বিয়ের দশ মাসের মাথায় দুর্দশা নেমে আসে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের শাহজাহানপুর গ্রামের মেয়ে বিউটি বেগমের সাংসারিক জীবনে। বিউটির বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বেতাগুনজা গ্রামের মৃত তাহির আলীর ছেলে শফিক মিয়ার সাথে। উভয়ের মধ্যে ভালোলাগা ভালোবাসায় গতবছর কোর্ট মেরিজ ও ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক ৪ লক্ষ টাকা দেন মোহরে রেজিষ্ট্রি করে নিকাহনামা সম্পাদন করা হয়।
তাদের সংসারে কাল হয়ে দাঁড়ায় ভাসুর ও চাচা শ্বশুর। বিউটির অগোচরে তাঁরা স্বামীকে কুপরোচনা দিয়ে ভাসুর ছাতির মিয়াকে বিদেশে পাঠানোর নাম করে বড় অংকের টাকা দাবি করে বসে বিউটির পরিবারের কাছে। টাকা না দিলে স্বামী শফিক মিয়া, ভাসুর ছাতির মিয়া ও চাচা শ্বশুর আশবার আলী মিলে শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতন শুরু করে, এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুকমি ধামকি দেয়। উপায়ন্ত না পেয়ে সুখের সংসার রক্ষার্থে টাকা দেয় কনের পরিবার। টাকা-পয়সা দিয়েও রক্ষা পায়নি সংসার ও কনের বাড়িতে থাকা বোবা প্রাণিগুলো। রাতের আঁধারে গৃহে আগুন লাগিয়ে হাঁস, মোরগী, ছাগল পুড়িয়ে ফেলা হয়। অত্যাচার ও নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করতে না পেরে বিউটির শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিতে হয়েছে আইনের। সিলেট জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী-৮ নং আদালত, ৪২৭/৪৪৭/৪৩৬/৩২৩/৩৭৯/৫০৬/৩৪ দ: বি: ধারায় গত ০৭/০৬/২০২০ ইং সনে দায়েরকৃত বালাগঞ্জ সি.আর মামলা নং ৪২/২০২১।
মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অপর আরেকটি মামলা গত ১৮/১২/২০২০ ইং তারিখে বালাগঞ্জ জি.আর মামলা নং ৬৮/২০২০ ৩২৩/৩০৭/৩২৬/৫০৬(২)/৩৪ ধারায়। একাধিক মামলার ভয়ে বিউটির শ্বশুড় বাড়ির লোকজন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তাকে আর নির্যাতন ও যৌতুকের টাকা চাইবেনা বলে মুচলেকা দেয়। বিউটির সুখের কথা চিন্তা করে, সুন্দরভাবে সংসার পরিচালনার স্বার্থে মামলার আপোষে রাজি হোন বিউটি ও তার পরিবার। ওই মামলাটি চালু রয়েছে এবং ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামীগণ পলাতক রয়েছেন। যা মামলার কাগজপত্রাদি সূত্রে পাওয়া যায়।এবিষয়ে কনের বর পলাতক আসামী শফিক মিয়ার সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি পচন্দ করে বিয়ে করেছি। আমার বড় ভাই ও চাচার কারণে সংসার ভাঙছে। আমার স্ত্রীর কাছে তারা বার বার টাকা চায় না দিলে মারপিট করে আমাদের দু’জনকে। শফিক কেঁদে কেঁদে বলেন, ঢাকায় নুরউদ্দিন নামে একজনের কাছে আমাকে জিম্মি করে রেখেছেন তাঁরা। দয়া করে আমাকে এখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে যান।
এবিষয়ে মামলার পলাতক আসামী কনের ভাসুর ছাতির মিয়ার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, বিয়ে বসলে টাকা দেওয়া লাগে। এটি আমাদের আইনে রয়েছে। ২লক্ষ টাকা দিলে আমার ভাইকে পাঠাবো।বরের চাচা আশবার আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তাইর (বিউটির) বাপের ক্ষমতা আছেনি আটকানোর। শফিককে ঢাকায় পাঠিয়েছি, তাইরে কইও (বলিও) আরও ১লাখ টাকা দিলে তাইর (বিউটি) জামাইকে ফেরত দিমু।এব্যাপারে রাজনগর থানার এসআই বিনাভূসন চক্রবর্তী বলেন, খুব শ্রীঘ্রই আসামীদের গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করবো।