নওগাঁর নিয়ামতপুরে ৬ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করতে গিয়ে সুলতানা বেগম (৪০) নামের এক নারী প্রভাবশালীদের দ্বারা লাঞ্চিত হয়েছেন। গত ২৮ জানুয়ারী উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ছাতমা গ্রামে এ লাঞ্ছিতের ঘটনাটি ঘটে। জমি সংক্রান্ত এই বিরোধের জেরে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বোরো আবাদ। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা হলেও এখনো কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্কে দিন পার করছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
নিয়ামতপুর থানায় মামলা সূত্রে জানা গেছে, জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ছাতমা গ্রামের সুলতানা বেগম ওই গ্রামের প্রায় ৬ বিঘা আবাদি জমি দীর্ঘদিন যাবত পৈত্রিক সূত্রে ভোগদখল করে আসছিলেন। চলতি মৌসুমে জমিটি হালচাষ করে গত ২৮ জানুয়ারী সেখানে শ্রমিক দিয়ে বোরো ধান রোপন করছিলেন তিনি। বোরো ধান রোপনের এক পর্যায়ে একই গ্রামের আবুল কালামসহ ৮জন হঠাৎ সেখানে শ্রমিকদের বাঁধা দেয়।
এরপর সেখানে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সুলতানা বেগমকে জখম করে তারা। এসময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে সুলতানা বেগমকে গুরুত্বর অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরপর গত ২ ফেব্রুয়ারী তার ভাই শাহিন আলম থানায় এজাহার দাখিল করে। উল্লেখ্য যে, গত বছর জমিটি চাষাবাদ নিয়ে আবারো বিরোধ দেখা দিলে গত ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারী নওগাঁ অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।
যার মামলা নং-৯৬ পি/২০২১(নিয়াঃ) এর প্রেক্ষিতে গত ২০২১ সালের ২৬ মার্চ জমিটির উপর স্থিতিঅবস্থা জারী করেন বিজ্ঞ আদালত। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রাজ্জাক ও বাক্কার বলেন, জমিটি দীর্ঘদিন যাবত সুলতানা বেগম ভোগদখল করে আসছেন। কিছুদিন আগেই হালচাষ করে জমিটি বোরো আবাদের উপযুক্ত করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে চারা রোপন করতে যাওয়া মাত্রই ওইদিন লাঠি, কাস্তে এবং লোহার রেঞ্জ দিয়ে তার উপর সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালানো হয়।
ঘটনার পরপর আবারো দ্বিতীয় দফায় তারা সুলতানা বেগমের ভাইয়ের উপর হামলা চালিয়েছে। গ্রামে বিষয়টি নিয়ে এক প্রকার থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শিশু-কিশোর ও যুবকরা ভয়ে বাহিরে বের হতে পারছে না। একই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নুরনবী বলেন, ওই জমির বাটোয়ারা মামলাসহ যাযতীয় বিষয়ে জেলা জজ কোর্টের চারজন বিজ্ঞ আইনজিবীর মতামত নেওয়া হলে আইনজিবীগণরা বাটোয়ার মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউকে জবর দখল করা থেকে বিরত থাকার মতামত প্রদান করেছে। ভূক্তভোগীর ছোট ভাই শাহিন আলম বলেন, জমিটি আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি।
পৈত্রিক সূত্রেই এটি আমরা পেয়েছিলাম। দীর্ঘ বছর যাবত ওই জমিতে আমার বোন ফসল আবাদ করে আসছে। এটি গ্রামের একটি মহল অবৈধভাবে দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালত থেকেও বলা হয়েছে রায় না হওয়া পর্যন্ত যার দখলে আছে সেভাবেই থাকবে জমিটি। কিন্তু তারা সেটি মানছে না।
আমার বোনের উপর হামলা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। গত ৬ ফেব্রুয়ারী ওই জমিতে আবারো আমি ধান রোপন করতে গেলে তাদের বোনদের পাঠিয়ে আমার উপরে হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও আ’লীগ নেতা আজাদ হোসেনের মদদে এসবকিছু ঘটছে। আমরা পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না।
দ্রুত তাদের গ্রেফতারের দাবী জানান তিনি। সম্পত্তির দাবীদার আবুল কালামের বোন আদরী বলেন, বিবাদমান ওই সম্পত্তি গত ২০/৩০ বছর যাবত সুলতানা বেগমরা ভোগদখল করে আসছিল। যেহেতু ওখানে মোট পৌনে ৭বিঘা জমির মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ বিঘা জমি পৈত্রীক ও ক্রয়সূত্রে মালিক আমরা। তাই আমাদের জমি বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ওই জমি আর দখল করতে দেওয়া যাবে না।
এতোদিন যেহেতু তারা অবৈধভাবে জমিটি ভোগদখল করে এসেছে, এখন জমিটি অনাবাদি হয়ে পড়ে থাক। নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আজাদ হোসেন বলেন, ওই জমিটি কখনোই সুলতানাদের দখলে ছিলো না। সুলতানারাই জমিটি জবরদখলের চেষ্টা করছে। আর বিবাদমান সম্পত্তিতে আমার কোন অংশ নেই। তাদের অন্য একটি দাগের জমিতে আমার মায়ের অংশ রয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়ামতপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) জাহিদ বলেন, মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এই মামলার ৫ জন আসামী জামিনে রয়েছে। মেডিক্যেল সার্টিফিকেট পাওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।