টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এক ব্যবসায়ীকে আব্দুল জলিল (৩৫) কে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ করেছেন তারই অসহায় স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন।জলিল ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের বড় নলছিয়া গ্রামের আব্দুল লাল চাঁন মুন্সীর ছেলে।গত আগস্ট মাসের ৬ তারিখে জলিলকে খড় কেনার কথা বলে নিজ বাড়ি থেকে কৌশলে বের করে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার খগেন ঘাটের দিকে নিয়ে রওনা দেয় তার সহযোগী ব্যবসায়ীরা।
তার দুই একদিন পরেই নিখোঁজের পান পরিবারের লোকজন।পরে টানা পাঁচ দিন পর বুধবার রাতে তাকে মেরে ফেলার খবর পায় স্বজনরা।এরপর বৃহস্পতিবার ভোর সকালে ওই ঘাট থেকে জলিলের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন তার ছোট ভাই ও স্বজনরা।কিন্তু বৃহস্পতিবার দিনই জলিলের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই এলাকার কিছু মাতাব্বর ও অভিযুক্তদের সহযোগিতার আশ্বাস ও সঠিক বিচারের দেয়ার কথা জানিয়ে স্থানীয় নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা কবরস্থানে দাফন করেন।
এরপর থেকে জলিলের পরিবারকে কোন সহযোগিতা না করে উল্টো নানা ধরণের হুমকির শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারের।এ ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে দিনমজুর আব্দুল জলিলের হত্যার বিচার ও তার মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের দাবিতে রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভূঞাপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপি মানববন্ধন করেছেন জলিলের স্ত্রী-সন্তান তার ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজসহ বড় নলছিয়া গ্রামবাসী।
এসময় ভুক্তভোগী জলিলের স্ত্রী বুলবুলি তার স্বামী হত্যার বিচার ও লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।হতদরিদ্র জলিলের স্ত্রী বুলবুলি জানান,আমার স্বামী স্থানীয় লোকজনদের সাথে নৌকাযোগে খড় (গো-খাদ্য) কেনা-বেচা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।
সম্প্রতি গেল মাসের ৬ আগস্ট শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে বড় নলছিয়া গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে হাফেজ (৪৫),আব্দুলের ছেলে মিজানুর (২৫),রুস্তমের ছেলে নূর ইসলাম (৩০),সুরমানের ছেলে শাকিল (২৮),ইউছুফের ছেলে জহির (২৮), জনুর ছেলে জাহাঙ্গীর (৩৮),জানির ছেলে পরবত (৩৫),চেরাগ আলীর ছেলে লাল চাঁন (৩৩) আমাদের বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে খড় কেনা-বেচা করতে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে সঙ্গে নিয়ে যায়।
এসময় আমার স্বামী (জলিল) তাদেরকে বলেন-আমি তো গতকালই তোমাদের বলে দিয়েছি আমি আজকে খড়ের কাজে যাব না।পরে তারা একপর্যায়ে জোর করে আমার স্বামীকে তারা নিয়ে যায়।আমাদের কোন মোবাইল ফোন না থাকায় আমার স্বামী (জলিল) বা তাদের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনি।৫দিন পর বুধবার এক মোবাইল নাম্বার থেকে জানায় আমার স্বামী খড় বিক্রি করতে সিরাজগঞ্জে জেলার চৌহালী বাজারে গেছে।
এর পরের দিন বৃহস্পতিবার হাফেজের স্ত্রী আমার বাড়িতে এসে আমাকে জানায় তোমার স্বামী পানিতে ডুবে মারা গেছে।এ সংবাদে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।পরে আমার দেবর মুসা ও জাহাঙ্গীর তাঁর খোজ নেয়ার জন্য সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালীর খগেন ঘাটের দিকে রওনা দেয়।ভোর রাতের দিকে আমার স্বামীর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে।আমার স্বামীর লাশ বাড়িতে আনার পর তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন দেখি।
এরপর এ ঘটনায় ভূঞাপুর থানা পুলিশকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।কিন্ত আসামীরা জোর করে তার লাশ দাফন সম্পন্ন করে।আমার মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক হলে ভূঞাপুর থানায় আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের আবেদন করি ভূঞাপুর থানায়।কিন্তু ভূঞাপুর থানা পুলিশ মামলাটি গ্রহণ না করে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানায় মামলা দায়েরের কথা বলে।আমার বিশ্বাস আসামিদের পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।
পরবর্তীতে হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য আসামীদের নাম উল্লেখ করে টাঙ্গাইল বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।পরে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি ভূঞাপুর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।আমি আমার স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল ওহাব সাংবাদিকদের জানান,টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ আদালত মামলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে সমস্ত তথ্যাদি চেয়েছে তা সংগ্রহ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবো।