মেহেদীর বয়স ছাব্বিশ, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। অভাবের সংসার। মা-বাবার সংসারের হাল ধরতে উপার্জনের আশায় চলে যান চাকরিতে। চাকরি নিতে অর্থকড়ি খরচ হয়। অর্থ জোগাতে একেবারে পথে বসার অবস্থা বাবা মায়ের। তবুও অনেক স্বপ্ন তাদের।ছেলে প্রতিষ্ঠিত হলে সংসারে অভাব ঘুচবে একদিন। তাদের আশা পূরণও হয়েছিল। পুত্র মেহেদীর ভাগ্যে ঠিকই চাকরি জুটে। এখন সংসারে সুখের মুখ দেখবে মেহেদীর বাবা-মা। কিন্তু না, এক বুলেটেই মেহেদীর বাবা-মায়ের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে।
আর এ হতভাগ্য বাবা হলেন ঘাটাইলের ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে আনেহলা (পল্টন মোড়) গ্রামের আব্দুল হানিফ। তার ছেলে পুলিশ কনস্টেবল মেহেদী। গত ১৪ মাস আগে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। ট্রেনিং শেষ করে ৮ মাস ধরে চাকরি করছিলেন। শুক্রবার সাড়ে ৩টার দিকে তার বাবা খবর পান তার পুত্র মেহেদী বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।জানা যায়, ঘাটাইলের আনেহলা ইউনিয়নের আনেহলা পল্টন মোড় এলাকার আব্দুল হানিফের বড় পুত্র মেহেদী। তিনি রাজধানী ঢাকা বেইলি রোডের এসপি মারুফ সরদারের বাসভবনের প্রধান ফটকে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন। শুক্রবার বিকালে দায়িত্বরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা এর কোনো কিছু বুঝতে পারছে না নিহতের পরিবার।
ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে নিহতের বাবা বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে একটু সান্ত্বনা পেতে চাই।রোববার নিহতের বাড়ি গিয়েও দেখা গেছে মায়ের বুকফাটা কান্না। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। নির্বাক হয়ে পড়েছে মা মরিয়ম বেগম। প্রতিবেশীরা এসে তাদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু পুত্র শোকে একেবারে পাথর হয়ে গেছেন।মা মরিয়ম বিলাপ করে বলছিলেন, আমার ছেলে ক্ষেতে চিকন ধান গাড়তে কইছিল। যাতে বিয়ের মধ্যে চিকন ধান কিনতে না হয়। এ কথা বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যান তিনি। কান্নায় সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। প্রতিবেশীর কোনো সান্ত্বনাই যেন মায়ের কান্না থামছে না।
পরিবারের দাবি এলাকার মধ্যে সভ্য ও শান্ত স্বভাবের এ ছেলে। নিহতের বাবা আব্দুল হানিফ বলেন, ঘটনার পৌনে ১ ঘণ্টা আগেও হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওকলে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা হয়। প্রতিদিন এভাবেই খোঁজখবর নেয়। হঠাৎ এ ঘটনা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।তিনি বলেন, আমার তেমন জমি জিরাত নাই। আমি গবাদিপশুর চিকিৎসা করি। কোনোমতে সংসার চলে। একমাত্র ভরসা ছিল ওর ওপর। আরেক ছেলে মাসুদ রানা দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার ভবিষ্যৎও অন্ধকার হয়ে গেল।নিহতের স্বজনরা জানান, শনিবার লাশ আসার পর হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। ওই দিনই সন্ধ্যায় স্থানীয় পাড়াগ্রাম গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।