নেই।মুড়াপাড়া বাজার,গাউছিয়া (ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের) খাল,সরকারপাড়া ও সাহাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের পানি নিস্কাশনের খালে এবং কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ময়লার ভাগাড়।
এতে আবর্জনা ও পলিথিনে ভরাট হয়ে গেছে খাল ও কৃষি জমি। অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।এ অবস্থায় ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।সংশ্নিষ্টদের দাবি,বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য সরকারি নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।মহাসড়কতো নয়,যেনো ময়লার ভাগাড়।ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশে পথে পথে ময়লার ভাগাড় জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
মহাসড়কের অনন্ত ১১ টি স্পটে এসব ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষিত করা হচ্ছে। মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহনের যাত্রী কিংবা পথচারীদের দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়।রূপগঞ্জ উপজেলার বিশ্বরোড,রূপসী,বরপা,বরাব,ভুলতা,গাজী বাইপাস সড়কের পশ্চিম গাও,দক্ষিণপাড়া,গোলাকান্দাইলসহ বেশকয়েকটি এলাকায় রাস্তার পাশে ময়লা ফেলার কারনে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
কয়েকদিন পর পর ময়লা পরিস্কার করে নিয়ে যাওয়া হলেও ততদিনে ময়লা আর্বজনা পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে পড়ে।জানা যায়,উপজেলার ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র গাউছিয়া মার্কেট থেকে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়।কিন্তু বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গার অভাবে বাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কৃষি জমি এবং খালে গড়ে তুলেছে ময়লার ভাগাড়।
সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরে হাঁটতে হয় পথচারীদের।মুড়াপাড়া এবং গাউছিয়া বাজারে খালের ওপর ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলায় ভরাট হয়ে গেছে পানি নিস্কাশনের খাল।কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখলেও বাজারের এই দূরবস্থার খবর রাখছে না কেউ।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়,বিশ্বরোড,রূপসী,বরপা,বরাব,ভুলতা,দক্ষিনপাড়া,পশ্চিমগাও,গোলাকান্দাইলসহ যে স্থান গুলোতে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সেখানে রয়েছে সিএনজি স্টেশন,বাস স্টেশন।এ স্টেশন গুলোতে গাড়ী থেকে প্রতিদিন হাজার যাত্রী উঠানামা করে।উঠানামার সময় ময়লা দূর্গন্ধে যাত্রীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।ময়লা আবর্জনা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারনে ও দুর্গন্ধে পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তবে তারাবো পৌরসভার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মীরা এসব স্থান থেকে ঠিকমত ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে না বলেও পথচারীরা অভিযোগ করেন।রাস্তার পাশে ফেলার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।পরিবেশ দূষণের ফলে সাধারণ মানুষ নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি খাল রয়েছে।
কল-কারখানা,হোটেল,বাড়ি ঘরের যত ময়লা আবর্জনা পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা অথবা সাধারণ মানুষ ভ্যান গাড়িসহ বিভিন্নভাবে এনে খাল ও রাস্তার পাশে ফেলেন।পরে ময়লা গুলোর মহাসড়কের পাশে এনে রাখা হয়।তবে তারাব পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিশ্বরোড রূপসী,বরপা ও বরাব এলাকার ময়লা কয়েকদিন পর পর ময়লা ট্রাকের মাধ্যমে অন্যত্র নিয়ে গেলেও যতদিনে ময়লা নেওয়া হয় ততদিনে চারদিকে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।ময়লার দূর্গন্ধে দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে জনজীবন।
এতে পথচারীদের যেন দূর্ভোগের শেষ নেই।ময়লা আবর্জনা গুলো পঁচে গিয়ে দূর্গন্ধ্য বাতাসের সাথে মিশে তা পারিবেশ দূষন করছে এবং পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে।সেই সাথে মহাসড়কের যে স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় তার আশপাশে রোপনকৃত বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা মরে যাচ্ছে।সাধারণ মানুষে দাবি,ময়লা আবর্জনা গুলো মহাসড়কের পাশে স্টেশনের সাথে না ফেলে অন্যত্র কোন নির্জন স্থানে ফেলা হউক।
সরেজিমন ঘুরে দেখা যায়,মুড়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে রাস্তার পূর্ব পাশের জলাশয়ের ওপর রয়েছে ময়লা-আবর্জনার বিশাল ভাগাড়।দীর্ঘদিন থেকে বাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই জলাশয়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে জমির অনেকাংশ ভরাট হয়ে গেছে।লোকজন এর পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে ধরছে।গাউছিয়া বাজারের সামান্য দূরে মহাসড়কের পাশের খালেও গড়ে তোলা হয়েছে ভাগাড়।অথচ কয়েক বছর আগে সরকার এই খালটি খনন করেছে।এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
মুড়াপাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মানিক মিয়া ও গাউছিয়া মার্কেটের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়া বলেন,বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য সরকারি কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই।কোটি টাকার বেশি রাজস্ব প্রদানকারী এই বাজারে ময়লা ফেলার জন্য কোনো গাড়িও নেই।বাজারের ময়লা ব্যবস্থাপনার জন্য গাড়ি এবং আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছি উপজলা প্রশাসনের কাছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন,বাজারের ময়লা ফেলার জন্য সরকারি নির্দিষ্ট জায়গা আছে।বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির বিষয়টি দেখভাল করার কথা।এ ব্যাপারে তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী বলেন,ময়লা ফেলার নিদির্ষ্ট জায়গা থাকলেও মানুষ সেখানে ময়লা না ফেলে যত্রতত্র ময়লা ফেলে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করছে।তারপরও আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়মিত ময়লা পরিস্কার করছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নূসরাত জাহান বলেন,ময়লা ভাগাড় দূর করতে পুরো রূপগঞ্জের জন্য সুন্দর একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে।শীঘ্রই এ সমস্যাটির সমাধান করা হবে।