1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
মানবতা ও মানবসেবার জয় হোক
বাংলাদেশ । বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মানবতা ও মানবসেবার জয় হোক

নুরুল আলম আবির:
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২
  • ৫৯৫ বার পড়েছে

হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) রাতের অন্ধকারে নিজ রাজ্যে প্রায়ই ছদ্মবেশে ঘুরতেন। তাঁর প্রজারা সুখে আছে নাকি দুখে আছে, তা দেখার জন্য। একমাত্র আল্লাহর ভয়ে তিনি এমন কাজ করতেন। তিনি রাজ্যের শাসন কর্তা হয়ে যদি সঠিকভাবে মানুষের খেদমত করতে না পারেন, তাহলে কাল কেয়ামতের দিন শেষ বিচারের দিন মহান আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিবেন? —এই ভেবে হযরত ওমর নীরবে নিভৃতে কাঁদতেন আর মহান আল্লাহর কাছে সঠিকভাবে নিজের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য সাহায্য চাইতেন।

একদিন রাতে তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছদ্মবেশে বের হলেন। কোনো সৈন্য সামন্ত নেই, কোনো বডিগার্ড নেই, কোনো জনতার ভীড় নেই, কেউই নেই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। যেতে যেতে তিনি এক কুটিরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তাই তিনি ঘোড়া থেকে নামলেন। খুব নিবিড়ভাবে বিষয়টি লক্ষ্য করলেন। সেখানে এক দুখিনী মা চুলায় কি যেন চড়িয়েছে আর ওদিকে তার শিশু সন্তান কাঁদছে। এ অবস্থা থেকে অর্ধ পৃথিবীর শাসক হযরত ওমর (রাঃ) কুটিরে প্রবেশ করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে মা? আপনার শিশু সন্তান কাঁদছে কেন? মহিলা খুব ইতস্তত বোধ করতে লাগলেন। তিনি অভয় দিয়ে বললেন, আমি ওমর। আপনার ভয় নেই। পরে ওই দুখিনী মা বললেন, আমার ঘরে আজ কয়েকদিন ধরে খাবার নেই। ক্ষিধের যাতনায় আমার সন্তান কাঁদছে। আমি খুব চেষ্টা করেও কোনো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারিনি। আবার ওর কান্নাও থামাতে পারছি না। তাই চুলায় পানি বসিয়ে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করছি যে— তুমি কেঁদো না বাবা, আমি খাবার রান্না করছি। সে যেন তার কান্না থামায়, শান্ত হয়।

এমন ঘটনায় হযরত ওমর (রাঃ) হতবাক হয়ে গেলেন। তিনি ঘোড়া ছুটিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন। চলে গেলেন প্রাসাদে। খাদ্যের গুদাম থেকে এক বস্তা আটা নিলেন নিজের কাঁধে। তারপর চললেন ওই দুখিনী মায়ের কুটিরে। কত চাকর, কত মানুষ এই বোঝা বইতে চাইল, কিন্তু তিনি দিলেন না। বললেন, এটা আমার দায়িত্ব, আমাকেই পালন করতে দাও।

হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এভাবেই শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন। তাঁর মত আমরা কেউ হতে পারব না। তাঁর পদতলের ধূলিকণার মত হওয়ার যোগ্যতাও আমাদের নেই। যিনি পৃথিবীতে থাকাকালীনই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মোট দশজন সাহাবীকে পৃথিবীতে থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) একজন। আমাদের দেশে অনেকেই অনেকের অবস্থান থেকে মানবসেবা করে যাচ্ছেন। কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, কেউ নিজের পকেটের টাকা খরচ করে মানুষকে খাবার দিয়ে, বস্ত্র দিয়ে। এগুলোই উত্তম কাজ, সুন্দর কাজ। হোক সেটা প্রকাশ্যে বা গোপনে। মানুষ পাচ্ছে কিনা সেটাই বড় কথা। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে আহার দিয়ে, রোগাক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন যাঁরা; তারাই সত্যিকার মানবসেবক।

মানুষের কল্যাণে প্রতিটি দানই পবিত্র। ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে আপনার একমুষ্টি খাবারের মূল্য অনেক বেশি। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এক ঝলক আলোক ও ভরসা বিলানো মানুষ হলে, আমি আপনাকেই স্যালুট করি। শীতে কাঁতরানো, ব্যথায় কাতর মানুষের কষ্ট মুছে দিতে আপনার সামান্যতম উদ্যোগকেও আমি সাধুবাদ জানাই, শ্রদ্ধা জানাই।

আপনার আমার চেয়ে কিছু ক্ষমতাধর ও অহংকারী মানুষ আছেন এই পৃথিবীতে। তারা ক্ষমতার দম্ভে রাস্তা ফাটিয়ে ফেলেন। তারা শোকে কাতর মানুষের কলিজায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে ক্ষমতার জৌলুস ছড়ান, অহংকারের বোমা ফাটান। এসব মানুষের কাছে মানুষের আবেগের, ভালোবাসার, কৃতজ্ঞতার, স্নেহ-মায়া-মমতার, মানবসেবার, মানুষের দুঃখ মুছার, অশ্রু মুছার, শীত তাড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই। একদম নেই। এরা বরং শোকাতুর হৃদয় চূর্ণ করে মানুষকে আরো বেশি দুঃখ ও কষ্ট দিয়ে থাকেন। এরা নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বুঝেন না। ওদের ভাবখানা এমন যে, ওরা বাঁচলেই হলো, বাকীরা মরে যাক। জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাক। এরাই আবার বিভিন্ন জনসেবার অতিথি হয়ে মানবসেবার গল্প শোনায় মানুষকে। এই পরিচয় সেই পরিচয় দিয়ে মঞ্চ কাঁপিয়ে গিলুহীন জনগণকে শতভাগ বুঝিয়ে দেয়, তারাই ভালো মানুষ, তারাই খাঁটি মানুষ, তারাই মানবতার ফেরিওয়ালা। তাদের এসব কিছু বিশ্বাস করবেন না। এসব ডাহা মিথ্যা কথা, চরম ভণ্ডামি। এরা জাতির সাথে সাধারণ জনতার সাথে তামাশা করছে। যারা মানবসেবার নামে, জনসেবার নামে মানুষকে টর্চার করে, মানুষকে ক্ষমতার দম্ভে পিসে ফেলতে চায়, আমি তাদের ঘৃণা করি। প্রতিটি সচেতন মানুষ এদেরকে ঘৃণা করবে, প্রত্যাখ্যান করবে এবং এটাই করা উচিত।

এদের চেয়েও বহু ক্ষমতাধর মহামানবের জন্ম হয়েছে এই পৃথিবীতে। তারা সিংহাসন ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে, বিভিন্ন রাস্তায়, বস্তিতে অসহায়ভাবে পড়ে থাকা মানুষের কাছে ছুটে গেছেন। এসব মহামানবরা বিনা সংকোচে ময়লা কাপড় পরা এসব অসহায় মানুষদের শরীরের সাথে বুক মিলিয়ে ওদের দুঃখ মুছে দিয়েছেন, অশ্রু মুছে দিয়েছেন, ক্ষুধা মুছে দিয়েছেন। অসহায় মানুষদের আশ্রয় দিয়ে, অভয় দিয়ে, ভরসা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে মানবতা রক্ষার মহাকাব্য রচনা করেছেন। ক্ষমতা তাদেরকে জালিম বানাতে পারেনি, জুলুমবাজ বানাতে পারেনি, অহংকারী বানাতে পারেনি।

পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবধি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সাঃ), হযরত ওমর ফারুক (রাঃ), মাদার তেরেসা সহ আরো নাম না জানা বহু মহামানবের জন্ম হয়েছে এই পৃথিবীতে। এসব মানুষ ক্ষমতাকে, আরামআয়েশকে, বিলাসীতাকে পদপিষ্ট করে সহায়হীন, দিশাহীন মানুষের কাছে ছুটে এসেছেন। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদেরকে সত্যের দিশা দিয়েছেন, আলো দিয়েছেন, সহায় দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, খাদ্য দিয়েছেন, শিক্ষক হয়ে শিক্ষা দিয়েছেন, নার্স হয়ে রোগাক্রান্ত মানুষের সেবা করেছেন। এসকল মহামানবরাই আলোকবর্তিকা হয়ে যুগে যুগে এই পৃথিবীর অন্ধকার দূর করেছেন এবং দূর করছেন। এসব মহামানবকে আমি স্যালুট করি, হৃদয়ের গহীন থেকে শ্রদ্ধা জানাই।

এ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ ভালো থাকুক। সত্যিকার মানবসেবার জয় হোক। রাজা থেকে ফকির পর্যন্ত সকল মানুষের কল্যাণ কামনা করছি। সকল হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার ও সকল অসুন্দর কাজের পরাজয় ঘটুক। আমাদের সকলের সুমহান প্রভু পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন।

লেখক: সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

নুরুল আলম আবির

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD