টাঙ্গাইলে মির্জাপুরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক দেওহাটা-ধানতাড়া সড়ক।সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন মির্জাপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ধামরাই ও কালিয়াকৈর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের শত শত মানুষ চলাচল করে থাকেন।এ সড়কের বহুরিয়া ইউনিয়নের গেড়ামাড়া এলাকায় প্রায় ২৩০ ফুট অংশ ভেঙে গেছে।মানুষের চলাচলে সুবিধার্থে স্থানীয় এমপি বরাদ্দ দিয়ে মাটি ভরাট করে দেন।এক বছর পর রাস্তাটি আবার ভেঙে যায়।
পরবর্তীতে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বহুরিয়া ইউপির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সামাদ দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে একটি বাঁশের সাকো তৈরি করেন।এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় দক্ষিণ মির্জাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহনের সরাসরি চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান,সময় ও মহাসড়কে ভোগান্তি কমাতে মির্জাপুর উপজেলার মানুষ এই সড়ক দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতেন।দক্ষিণ মির্জাপুরের বহুরিয়া ইউনিয়নের ৮/১০টি গ্রামসহ ভাওড়া ও ওয়ার্শী ইউনিয়নের ২০/২৫টি গ্রামের মানুষ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে থাকেন।এছাড়া পার্শ্ববর্তী ধামরাই ও কালিয়াকৈর উপজেলার ৭/৮টি ইউনিয়নের মানুষ এই সড়ক দিয়ে কুমুদিনী হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।
এ সড়ক দিয়ে ইউপি কার্যালয়,গেড়ামাড়া উচ্চ বিদ্যালয়,গেড়ামাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কমিউনিটি ক্লিনিক,গেড়ামাড়া বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিক্ষার্থীসহ ইউনিয়নবাসী চলাচল করে থাকেন।সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।এতে দক্ষিণ মির্জাপুরে ফসলি জমিতে উৎপাদিত ধান,পাট,সরিষা,আখ,গম ও সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক।
সড়কটির গেড়ামাড়া নামক স্থানে বন্যায় ভেঙে যাওয়ায় গত তিন বছর ধরে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।২০১৮ সালে প্রথম রাস্তাটি বন্যায় ভেঙে যাওয়ায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ একাব্বর হোসেন এমপি বরাদ্ধ দিয়ে রাস্তাটির মাটি ভরাট করান।কিন্তু গত বছরের বন্যায় পানির স্রোতে সড়কটির ওই স্থানে আবার ভেঙে যায়।এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা পড়েন দুর্ভোগে।বন্ধ হয়ে যায় সকল ধরনের যানবাহন চলাচল।
বহুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সামাদ পরিষদের তহবিল থেকে রিকশা,মোটরসাইকেল ও মানুষের চলাচলের জন্য ওই স্থানে ৬ ফুট পাশের একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেন।কিন্তু সাঁকোটির বিভিন্ন স্থানের বাঁশ ভেঙে গেছে।বর্তমানে সাকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।মাঝে মধ্যে স্থানীয় লোকজন সাঁকোটি সংস্কার করলেও যেকোনো সময় তা ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
আনালবাড়ি গ্রামের মোক্তার আলী,গেড়ামাড়া গ্রামের জাকির বলেন,বহুরিয়া ইউনিয়নের দিঘুলিয়া,বেত্রাসিন,বিল গজারিয়া, গোহাইলবাড়ি,ছোট গবড়া,বড় গবড়া,আনালবাড়ি,আড়াইপাড়া,কাহারতারা ও ভাওড়া এবং উয়ার্শী ইউনিয়নের শত শত লোকজন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন।যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দক্ষিণ মির্জাপুরের কৃষক তাদের জমিতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানান তারা।
চান্দুলিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও জুলহাস মিয়া জানান,মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিদিন নড়বড়ে এই বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়।এছাড়া ধামরাই ও কালিয়াকৈর উপজেলার যাদবপুর,ভাতকুড়া,আমরাইল,ডুবাইল,ভাঙ্গুরী,গরুগ্রাম,আঠাবহর ইউনিয়নের লোকজনও এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে থাকে।বাঁশের সাকোটি ভেঙে চলাচল জন্য উপযোগী না।
এলাকাবাসী বলেন,গেড়ামাড়া গ্রামে ব্রিজ না থাকায় এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ।ছেলেমেয়েদের হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।এই রাস্তা ছাড়া চলাচলের রাস্তা না থাকাই নিজেদের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়।তারা ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।গেড়ামাড়া গোহাইলবাড়ি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মোঃ মোজাম্মেল হোসেন জানান,বাঁশের সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আরিফুর রহমান জানান,গেড়ামাড়া গ্রামের ওই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।দ্রুত সময়ের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।