মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউপি এর আওতাধীন বন বিভাগের অনুমতি বিহীন সোনা তুলা চা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবৈধ পন্থায় হাজারও গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে।গত কয়েক মাস থেকে বছরের ব্যবধানে এসব গাছ কেটে নিয়ে গেলেও বন বিভাগের কোনো রকম অনুমতি নেই।
এ বিষয়ে বন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান,এই বিষয়ে কিছুই জানেন না।আর বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে,গাছ কাটার অনুমতি না নিলেও গাছগুলো ঝড়ে পড়ে গিয়েছে এজন্য স মিলে চিরাই করার জন্য বাগান শ্রমিকদের ঘর নির্মাণ কাজে ব্যবহারের যথাযথ উপযোগী প্রক্রিয়ায় জন্য গাড়ি যোগে নেয়া হচ্ছে।
গতকদিনের অনুসন্ধানে জানা যায় দীর্ঘ দিন থেকে গাছ কেটে অবৈধ ভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে দেদারসে।কিছু অসাধু কুচক্রী মহলসহ যোগসূত্রে বাগান কর্তৃপক্ষ।টৈংরা ইউপি সোনাতুলা চা বাগানে (রাগিব আলীর বাগান নামে সুপরিচিত) সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়,চা বাগানের বিভিন্ন সেড ট্রি কেটে ম্যানেজারের বাংলোর সামনে দিয়ে প্রত্যেক দিন ৫ থেকে ৬ গাড়ি গাছ কেটে উজাড় করে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ তুলেছে বাগান চা শ্রমিকগন।
কেটে নিয়ে যাওয়া গাছের এর মধ্যে আকাশি,বেনজিয়াম,রাবার,শীল কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।ছোট বড় সব বয়সের গাছ রয়েছে।বাগান সরেজমিনে অনুসন্ধানীতে বেড়িয়ে আসলো আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য ও চোখে পড়ে যায়,বাগানের বড় বড় বাছাইকৃত গাছ কেটে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সকলের চোখের সামনে দিয়ে যেন কেউ কিছু বলার মত নেই!
ঘটনাক্রমে সামনে পড়ে যায় গাছ কেটে গাড়িতে তুলে বাঁধা অবস্থায় তখন সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করি এসব কাটা গাছ গুলো কোথায় নেয়া হচ্ছে ও কার অনুমতিতে এসব কাজ করছেন,গাড়ির চালক জোর গলায় উত্তর দিলেন মাহমুদ ভাই আছেন ওনার সাথে কথা বলেন।তদ মূহুর্তে গাড়ি চালক স শ্রমির সাথে কথা বললে জানা যায়,এই রাগিব আলীর বাগানের সব গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন ২ বছর হয় আকমল হোসেন নামে এক ব্যক্তির নিকট।
আকমল হোসেনের হয়ে আমরা কাজ করি।এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,হামিদ মিয়া,হারুন মিয়া গং দের দ্বারা মিলে একসাথে গাছ কাটার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন যদিও সরেজমিনে আকমল হোসেন আসেন না।আমারাই দেখা শুনা করি।তারমধ্যে বাগান শ্রমিকদের সাথে আলাপ কালে তাদের থেকে জানতে পারি প্রত্যেক দিন ৫ থেকে ৬ গাড়ি কর্তনকৃত গাছ যায় বাগান থেকে,এসব কিছু সকলের জানা আছে বলে জানান চা শ্রমিক কজন।
এক পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শেষ করে আসার সয়য় গাড়ি চালক বললেন আমার কোন অসুবিধা হবেনা তো,না হলে গাছ ফেলে চলে যাবো।আর অসুবিধা থাকলে বলেন এখানে একজন আছেন মাহমুদ নামে ওনি কথা বলবেন আপনার সাথে নয়তো আপনার ফোন নাম্বার দেন,ঐ মূহূর্তে কারো সাথে দেখা না দিয়ে ফোন নাম্বার দিয়ে স্থান ত্যাগ করি।
কিছুক্ষণ পর অপরিচিত একটি মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন আসলে তা রিসিভ করার সাথেসাথে নিজেকে বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক জুয়েল আহমেদ পরিচয় দিয়ে বলেন আপনি কে ?উত্তরে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলতে থাকি,একপর্যায়ে বলেন আপনার সাথে দেখা করে একসাথে চা খাবো।
পরবর্তীতে জুয়েল আহমেদের সাথে দেখা না করায় উনি আবারও ফোন দিয়ে বলেন যে কাটা গাছগুলো দিয়ে শ্রমিক কলোনির গৃহ নির্মাণ ও গৃহ মেরামতের কাজ চলছে।তিনি আরও বলেন আমি আসতেছি আপনি কোথায় আছেন বসে শুধু চা খাবো, চাও কি খেতে পারিনা একসাথে।ততক্ষণে আমার ও বুঝতে দেরী হয়নি বিষয় কি হতে পারে !
তিনি আরও বলেন,বিভিন্ন সময় ঝড়ে এসব গাছ পড়ে গিয়েছিল।মৃত গাছ কেটে নতুন গাছের চারা রোপণ ও করা হচ্ছে।এসব গাছ বেশি সময় ধরে পরে থাকলে চা গাছের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে-এমন আশংকা থেকে এসব গাছ কাটা হয়েছে।তবে গাছ কাটতে বন বিভাগের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি স্বীকার করে জুয়েল আহমদ বলেন,গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতি না থাকলেও স মিলে গাছ চিরাই করার জন্য অনুমতি চেয়ে বন বিভাগে আবেদন করা হলেও মিলেনি।
সোনাতুলা চা বাগানের ব্যবস্থাপক মহসিন আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করলে বলেন,বাগানের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ের কবলে গাছ পড়ে গেছে সেগুলো কাটা হচ্ছে।ওনাকে প্রশ্ন করি তাহলে এত গাড়ি গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সব কি ঝড়ে পড়ছে উত্তরে বলেন এত গাছ কোথায় ৬০ থেকে ৭০ টি গাছ হবে।
তখন জিগ্গেস করি তাহলে প্রত্যেক দিন ৬ থেকে ৭ গাড়ি গাছ গাড়িতে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন এসব কথা অস্বীকার করেন।তারপর যোগাযোগ হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান টিপু খাঁন এর সাথে কথা বলার পর জানান,এসব গাছ খরিদ করেন আকমল মিয়া নামে এক ব্যক্তি।তবে এসব গাছ কাটার বিষয়ে জানা থাকলে ও অনুমতি আছে কি না তাদের জানা নেই।
এসব তো বাগান ম্যানেজার ও কতৃপক্ষের কাজ অনুমতি আছে কি নেই! তারপর যোগাযোগ করি স্থানীয় ইউপি মেম্বার দিলিপ বাবু নামের ব্যক্তির সাথে তিনি জানান,এসব গাছ কাটার বিষয়ে সকলের জানা কে কিনেছে এবং কে কেটে নিয়ে যাচ্ছে,এক পর্যায়ে এও বলেছেন যে এসব কিছু ম্যানেজার সহ সকলের অনুমতিতে কাটা হচ্ছে,নয়তো বাগান ম্যানেজারের অনুমতি ছাড়া কিভাবে নিয়ে যাবে তাও এক দুদিন থেকে নয়,প্রায় দুই বছর থেকে চলছে গাছ কাটা।
বন বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দায়িত্ব প্রাপ্ত এসিএফ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,সোনাতুলা চা বাগান কর্তৃক গাছ কাটার বিষয়টি তিনি জানেন না।তিনি বলেন,চা বাগানের গাছ কাটতে বন বিভাগ ছাড়াও চা বোর্ড,জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত অবহিত করার নিয়ম রয়েছে।সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলেও তিনি জানান এবং তিনি সিলেট আছেন বর্তমানে।
সিলেট বিভাগীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা(ডি এফ ও) এস এম সাজ্জাদ হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে এবিষয়ে এস ডিও অবগত না থাকলে বা ছাড়পত্র না থাকলে তা কিভাবে অনুমতি বিহীন গাছ কাটবে তা অবৈধ ও বিভাগীয় ভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।