1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
গৌরব-ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাফল্যের শত বছরে ফেনী সরকারি কলেজ
বাংলাদেশ । বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

গৌরব-ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাফল্যের শত বছরে ফেনী সরকারি কলেজ

কামরুল হাসান ছিদ্দিকি :
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১
  • ১০৪১ বার পড়েছে

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ফেনী জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ খ্যাত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফেনী সরকারি কলেজ।দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।১৯১৮ সালে প্রথম কলেজটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সেটি পুরোদস্তুর বাস্তবায়িত হয় ১৯২২ সালে।বর্তমানে ইতিহাস-ঐতিহ্যে আর সাফল্যে ভরপুর এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রার পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না।

ফেনী অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে সকলের কাছথেকে উত্তোলনকৃত চাঁদার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপিত হয়।পরবর্তীতে নোয়াখালী জেলা বোর্ড,ততকালীন স্থানীয় জমিদার ও প্রভাবশালী পরিবারগুলোর দেওয়া মোটা অংকের অর্থ ও জায়গায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।১৯২২ সালে খান বাহাদুর বজলুল হক একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন এবং তখন থেকেই মূলত এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়।

কলেজের জন্মলগ্নে প্রথম গভর্নিংবডির সদস্য ছিলেন মরহুম খান বাহাদুর আবদুল আজিজ,মরহুম খান সাহেব মৌলভী বজলুল হক,মরহুম মৌলভী আব্দুল খালেক,মরহুম মৌলভী হাছান আলী,মরহুম মৌলভী আবদুস ছাত্তার,সর্বপ্রয়াত শ্রীরমণী মোহন গোস্বামী,মহেন্দ্র কুমার ঘোষ,কালীচরণ নাথ,শ্রীগুরু দাস কর, শ্রীকালিজয় চক্রবর্তী,এনায়েত হাজারী,কলেজ প্রতিষ্ঠানকালীন অধ্যক্ষ বীরেন্দ্র ভট্টাচার্য এবং তৎপরবর্তী অধ্যক্ষ অম্বিকাচরণ রক্ষিত রায়বাহাদুর প্রমুখ।

কমিটির প্রথম সভাপতি ছিলেন ফেনীর তখনকার মহকুমা প্রশাসক জনাব আকরামুজ্জামান খান এবং প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন মরহুম মৌলভী আব্দুল খালেক।ততকালীন সময়ে সারা ভূ-ভারত জুড়ে অসহযোগ আন্দোলন,খেলাফত ও স্বরাজ আন্দোলন এবং বিশ্বযুদ্ধোত্তর অস্থিতিকর পরিস্থিতিরর মধ্যেও উদ্যোক্তাগণ ফেনীতে একটি উচ্চশিক্ষা বিদ্যাপীঠ স্থাপনের প্রচেষ্টায় তাদের ব্রত থেকে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।

কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ততকালীন সময়ে বৃহত্তর নোয়াখালীতে (ফেনী,নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা) এটিই ছিল উচ্চশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান।বর্তমান কলেজের আয়তন ৯.২৫ একর।অবশ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সকলের সার্বিক সহযোগিতায় ও ছাত্র বেতনে আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকে কলেজটি।

১৯২৬ সালের ১০ আগস্ট তদানিন্তন ব্রিটিশ ভারতের মহামান্য গভর্নর স্যার হিউ ল্যান্সডাউন স্টিফেনশন কে সি আই,এস আই সি এস কলেজের মূল ভবনের দোতলা উদ্ভোধন করেন।১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ সৈন্যরা ফেনী কলেজে অবস্থান নেয়।এ সময় ফেনী কলেজ ভবন যুদ্ধকালীন মিত্রবাহিনীর সামরিক হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় কলেজের কার্যক্রম অস্থায়ীভিত্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ফেনী কলেজ নামে স্থানান্তরিত হয় এবং যুদ্ধ শেষে কলেজটি আবার স্ব-স্থানে ফিরে আসে।

তারপর থেকে ধীরে ধীরে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে রুপান্তরিত হয়ে উঠে৷একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ফেনী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছিল গৌরবোজ্জল ভূমিকা।প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফজলুল হক,প্রাক্তন ভিপি মৌলান সৈয়দ ওয়ায়েজ উদ্দিন,বীরোত্তম মেজর সালাউদ্দিন মমতাজ,আবু তাহির প্রমুখ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কর্ণেল (অবঃ) জাফর ইমাম বীরবিক্রম,প্রাক্তন জি এস ও এমপি জয়নাল আবেদীন হাজারী,প্রাক্তন ভিপি ও এমপি অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন,প্রাক্তন ভিপি জাফর উল্লাহ খান,কমান্ডার মর্তুজা,মোতালেব,কামাল,মোশারফ,কাজী নুরুন নবী,শাজাহন,মোঃ মুছা মিয়া,প্রাক্তন ডিসি আবু তাহের ভূইয়াঁ প্রমুখ ছিলেন ফেনী কলেজের ছাত্র।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র এক বছর পর ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ফেনী কলেজে একই বছরের ৮আগস্ট বাংলা,ইংরেজি,আরবি,ফারসি,সংস্কৃত,গণিত,ইতিহাস ও যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে ১৪৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আই.এ ক্লাস চালু হয়।

