একজন দখলবাজ, দুষ্কৃতকারী, নেশাখোর, সুদের কারবারী প্রতারকের বহুমুখী অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকার সাধারণ মানুষ। গ্রামের প্রায় সবাই তার রোষানলের শিকার হয়ে চরম হয়রানী আর নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে। বিশেষ করে যারাই তার অপকর্মের প্রতিবাদ করেছে বা তার পক্ষে সায় দেয়নি মিথ্যে মামলা আর হামলায় তাদের অবস্থা শোচনীয়।
অবৈধ অর্থের দাপটে সমাজের কর্তৃত্ববাদী লোকদের নিজের আয়ত্বে রেখে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সে। ফলে দিন দিন তার দুর্বৃত্তপনা বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী অসহনীয় নরক যন্ত্রণায় নিপতিত হয়ে করুণ পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। অপরাধ করেও বুক ফুলিয়ে নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বিছানোসহ প্রভাব বিস্তার করে প্রতারণায় আচ্ছন্ন করছে সমাজকে।
এমন অমানবিক ঘটনার ক্ষেত্রস্থল নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বোতলাগাড়ী মাঝাপাড়া গ্রাম। ওই গ্রামের মানুষেরা পৈশাচিক অরাজকতা থেকে রেহাই পেতে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বুধবার (১ মার্চ) সরেজমিনে গেলে এলাকার সর্বস্তরের লোকজন নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা জানান, গ্রামের অত্যন্ত মহৎ ব্যক্তি ছিলেন আলহাজ্ব শেখ মফিজ উদ্দীন। ধনাঢ্য হলেও তিনি ছিলেন বেশ ধর্মান্তরকরণ। নিঃসন্তান হওয়ায় তিনি তাঁর সব সম্পদ সমাজ সেবার জন্য ওয়াকফ করে দেন ট্রাষ্টের নামে। যার মোতায়াল্লী করেন আপন ভাতিজা শফিকুল ইসলামকে।
আর শুধু বসত ভিটাটুকু দিয়ে যান পালিত ছেলে আতিয়ারকে। কিন্তু আতিয়ার খুবই লোভী ও ধুরন্ধর প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় সম্পত্তি ওয়াকফ করা মেনে নিতে পারেনি। তবে জীবিতকালে তা প্রকাশ করার সাহস পায়নি। কিন্তু মফিজ উদ্দীনের মৃত্যুর পরই কৌশলে ট্রাষ্টের মোতায়াল্লীর পদ বাগিয়ে নেয় সে। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত নিজের পছন্দের লোজজনকে দিয়ে নামকাওয়াস্তা কমিটি বানিয়ে ওয়াকফ সম্পত্তি কুক্ষিগত করে ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করছে।
এলাকার মৃত শেখ কফিল উদ্দীনের ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, বড় আব্বা (শেখ মফিজ উদ্দীন) আমাকে লিখিতভাবে মোতায়াল্লী করে গেলেও কমিটিতে কখনই নেয়নি আতিয়ার গংরা। যে উদ্দেশ্যে আলহাজ্ব মফিজ উদ্দীন ওয়াকফ ও কল্যাণ ট্রাস্ট করা হয়েছে তা বিন্দুমাত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা। বরং কমিটির নামে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ৫ একর জমির সব ফসল লুটেপুটে খাচ্ছে। কোন হিসেব নাই। সামাজিক কর্মকাণ্ডও নাই। এমনকি ট্রাস্টের অধীনে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাও বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আতিয়ার নিজেকে মফিজ উদ্দীনের ছেলে পরিচয় দিলেও আসলে পালিত। পালক বাবা মায়ের প্রতি তার সামান্যতম শ্রদ্ধা নেই। চরম অকৃতজ্ঞ সে।সেকারণে বাবা মায়ের কবরটারও কোন যত্ন নেই। বাড়ির ড্রেন কবরের পাশ দিয়ে নিয়েছে এবং সেই ড্রেনে টয়লেটের খোলা সংযোগ দিয়েছে। যা দিয়ে প্রতিনিয়ত মলমূত্র প্রবাহিত করছে। আর কবরের পাশে আমাদের জমি দখল করে গরু-ছাগলের আস্তাচল বানিয়েছে। আমরা কবর সংষ্কার ও ড্রেন সরাতে চাইলেও বাধা দেয় এবং গালিগালাজ করে।
মৃত শেখ মফিজ উদ্দীনের আরেক ভাই শেখ জহির উদ্দীনের ছেলে মতিউল বলেন, আতিয়ার একজন প্রতারক। সে তার সেচপাম্প দেখাশোনার বিনিময়ে আমাকে তার জায়গায় ঘর করে দেয় এবং জমিটা লিখে দিবে বলে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু এখন অস্বীকার করে আমার অবর্তমানে জিনিসপাতি লুটপাট করে ঘর ভেঙে ফেলে দখলে নিয়ে আমাকে বিতারিত করেছে।
শফিকুলের স্ত্রী রুবিনা পারভিন বলেন, আতিয়ার সকলের চলাচলের জমির মাল্লি (আইল) দখল করে রাস্তা বানিয়ে গেট লাগিয়ে বন্ধ করে দিয়ছে। আমরা আমাদের জমিতে যেতে, চাষ করতে বা ফসল আনতে পারিনা। সে অত্যন্ত লোভী ও নোংরা। যেমন সুদখোর তেমনি মাদকাসক্তও। অন্যের জমি দখল করে পুকুর বানিয়ে তার পাড়ে মাদক আড্ডাখানা তৈরী করেছে। দিনে রাতে শহর থেকে অপরিচিত লোকজন আসে।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়। তার এই পুকুর লোক দেখানো। যা দেখিয়ে ব্যাংকের লোন নিয়ে সব টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি মাত্র। পুকুরে ৫ হাজার টাকার মাছও ছাড়ে নাই। অথচ বলছে ৩০ লাখ টাকার মাছ। এতটুকু জায়গায় কিভাবে এত মাছ থাকে? আসলে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের টাকা ফাকি দিতে নিজেই বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে। আর আমাদের উপর মিথ্যে দায় চাপিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার অপকৌশল করছে।
মৃত আব্বাস আলীর ছেলে সৈয়দ আলী বলেন, আতিয়ার শুধু দখলবাজ বা প্রতারকই নয়, লম্পটও। এলাকার অসহায় নারীদের বাগে ফেলে সতিত্ব কেড়ে নেয়। আমার মেয়ের দিকেও কুদৃষ্টি দিয়েছিল। আমাকে বলেছিল তার কাছে রেলওয়ের চাকুরে পাত্র আছে। আমার মেয়েকে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে আসলে সেই পাত্রের সাথে বিয়ে দিবে। আসলে সে একজন দুষ্টচরিত্র মানুষ।
একইরকম অভিযোগ করেন রফিকুলের স্ত্রী জয়তুন। তিনি বলেন, আমার ছোট মেয়ে বৃুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আতিয়ারের চেলা আবু সালে অত্যাচার করে তাকে নষ্ট করেছে। একারণে মেয়েটা গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং ১৬ মাস হলো একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছে। অথচ সালে পিতৃত্ব স্বীকার করেনা। কোন খোরপোশ দেয়না।
মামলা করায় আতিয়ার আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। গভীর রাতে ঘরে ঢুকে মারপিটও করে। তার প্রশ্রয়েই আবু সালেহ এই অকাম করেছে। এমনকি মেম্বরকে বলে মেয়ের প্রতিবন্ধী ভাতাও বন্ধ করে দিয়েছে। ঘরের পাশে গর্ত করে নোংরা পানির ডোবা বানিয়েছে। যার দূর্গন্ধে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।