সাধারন মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।সাব আ সানাবিল নামে একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে পাকাঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা বলে এই প্রতারনা করা হয়েছে।
অপরদিকে পাকা ঘর ও নলকুপ পাওয়ার আশায় ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা দরিদ্র পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব।প্রতারনার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যাক্তি মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল(৪০) মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লইয়ারকুল গ্রামের বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামে বিয়ে করার সুবাদে ওই এলাকায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিলো।তার ভায়রা এইচ এম ইসমাইল হোসেন একই গ্রামের বাসিন্দা হলেও তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং সেখানেই থাকেন।
প্রথম দিকে আল হেলাল সুনামগঞ্জে এলেই তার ভায়রা এইচ এম ইসমাইল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের কাছে ধর্মীয় কথা-বার্তা বলে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে সবাইকে তার প্রতি আকৃষ্ট করতেন।কিছু দিনের মধ্যেই তার এমন বিনয়ী আচার-আচরনে ওই এলাকার মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
এরপরই শুরু হয় তার প্রতারনার কৌশল।তিনি ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের বলেন,সাব আ সানাবিল সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান নামে তাদের একটি ধর্মীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।যেখানে পাচ ওয়াক্ত নামাজী অসহায় লোকদেরকে সাহায্য করা হয়।এখানে ১ লাখ টাকা জমা করলে ৫ লাখ টাকার ঘর পাওয়ার সুযোগ আছে।আর ১০ হাজার টাকা দিলে একটি নলকূপ দেওয়া হবে।তবে এই সাহায্য পাওয়ার একমাত্র শর্ত হলো আবেদনকারীকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ও আমলদার হতে হবে।
এভাবেই অভিনব প্রতারনার কৌশল ব্যবহার করে হেলাল বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার প্রায় শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দেন।কিন্তু গত ১০ মাস অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত কেউই ঘর কিংবা নলকূপ পায়নি।পরে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের ফালান মিয়া (৩২) বাদী হয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল (৪০),তার বোন আকলিমা আক্তার (৩৪) ও আকলিমার স্বামী রেনু মিয়া (৪৫) কে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলালের ভায়রা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর মাদরাসায় শিক্ষক এইচ এম ইসমাইল হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,আমি আসলে বুঝতে পারিনি তিনি মানুষের সঙ্গে এরুপ প্রতারণা করবেন।এখন এলাকাবাসীর সামনে মুখ দেখানোটাও দায় হয়ে পড়েছে।অনেকবার উনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারছি না।
এ বিষয়ে মিয়ারচর মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন,মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল সহজ সরল মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে পুজি করে সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।সে একজন ভন্ড-প্রতারক।তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারনা করার সাহস না পায়।
তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কৃষক লীগ নেতা মোস্তফা মিয়া জানান,আমাদের এলাকার অন্তত ছয়টি গ্রাম থেকে গরিব ও অসহায় মানুষকে ঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে আল হেলাল।টাকা নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সে উধাও হয়ে গেছে।ফোন বন্ধ থাকার কারনে এখন তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারছে না।
দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তারা মিয়া বলেন,দুই উপজেলায় প্রায় শতাধিক মানুষ তার এই অভিনব প্রতারণার ফাদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে।প্রতিটি মানুষই খুব অসহায় এবং দরিদ্র মানুষ।কেউ জমি বিক্রি করে আবার কেউবা গবাদী পশু বিক্রি করে এই টাকাগুলো দিয়েছে।প্রশাসন উদ্যোগ নিলে হয়তো তারা তাদের দেওয়া টাকা পেতে পারে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা ও মামলার বাদী ফালান মিয়া বলেন,প্রতারণার শিকার হওয়া সবার পরামর্শ ও সম্মতি নিয়ে আদালতে মামলা করেছি।আশা করি অতি দ্রুতই আমাদের টাকা আমরা ফেরত পাবো।পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,আমরা আদালত থেকে মামলাটি তদন্তের ভার পেয়েছি এবং মামলাটি তদন্ত শুরু হয়েছে।তদন্তের স্বার্থে আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।