সরকারের তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান শহীদ, কিন্তু বাস্তবে তিনি জীবিত আছেন। একাধিকবার বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়েও নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে পারছেন না তিনি। ১৯৭১ এর রণাঙ্গনে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখসারিতে অংশ নিয়েছিলেন রাজনগর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। লুহাইউনি চা বাগানের সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী’কে।
জানা গেছে, রাজনগর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি আব্দুল হান্নানকে স্থান দিয়েছে শহীদ যোদ্ধাদের তালিকায়। কিন্তু এ ব্যাপারে বিভিন্ন দফতরে আবেদন ও যোগাযোগ করেও জীবিতের তালিকায় নিজেকে নিতে পারেননি। সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করেন তিনি।
ওই আবেদন থেকে জানা যায়, আব্দুল হান্নান সম্মুখযুদ্ধ করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম ছিল না। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হলে তিনি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেন। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি ২০১৪ সালের ১৪ মে সভা করে। তাতে তৎকালীন এডিসি জহিরুল হক সভাপতিত্ব করেন। সভায় তার আবেদন যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার শেষে আব্দুল হান্নান একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হন এবং তাকে তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়।
কিন্তু রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে ওই বছরের (২০১৪) ১ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়। তেমনিভাবে একই মাসের ৩০ তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় তার নাম মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
২০১৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভা থেকে আব্দুল হান্নান জানতে পারেন, তার নাম জীবিত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় প্রস্তাব না করে শহীদের তালিকায় প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন। বিষয়টি সুরাহার জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি। আবেদনের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও এ ব্যাপারে কোনও সমাধান হয়নি।
আক্ষেপ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে গিয়ে আজ সত্যিকারের লড়াইয়ে আমি এক পরাজিত সৈনিক। আমাকে খুব বেশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমি এখন জীবিত রয়েছি। অথচ আমাকে দেখানো হয়েছে শহীদ। নিজের নাম জীবিতের তালিকায় নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দফতর ও বড় কর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনও ফল পাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।’ রাজনগর উপজেলা সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সজল চক্রবর্তী বলেন, ‘আব্দুল হান্নান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের সময় শান্তিবাহিনী ও রাজাকাররা তাকে দু’বার ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে দিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যবশত তিনি পালিয়ে বেঁচে যান। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি যখন রাজনগরে আসে তখন ভুল করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম না তুলে শহীদদের তালিকায় তোলে।
এরপর আমরা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে তাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পত্রও দিয়েছি। কিন্তু এখনও তা সংশোধন হয়নি। আদৌ কোন দিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে মুক্তি পাবো কিনা তাও জানা নেই।