শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের প্রচন্ড ভীড় লক্ষ করা গেছে। সরকারী ছুটি থাকায় অবসরে একটু আনন্দ পাওয়ার আশায় মেলায় সকাল থেকেই ভীড় জমাচ্ছেন। বেচাবিক্রিও ভাল লক্ষ্য করা গেছে। ক্লান্ত, ক্ষুর্ধার্ত দর্শনার্থীরা খাবারের দোকানগুলোতে ভীড় করতে দেখা গেছে। বেচাবিক্রি ভাল, হোটেল, রেস্টুরেন্টের মালিকরাও খুশি।
বাণিজ্য মেলায় পরিবেশ সম্মত খাবার স্টলে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। দেশিয় খাবারের চাহিদা বেশি। তবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ তৎপর থাকায় মেলায় নিয়মনীতি মেনেই খাবার স্টলের মালিকরা খাদ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনিয়ম পেলেই স্টল মালিকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
মেলার খাবার স্টলগুলোতে চিকেন বিরিয়ানী, মাটন কাচ্চি, বিফ কাচ্চি, ফ্রাইড চিকেন, চিকেন শাসলিক, চিকেন চাপ, চিকেন গ্রীল, বটি কাবাব, ফালুদা, জুস, কফি, ভাত, মাছ, ডাল, সবজি, মাংস, লাচ্ছি, নুডলস, পানীয়, মাটন হালিম, ফুসকা, চটপটি, পরটা, কাবাব, আমেরিকান চপসি, খিচুরি, থাইস্যুপ, রুটি, লুচিসহ সুস্বাদু খাবার রয়েছে। লুচি আর চিকেন চাপের চাহিদা বেশি।
বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। তবে মেলার কর্মজীবীরা ভাত ও মাছ খেতে পছন্দ করছে। স্টলের আশেপাশে প্রতিনিয়ত দফায় পানি ছিটিয়ে ধূলামুক্ত করা হচ্ছে। পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ সম্মত থাকায় মেলার দর্শনার্থীরা এখানে নির্ভিঘ্নে স্বাচ্ছন্দে খাবার খাচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলায় দুপুরের পর থেকেই খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের চাপ বাড়তে থাকে। সময় বারার সাথে সাথে দোকানের কেনা বেচা বৃদ্ধি পায়।স্টলের সরবরাহকারীরা খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। কেউ রান্না করছে। কেউ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত। কেউবা গ্রাহকদের সেবায় নিয়োজিত।
কেউবা নেচে গেয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছে। সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রতিটি খাবার দোকান জমজমাট হয়ে উঠে। অনেকেই রাতের খাবার বাণিজ্য মেলা থেকেই সেড়ে যাচ্ছেন। সন্ধ্যায় দোকানে বসার স্থান নেই। কেউবা দোকানে বসেই খাচ্ছেন। কেউবা দোকানের সামনে বসে খাচ্ছেন। আবার কেউবা খোলা আকাশের নিচে বসে খাবার খাচ্ছেন। কেউবা দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছেন। খাবার দোকানগুলোতে গেলে মনে হবে মেলার দর্শনার্থীরা যেন খাবার খেতেই মেলায় এসেছেন।
খাবার মানসম্মত ও ন্যায্য মূল্য হওয়ায় খাবার স্টলগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। শিশু, কিশোর, নারী-পুরুষ সবাই মেলার স্টলগুলোতে খাওয়ার জন্য ভিড় করছে। মাটির পাত্রে স্পেশাল চায়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া আরও ভিড়। িবাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত হোটেল অবকাশের উপ ব্যবস্থাপক খান মোঃ ফয়জুল করিম বলেন, নির্ধারিত খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ মেনেই খাবার ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে।
মেলার স্টলগুলোতে মানসম্মত ভেজাল মুক্ত দেশীয় খাবারের চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন বিজয়-৭১ এর মালিক শফিকুল ইসলাম। জান্নাত তেহেরির মালিক সাগর মিয়া বলেন, দুপুর ও রাতের খাবার হিসেবে মেলার দর্শনার্থীরা তার দোকানে ভিড় করছে। পূর্বাচল রয়েল ফুডের মালিক আলহাজ্ব মোতাহার হোসেন নাঈম বলেন, চিকেন চাপ ও লুচি-রুটির চাহিদা বেশি। দাম কম। তাই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় এখানে লেগেই থাকে।
মি.বাইটের মালিক ইঞ্জিনিয়ার খোকন আহমেদ বলেন, দেশিয় পদ্ধতিতে রান্না করা খাবার ভেজালমুক্ত থাকায় ভাত, মাছ ও সবজির বেশ চাহিদা। মেলার কর্মজীবীরা এখানে স্বাচ্ছন্দে ১০০টাকা প্যাকেজে ভাত, মাছ, সবজি ও ডাল খেতে পারছে। টেস্টি ট্রিটের বিক্রয় প্রতিনিধি শরীফ ভুঁইয়া বলেন, আইসক্রিম ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার শিশুদের আকৃষ্ট করছে। শিশুদের পছন্দের খাবার হিসেবে তাদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও খাদ্য গ্রহণ করছে।
ব্যাংকারস ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্টের বিক্রয় প্রতিনিধি ইমন মিয়া বলেন, শহরের তরুণ দর্শনার্থীদের পছন্দ ফাস্টফুড। খাদ্যে স্পেশাল ডিসকাউন্ট থাকায় এখানে প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার মিরপুর থেকে আসা বিশ্ব বিদ্যালয় পড়ুয়া সালমা ইসলাম বলেন, খাবারের মূল্য ন্যায্যমূল্য ও পরিবেশ সম্মত হওয়ার মেলার খাবার স্টলে বসেই খাদ্য খেয়েছি। নারায়ণগঞ্জের গঙ্গানগর থেকে আসা গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়েই মেলায় ঘুরেছি।
স্টলের খাবার সুস্বাধুু হওয়ায় আমরা রাতের খাবার এখানেই সেড়েছি। গাজীপুরের পুবাইল থেকে স্বপরিবারে মেলায় এসেছেন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। শিশু কিশোরদের পছন্দের আইসক্রিম তারা খেয়েছেন। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা বলেন, পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহার বিধি, বিক্রয়মূল্য, উৎপাদন, প্যাকেটজাতকরণ ও মেয়াদ উর্ত্তীণের তারিখ যথার্থ হয়েছে। তবে খাদ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করা খাবার তৈরি করায় গত ১৩ দিনে বিভিন্ন সময়ে ছয়টি খাবার স্টলকে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, খাবার স্টল প্রথমে ১২ টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীদের খাবারের দোকানের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ও দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সরকারী নিয়মানুযায়ী আরও ছয়টি খাবার স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।