অব্যাহতভাবে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের পরিবারগুলো গত কয়েকদিন ধরে পানির মধ্যে ভাসছে।ঘরের মধ্যে পানি,উঠোনে পানি,রাস্তাঘাটসহ মাঠঘাটে অথই পানি।এরই মধ্যে স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা কচুরীপানার সঙ্গে সমান তালে ভেসে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ।
ফলে পানির মধ্যে বসবাসরত দুর্গত পরিবারের দুর্ভোগের সঙ্গে যোগ হয়েছে সাপ আতঙ্ক।দিশেহারা হয়ে পড়ছে বানভাসি মানুষ।শুক্রবার উপজেলার পদ্মা নদীতে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের বানভাসি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপের উপদ্রব।ইতোমধ্যে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের রাহাত (৩৭) ও আলেকজান (৪৮) নামে দুই ব্যক্তিকে সাপে দংশন করেছে।তারা স্থানীয় ওঝার কাছে ঝাড়ফুক নিয়ে সেরে উঠেছেন।উপজেলার চরাঞ্চলের এলাকাগুলো ঘুরে জানা যায়, উপজেলার রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের ফসলি জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২ হাজার পরিবার পানির মধ্যে ভেসে ভেসে জীবনযাপন করছে।
ওই ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় পদ্মা নদীর পানি সরাসরি আঘাত হানছে বসতি পরিবারে।প্রতিটি বানভাসি পরিবারের বসত ঘরের মধ্যে বাঁশের চালা তৈরি করে নারী-পুরুষ,শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধরা দিনযাপন করছে।চরবাসী তাদের নিত্যদিনের হাটবাজার ও পারিবারিক কার্যাবলী নৌকা ও ট্রলারযোগে সম্পন্ন করছেন।
মসজিদগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মুসল্লিরা নৌকা,ভেলা বা বাড়িতে বাশের মাচা বেঁধে নামাজ আদায় করছেন।ওই ইউনিয়নে কর্মহীন হয়ে পড়েছে অন্তত ১০ হাজার দিনমজুর।দুর্গত পরিবারগুলো দিনে এক বেলা বা আঁধা বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। বানভাসি পরিবারের টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরাঞ্চলে চলছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
এতে বেশিরভাগ পরিবার পদ্মা নদীর পানি পান করে চলেছেন।অনেক পরিবারের সদস্যদের সর্দি-জ্বরসহ ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব লেগে আছে।জানা যায়,রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী সংলগ্ন চর হলদার পাড়া,ঠাকুরপাড়া,সৌদিবাজার এলাকাগুলো নিম্নাঞ্চল হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
গত কয়েকদিনে কচুরীপানার সঙ্গে ভেসে আসা সাপ আতংকে নির্ঘুম রাত কাটছে ফিলিপনগর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের মানুষের।প্রতিদিন শত শত সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলছে এলাকাবাসী।পানির চেয়ে এখন মানুষের বড় আতংক বিষধর সাপ।ফিলিপনগর ইউনিয়নের একাধিক গরুর খামার মালিক বলেন,পদ্মার চরাঞ্চলের সব জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে।
একদিকে জীবন বাঁচানোর তাগিদ অন্যদিকে যত্রতত্র সাপের উপদ্রব।আর রাত হলেই জেগে থাকতে হয় চোর-ডাকাত আতঙ্কে।সব মিলিয়ে চলতি বন্যায় চরবাসীর ভয়াবহ সময় কাটছে।আওয়ামীলীগ নেতা সোহেল রানা ওরুশ কবিরাজ জানান,দেশে কতই না উন্নয়ন হয়েছে।
কিন্তু অবহেলিত এ পদ্মার চরে কোন দূর্যোগ কালিন আশ্রয়কেন্দ্র(শিবির) সাথাপন করা হয়নি।এ অঞ্চলে মাটি দিয়ে উচু করে একাধিক দূর্যোগ কালিন আশ্রয়কেন্দ্র(শিবির) স্থাপন করলে বন্যার সময় গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবেনা বাসভাসি মানুষের।
তিনি আরও জানান,গত কয়েকদিন ধরে চরাঞ্চল ও পদ্মাপাড়ের মানুষ সাপ আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।সাপে কাটলে আদিকালের ওঝা বৈদ্যদের চিকিৎসার উপর নির্ভর করে থাকতে হয়।উন্নত প্রযুক্তির যুগেও এ অঞ্চলের সাপে কাটা রুগীদের নিয়ে দৌড়াতে হয় অর্ধশত কিলোমিটার দুরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে।
তিনি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংসদের দৃষ্টি আকর্শন করেছেন যাতে অতি দ্রুত দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাপে কাটা চিকিৎসার ভ্যাক্সিন সরবরাহ করে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা গ্রহন করেন।বানভাসি নূরইসলাম জানান,এলাকার সব মাঠের জমি ডুবে গেছে।ফলে এলাকায় কোনো কাজ নেই।
তাই টাকার অভাবে বাজার করতে না পেরে স্ত্রী,সন্তানদের নিয়ে কোনো মতে নুনভাত খেয়ে বেঁচে আছে তার পরিবার।আরেক বাসিন্দা রোকেয়া খাতুন বলেন,পানিতে বসতঘরগুলো প্লাবিত হয়েছে।ফলে পরিবারের শিশু বৃদ্ধ ছাড়াও গরু-ছাগল হাঁস-মুরগি নিয়ে আরও বিপাকে রয়েছে বানভাসিরা।
তিনি বলেন,মানুষের রোগবালাই হলে মুখে বলতে পারে কিন্তু গৃহপালিত পশু পর্যাপ্ত খাবার ও সঠিক চিকিৎসা না পেলে সবার অজান্তেই মারা যাবে।তাই বাড়ির গরু ছাগল অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে এতে আরো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি।
পদ্মার চরের ৪ ইউপি চেয়ারম্যানগণ বলেন,বানভাসি পরিবারের দুর্ভোগ তাৎক্ষণিকভাবে আমরা প্রশাসনকে অবগত করে চলেছি।অল্প দিনের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও পানি সংরক্ষণের জন্য ক্যান,খাবার স্যালাইনসহ ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন,ফেসবুক মাধ্যমে জানতে পেরেছি পদ্মাপাড়ের মানুষের মাঝে সাপ আতংক বিরাজ করছে আমি তাৎক্ষনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সাপে কাটা চিকিৎসার ভ্যাক্সিন হাসপাতালে পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখার জন্য বলেছি।
আমি সব সময়ই উপজেলার রামকৃঞ্চপুর,চিলমারী,ফিলিপনগর,মরিচা ইউনিয়নসহ দুর্গত এলাকা কড়া নজদারিতে রেখেছি।ইতোমধ্যে ১০মেট্রিকটন চাউল ও ৩লক্ষ টাকা বরাদ্ধ পেয়েছি যা বন্যাদুর্গত এলাকায় বন্টনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।