শুরু থেকেই উন্নয়নের লক্ষ্যে দৃঢ়নিষ্ঠ অগ্রগতি অর্জিত হওয়ায় সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ১৯২৪ সালে কলেজটিকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আরবি ও ইতিহাস বিষয়ে অনার্সসহ ডিগ্রী পর্যায়ে বি.এ কোর্সে পাঠদান অনুমোদন করে।

কলেজটিতে ১৯৪১ সালর আই.কম কোর্স,১৯৪৭ সালে আই.এস.সি কোর্স ১৯৬২ সালে বি.কম কোর্স,১৯৬৪ সালে বি.এস.সি কোর্স চালু হয়।নব পর্যায়ে অনার্স কোর্স প্রবর্তিত হয় ১৯৯৭ সালে।প্রথম পর্যায়ে বাংলা,রাষ্ট্রবিজ্ঞান,অর্থনীতি,গণিত,সমাজকর্ম,ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান চালু হয়।২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ইসলামের ইতিহাস ও রসায়ন বিষয়ে এবং ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ইংরেজি ও প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে অনার্স চালু হয়।

২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে পদার্থবিদ্যা,উদ্ভিদবিদ্যা ও ইতিহাস বিষয়ে এবং ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়।বর্তমানে ফেনী সরকারী কলেজে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স,ডিগ্ৰী ও মাস্টার্স কোর্সে শিক্ষা কার্যক্ৰম পরিচালিত হয়।

১৪৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পথচলা শুরু করা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার।ফেনী ছাড়াও পাশ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী,কুমিল্লা,লক্ষ্মিপুর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীরা দূরদূরান্ত থেকে জ্ঞান আহরণের জন্য এই বিদ্যাপীঠে ছুটে আসে।১৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স,১০টি বিষয়ে মাস্টার্স ১ম পর্ব (প্রিলিমিনারি) ও ৭টি বিষয়ে মাস্টার্স শেষ পর্ব কোর্স চালু রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে।

বিভাগীয় কার্যালয়সহ একাডেমিক ভবন,কলা ভবন,বিজ্ঞান ভবন,বাণিজ্য ভবন,অনার্স ভবন,একাডেমিক ও পরীক্ষা ভবন,মসজিদ,ছাত্রাবাস, নির্মাণাধীন ছাত্রীনিবাস,বিএনসিসি,রোভার স্কাউট,রেডক্রিসেন্ট,ক্রীড়া অফিস সহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ,পাঠাগার,অডিটোরিয়াম,বোটানিক্যাল গার্ডেন,অম্বিকাচরণ রক্ষিত রায় বাহাদুর উদ্যান,ক্যান্টিন সহ শিক্ষণকার্য মাধ্যম রয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কলেজটি সর্বত্র তার দ্যুতি চড়িয়েছে।বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি,বেসরকারি সহ রাজনৈতিক অঙ্গনের শীর্ষ পর্যায়ে পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে এই কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।২০১২ সালে এইচ.এসসিতে এই কলেজে গড় পাশের হার ছিল ৮২.৩১% তন্মধ্যে জি.পি.এ-৫ পায় ১০৭ জন শিক্ষার্থী।

এছাড়াও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মেধাতালিকায় ১১তম স্থান লাভ করে কলেজটি।২০১৩ সালে এইচ.এসসি তে গড় পাশের হার ছিল ৮৩.৪৭% তন্মধ্যে জি.পি.এ-৫ পায় ১৩২ জন যা কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান লাভ করে।অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার অধিভুক্ত অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের কলেজগুলোর ৩১টি সূচকের ভিত্তিতে ২০১৫ সাল থেকে বেশ কয়েকবার র‌্যাংকিংয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কলেজগুলোর মধ্যে ফেনী সরকারী কলেজ ২য় ও ৩য় স্থান অর্জন করে।

বর্তমানে প্রফেসর বিমল কান্তি পালের হাত ধরেসামাজিক শৃঙ্খলা,সৌহার্দ্য,সঠিক শিক্ষা,সৃজনশীলতা,জ্ঞান,নৈতিকতা,দেশপ্রেম ও ধর্মীয় অর্থে উচ্চ মান জানানোর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের দেশ ও রাষ্ট্র গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে ফেনী সরকারি কলেজ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD