সিলেটের কানাইঘাটে ফিল্মি স্টাইলে খুন হয়েছেন ফরিদ উদ্দিন। পূর্ব শত্রুতার জেরেই তাকে হত্যা করা হয়। আর এ হত্যাকাণ্ড মিশন ‘সাকসেস’ করতে কাজ করে তিন ভাগে তিনটি গ্রুপ। হত্যাকাণ্ডের চারদিনের মাথায় মূল পরিকল্পনাকারী নবনির্বাচিত ইউপি সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯। রোজ বৃহস্পতিবার (৪ঠা ফেব্রুয়ারি) রাতভর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
রোজ শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে তিনজন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন, মোস্তাক আহমদ ও কাওছার আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান আরো জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরেই ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন গ্রেপ্তারকৃতরা। হত্যাকাণ্ড মিশন ‘সাকসেস’ করতে আলাদাভাবে কাজ করে তিনটি গ্রুপ। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নিজাম ও মোস্তাক।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন গ্রুপের সদস্যরা তিন ভাগে তিন জায়গায় অবস্থান করেন। এর মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী নিজাম ও মোস্তাক নিজেদের আড়াল রাখতে ঘটনার দিন সিলেট নগরে থাকেন। মূলত নগরে থেকে তারা অন্য দুটি গ্রুপের কার্যক্রম সমন্বয় করেন।
দ্বিতীয় গ্রুপটি ঘটনার দিন ফরিদের গতিবিধির উপর পর্যবেক্ষণ করে। আর তৃতীয় গ্রুপটি ঘটনাস্থলে ওৎ পেতে থাকে। এদিন বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ফরিদ। পথে বড়খেওড় এলাকার এফআইভিডিবি স্কুলের সামনে আসতেই তাকে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে তৃতীয় গ্রুপটি। প্রচুর রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই ফরিদ মারা যান।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব- ৯। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করে মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর থেকে মূল পরিকল্পনাকারী নাজিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তার দেওয়া তথ্যমতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থেকে কাওছার আহমদকে ও সিলেট নগরীর বন্দরবাজার থেকে মোস্তাক আহমদকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানায় র্যাব-৯। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, এলাকায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব বিস্তার নিয়ে আগে থেকেই মামলা-হামলার ঘটনা চলছিল দু-পক্ষের মধ্যে। নিহত ফরিদ ও তার শ্যালক কয়েছ উদ্দিন ওরফে কয়ছর আহমদ মিলে একটি পক্ষ আর নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন ও তার ভাই হেলাল আহমদসহ অন্যান্য ভাই মিলে আরেকটি পক্ষ। এ দুটি পক্ষের বিবাদপূর্ণ সম্পর্ককে ঘিরে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত থাকতো।
৩১ জানুয়ারি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় এলাকায় প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন ফরিদ উদ্দিন। তিনি ওই ইউনিয়নের খাসাড়ীপাড়া গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন সন্ধ্যায় রাতে তার লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় বুধবার কানাইঘাট থানায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ নিহত ফরিদের বাবা অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করেন মো. রফিকুল হক।