২১ জেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া নৌরুট আবার সেই পুরোনো চেহারায় ফিরে এসেছে।করোনা সংক্রমণরোধে সারাদেশে চলমান লকডাউনের আজ ১৫ জুলাই থেকে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত শিথিল হচ্ছে। শুরুর প্রথম দিনেই দৌলতদিয়া ঘাটে সকাল থেকেই রয়েছে ঢাকাফেরত যাত্রী ও যাত্রীবাহী বাসের চাপ অপর দিকে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ রয়েছে অনেক।
অন্যদিকে লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় লঞ্চ ঘাটেও দেখা গেছে যাত্রীর ভীড়। এদের অনেকের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। যেন অনেক দিন পর মুক্ত হয়েছে।দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গণপরিবহন চালু ও কোরনানীর পশুবাহি ট্রাকের চাপে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় নদী পাড়ের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে অসংখ্য যানবাহন। প্রচন্ড রোদ আর গরমে আটকে থাকা যাত্রীদের দূর্ভোগের পাশাপাশি ট্রাকে থাকা গরুগুলো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকাল ৯ টা থেকে বেলা দুপুর ২ টা পর্যন্ত দৌলতদিয়ার কয়েকটি ঘাট ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর স্বরূপে ফিরেছে দৌলতদিয়া ঘাট। বিগত কয়েক মাস দৌলতদিয়া ঘাটে নদী পারের জন্য কোন যানবাহনকে মহাসড়কে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা না গেলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেই পুরনো দৃশ্যের অবতারনা হয়।
ফেরি জন্য প্রতিটি যানবাহনকে মহাসড়কে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। সকাল ৯টা নাগাত দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে অন্তত ৩ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ হ্যাচারীজ পর্যন্ত সৃষ্টি হয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি।সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে সিরিয়ালের দৈঘ্য। আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীদের দূর্ভোগের পাশাপাশি প্রচন্ড গরমে কোরবানী উপলক্ষে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ট্রাকে করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া গরুগুলো নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা। রোদ ও গরমে বেশীর ভাগ গরুগুলো অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলা তাদের ভরসা হাতপাখা। প্রতিটি ট্রাকে ৮/১০জন করে রাখাল অবিরাম গরুগুলোকে বাতাস করে চলেছেন।
খুলনা থেকে আসা যাত্রীবাহি বাস ঈগল পরিবহনের চালক মজিক বলেন, দীর্ঘ দিন পর পরিবহন চালানো সুযোগ পেয়েছি। এতদিনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাটের দূর্ভোগের চিত্র একই রকম আছে। প্রায় ঘন্টা তিনেক আগে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসেছি। প্রচণ্ড গরমে বাসের মধ্যেই বসে থাকতে হচ্ছে। যাত্রীরা অর্ধয্য হয়ে পড়ছেন। কিন্তুু কিছুই করার নেই। জানিনা কখন ফেরির নাগাল পাব।
কুষ্টিয়া কুমারখালি থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী রাজ্জাক সরদার সহ অনেকেই জানান, লাখ লাখ টাকার গরু নিয়ে তারা বেশি দামে বেচার আশায় ঢাকায় যাচ্ছেন। কিন্তুু দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। এসব গরুগুলো তো খুব বেশী কষ্ট সহিষ্ণু না। ফলে গরুগুলো প্রচন্ড গরমে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। এ কারণে যদি একটি গরুর কোন দূর্ঘটনা ঘটে তা হলে ওই ব্যবসায়ীর অপুরোনীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।
বিআইডব্লিউটিসি’র স্থানীয় সূত্র জানায়, এক সাথে বিপুল সংখ্যক যানবাহন একসাথে নদী পারাপার হতে আসায় দৌরতদিয়া ঘাট এলাকায় নদী পারের অপেক্ষায় যানবাহনগুলো সিরিয়ালে আটকা পড়েছে।দূর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী যানবাহন ও কোরবানীর পশুবাহি ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মো. শিহাব উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদ-উল আযহা উপলেক্ষ দু’একদিনের মধ্যে আরো দু’টি রোরো ফেরি এ নৌরুটের বহরে যুক্ত হবে। এছাড়া ৩নং ফেরি ঘাটটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রেখে মেরাতম কাজ করা হচ্ছে।