1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
নোটিশ এসেছে স্কুল ছাড়তে, আমরা কোথায় যাবো!
বাংলাদেশ । সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নোটিশ এসেছে স্কুল ছাড়তে, আমরা কোথায় যাবো!

তিমির বনিক:
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২
  • ১৯৯ বার পড়েছে

বাড়িঘরে এখনো পানি। ঈদ স্কুলে করেছি। এখন নোটিশ এসেছে স্কুল ছাড়তে হবে। কিন্তু আমরা যাবো কোথায়? যাওয়ার তো জায়গা নেই।’- কথাগুলো বলছিলেন বিয়ানীবাজারের বৈরাগীরবাজার এলাকার খুশির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা আব্দুল করিম ময়না।

চোখে-মুখে এখন তার উৎকণ্ঠার ছাপ। পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে তিনি কোথায় দাঁড়াবেন। গতকাল বিকালে ময়না জানিয়েছেন, ‘হেডস্যার এসে বলেছেন; শুক্রবারের মধ্যে স্কুল ছাড়তে হবে। শনিবার থেকে স্কুল খোলা। এ কারণে সকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ৮০ জন লোক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।’ বিয়ানীবাজারের কুশিয়ারা তীরবর্তী ইউনিয়ন কুড়ারবাজার।

এবারের বন্যায় এই ইউনিয়নের ৯০ ভাগ মানুষ কবলিত হন। এক রাতেই ইউনিয়ন ভাসিয়েছিল উজানের ঢল। এজন্য ইউনিয়নে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিলেন কয়েকশ’ মানুষ। পানি নামতে শুরু করায় এখন প্রতিদিনই বাড়ি ফিরছেন মানুষ।
তবে খসি নামগড়, ছাতলসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষজন এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। নদী তীরবর্তী হওয়ায় এখনো ওইসব গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে পানি। এ কারণে তারা ফিরতে পারছেন না। আবার অনেকেরই ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামত না করা পর্যন্ত তারা ফিরতে পারবেন না। গতকাল বিকালে খসির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল এখনো ওই স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১৬টি পরিবারের ৮০ জন লোক। তারা সবাই ঈদ করেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রে থাকা বানভাসিরা জানিয়েছেন, ‘এবার বাড়িঘরে পানি। উদ্বাস্তু জীবন। ঈদ আর হলো কই। আশ্রয়কেন্দ্রেই যা পাওয়া গেছে, তাই খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।’

তারা জানিয়েছেন- ‘এখনো ওই আশ্রয়কেন্দ্রের আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে পানি রয়েছে। অনেকের বাড়িতে পানি। আবার কারো কারো বাড়ি থেকে পানি নামলেও হাঁটু পরিমাণ কাদায় ভরপুর। বাড়ি ফেরার কোনো সুযোগ নেই। এই অবস্থায় স্কুল ছাড়ার নোটিশে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।’ এ ব্যাপারে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তুতিউর রহমান জানিয়েছেন, ‘এখনো অনেকের বাড়িঘরে পানি রয়েছে। স্কুল ছাড়ার নোটিশ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএন’র সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে হয়তো পরিস্থিতি আরও উন্নত হতে পারে।’ আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা মনোয়রা বেগম জানিয়েছেন, ‘প্রায় ২৫ দিন আগে তিনি স্বামী-সন্তানসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। ঘরে ছিল কোমরপানি।

উদ্ধার করে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।
এরপর থেকে ওখানেই আছেন। পানি নামলেও তার ঘরের অবস্থা ভালো নয়। নদীর ঢলে ঘরের বেড়া ভেসে গেছে। আসবাবপত্রও নেই। এখন তিনি যাবেন কোথায়? স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিলে গাছতলায় গিয়ে বসবাস করতে হবে বলে জানান তিনি।’ শুধু ময়না ও মনোয়ারা নয়, এই আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আছেন সবারই ঘরবাড়ি এখনো বসবাসের উপযোগী নয়। নদীর তীরবর্তী হওয়ার কারণে বন্যার পানি সবার আগে আঘাত করেছিল। আর নামছেও সবার পরে। এ কারণে এই এলাকার মানুষগুলো দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়েছেন। পাশের বৈরাগী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, বৈরাগীবাজার মাদ্রাসার আশ্রয়কেন্দ্রেও এখনো আছেন মানুষ। মাদ্রাসার কেন্দ্রে ৪০টি ও স্কুলের কেন্দ্রে ৩০টি মতো পরিবারের ২শ’ জনের উপরে মানুষ বসবাস করছে। তারা আশ্রয়কেন্দ্রেই ঈদ করেছেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানালেন, ‘ঈদে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন তাদের মধ্যে আগের দিনই লাচ্ছা, সেমাই, চিনি, দুধ বিতরণ করা হয়। এলাকার লোকজনের পক্ষ থেকেও উপহার সামগ্রী দেয়া হয়। ঈদের দিন এলাকার লোকজন মাংস সংগ্রহ করে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। এছাড়া এলাকার লোকজন কখনো তাদের রান্না করা খাবার, আবার কখনো চাল, ডাল দিয়ে সব সময় সাহায্য করছেন।’

তিনি জানান, ‘এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া। অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে বলে জানান তিনি।’ এবারের ঈদ সিলেটের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কাটিয়েছেন অন্তত ১৮ হাজার মানুষ। পানি থাকার কারণে তারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফিরতে পারেননি বাড়ি। এতে করে আশ্রয়ে থাকা মানুষজনের মনোকষ্ট ছিল।
ঈদের পরের তিনদিনে অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল থেকে বেশিসংখ্যক লোক বাড়ি যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। তারা জানান, এখন পানি দ্রুত নামছে। আর পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তবে সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলার ২২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো লোকজন রয়েছেন। এর সংখ্যা হচ্ছে- ১৪ হাজার ১৪৮ জন। প্রতিদিনই মানুষ কমছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজন বাড়ি ফিরে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (নেজারত) পল্লব হোম দাস জানিয়েছেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ কমছে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর ভেসে ওঠায় সবাই ফিরতে শুরু করেছেন।’ এদিকে, ১৬ই জুন সিলেটে প্রথম উজানের ঢল আঘাত হেনেছিল সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, সিলেট সদর ও বিশ্বনাথের একাংশে। এই ঢলে ভেসে যায় ওই উপজেলাগুলো।

এর এক সপ্তাহ পর কুশিয়ারা অববাহিকতার উপজেলার জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে আঘাত হানে বন্যা। এতে করে ওই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। সুরমা অববাহিকা অর্থাৎ সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো থেকে দ্রুত পানি নামলেও কুশিয়ারা অববাহিকার পানি ধীরে নামছে। টানা ১০ দিন পানি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এ কারণে মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বাড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, কেবলমাত্র ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি ছাড়া সব পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে চলে এসেছে। এতে করে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির দ্রুতই উন্নতি ঘটছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD