1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
মহীয়সী বিপ্লবী নারীনেত্রী আশালতা সেনের জন্মদিন
বাংলাদেশ । শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মহীয়সী বিপ্লবী নারীনেত্রী আশালতা সেনের জন্মদিন

কামরুল হাসান :
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
  • ১৩৮৬ বার পড়েছে

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যানুরাগী বাংলার নারী আন্দোলনের অগ্রগণ্য সক্রিয় কর্মী, কবি ও সমাজসেবক এবং মহীয়সী বিপ্লবী অগ্নিযুগের নারীনেত্রী আশালতা সেনের আজ ১২৮-তম জন্মবার্ষিকী।

১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে ৫ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর এক উকিল পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বিক্রমপুর পরগনার বিদগাঁও গ্রামে বর্তমানে এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্গত । তাঁর মাতার নাম মানদাসুন্দরী দাশগুপ্ত ও বাবার নাম ছিল বগলামোহন দাশগুপ্ত। তাঁর বাবা নোয়াখালী জজ কোর্টের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী ছিলেন।

মাত্র ১০ বছর বয়সেই সেই মহীয়সী সংগ্রামী নারী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে মাসিক অন্তঃপুর পত্রিকায় তাঁর সংগ্রামী জাতীয়তাবাদী কবিতা সুধী সামাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সর্বমহল তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে। সমাজের সংস্কার ও মানুষের কল্যাণ চিন্তা তাঁর সাহিত্যের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি উচ্ছ্বাস, উৎস, বিদ্যুৎ ও ছোটদের ছড়া রচনা করেছেন। পরিণত বয়সে বাল্মীকি রামায়ণের যুদ্ধকান্ডের সংক্ষিপ্ত কাব্যানুবাদ করেন। শেষ বয়সে একটি আত্মজীবনীও রচনা করেন।

সমাজের রক্তচক্ষু, ব্রিটিশ বেনিয়াদের জেল-জুলুম কোন কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আপোষহীন এই নেত্রী তাঁর মেধা, শ্রম অকাতরে দেশের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন।

১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দ। নবশশী দেবী তখন স্বদেশি আন্দোলনের একজন সক্রীয় কর্মী ছিলেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে বিক্রমপুর অঞ্চলে স্বদেশি প্রচারের জন্য নবশশী দেবী, সুশীলা সেন, কমলকামিনী গুপ্তা প্রমুখ মহিলা সমিতি, স্বদেশি ভাণ্ডার সহ বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলেন। আশালতা সেনের মাতামহী নবশশী দেবী তিনি আশালতার মাঝে আশার আলো দেখতে পান। নবশশী দেবী আশালতা সেনকে তাঁর স্নেহময়ী মমতা, উৎসাহ-উদ্দীপনায় স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত করার লক্ষ্যে বিলাতি কাপড় বর্জনের সংকল্প-পত্রে দৌহিত্রী আশালতাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে স্বদেশীব্রতে দীক্ষিত করেন। দীক্ষা নিয়ে মাত্র এগারো বছর বয়সে আশালতা গ্রাম্য মহিলাদের স্বাক্ষর সংগ্রহকাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এভাবেই শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন। পরবর্তীতে তিনি বিদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বই পড়ে আরো উদ্দীপ্ত হতে থাকেন এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে হয়ে উঠেন অনন্য।

পরিণত বয়সে তিনি সত্যরঞ্জনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিধি বাম। তাঁর কপালে সুখ সইল না। ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দ। মাত্র ২২ বছর বয়সে স্বামীর অকাল মৃত্যুতে তিনি শিশুপুত্র সমর রঞ্জন সেনকে নিয়ে বিধবা হন। শিশুপুত্রকে নিয়ে তখন তিনি সাময়িক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে থেকে দূরে থাকলেও সন্তান একটু বড় হলে পুনরায় তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।

১৯২১ খ্রীষ্টাব্দ। অসহযোগ আন্দোলন তখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। তখন তিনি সেই আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত হন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি শ্বশুরের সহায়তায় ঢাকার গেন্ডারিয়ায় স্বীয় বাসভবনে মহিলাদের প্রশিক্ষণের জন্য ‘শিল্পাশ্রম’ নামে একটি বয়নাগার স্থাপন করেন। ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দে মহিলাদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করা এবং গান্ধীজীর বাণী প্রচার করার লক্ষ্যে তিনি সরমা গুপ্তা ও সরযূবালা গুপ্তার সহযোগিতায় গঠন করেন ‘গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি’। সমিতির সদস্যরা নিজেরাই উৎপন্ন দ্রব্যের বিক্রয় ও প্রচারকাজ পরিচালনা করতেন। ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ‘নিখিল ভারত কাটুনী সংঘের’ (এ.আই.এস.এ) সদস্য হন এবং ব্যাপকভাবে খদ্দর প্রচারে ব্রতী হন। ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ‘কল্যাণ কুটির আশ্রম’ স্থাপন করেন। ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে গেন্ডারিয়ার জুড়ানে শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে তিনি সরমা গুপ্তার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘জুড়ান শিক্ষা মন্দির’।

১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দ। লবণ আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ঢাকায় আশালতা সেনের অসাধারণ সাহস ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। সহকর্মীদের নিয়ে নোয়াখালী থেকে কিছু নোনা পানি ঢাকায় এনে জনসমক্ষে লবণ তৈরি করে আইন অমান্য আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এসময় ‘লবণ আইন’ অমান্য আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে আশালতা প্রথম কারাবন্দি হন। শাসকগোষ্ঠী ‘গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি’কে বেআইনি ঘোষণা করে।

এছাড়াও সেসময় তিনি অনেক নারী সংগঠন গড়ে তুলেন। এর মধ্যে ‘জাগ্রত সেবিকাদল’ (১৯৩০, ঢাকা), ‘রাষ্ট্রীয় মহিলা সংঘ’ (১৯৩১, বিক্রমপুর), ‘নারীকর্মি শিক্ষা কেন্দ্র’ (১৯৩১, ঢাকা) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দে। আশালতা ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এসময় ঢাকায় পুলিশের গুলিতে এক যুবক নিহত হলে তার প্রতিবাদে মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাঁকে আবারো গ্রেফতার করা হয় এবং সাড়ে সাত মাস সশ্রম কারাদণ্ড তিনি ভোগ করেন। ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দে দুর্ভিক্ষে ক্ষুধার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থা পরিষদ এবং ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে দেশবিভাগের পর তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডও অব্যাহত থাকে। ১৯৬৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি দিল্লিতে তাঁর পুত্র সমর রঞ্জন সেনের নিকট চলে যান।

স্বাধীনতার পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আমন্ত্রণে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন এবং ‘গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি’র সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হন। আশালতা সেনের বাড়িটি বর্তমানে ‘গেন্ডারিয়া মনিজা রহমান বালিকা বিদ্যালয়’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি দিল্লিতে পুত্রের বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ভারতবর্ষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অন্ধকার , পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে ব্রিটিশ বেনিয়াদের শাসন ও শোষণের হাত থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সমাজের কল্যাণে, নারীদেরকে সঙ্গে নিয়ে আলোক বর্তিকা হাতে যে কর্মদক্ষতা, সাহসিকতা ও সৃজনশীল প্রতিভা সুপ্রতিষ্ঠিত করে গেছেন তা চির অম্লান হয়ে থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD