ইলিশের প্রজনন রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘান নদীতে চষে বেড়াচ্ছে জেলেরা। তবে ইলিশ মাছ নয়, পাঙ্গাস পাওয়ায় আসায় সুতার গোল্টি জাল নিয়ে শত শত জেলে ছুটছে এখন নদীতে। ছোট সাইজের ইলিশের দাম কম হওয়ায় বড় পাঙ্গাস মাছে লাভ বেশী জেলেদের। কারণ বড় সাইজের প্রতিটি পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) মধ্য রাত থেকে জেলেরা নদীতে নেমেছে। সকাল ৭টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা মাছঘাটে গিয়ে দেখাগেল অধিকাংশ আড়তেই বড় সাইজে পাঙ্গাস মাছ। ইলিশ থাকলেও সাইজে খুবই ছোট। বড় সাইজের ইলিশ পাওয়াগেলে ডিম ছেড়ে দেয়ায় মাছের ওজন এখন কম।
হরিণাঘাটে কিছু সময় অবস্থান করে দেখাগেছে, আড়তগুলোতে জেলেদের ধরে আনা ইলিশ চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষণা কাজে নিয়োজিত লোকজন ডিম ছাড়ার পরে মাছের আকার আকৃতি পরীক্ষা করছেন। জেলেদের ধরে আনা বড় সাইজের অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম নেই। আবার অনেক ছোট সাইজের ইলিশের পেটেও ডিম আছে। তবে ওই সাইজের ইলিশের সংখ্যা কম।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে হরিণা ফেরিঘাটের এই মৎস্য আড়ৎ ১২ অক্টোবর থেকে গতকাল ২ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ছিলো। রাত ১২টার পর থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কেনাবেচা শুরু হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এই ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সেরাজুল শেখ জানান, ভোর থেকেই জেলেরা আড়তে বেশীরভাগ পাঙ্গাস মাছ নিয়ে আসছেন। কোন জেলে নিয়ে এসেছেন বাঘাইড়সহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ। আইড় ও পাঙ্গাস মাছের দাম একই রকম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০টাকা। তবে পাঙ্গাস ছোট সাইজের খুবই কম। প্রতিটি পাঙ্গাসের ওজন কমপক্ষে ১০-১৫ কেজি।
ছোট নৌকা নিয়ে ভোর ৪টায় নদীতে নেমেছেন উত্তর হরিণা গ্রামের জেলে শরীফসহ আরো ৩ জেলে। সকাল ৮টায় ঘাটে এসেছেন ইলিশ বিক্রি করতে। ৩ হালি ইলিশ বিক্রি করেছেন ১৪০০টাকা। তবে তাদের জ¦ালানি খরচ হয়েছে প্রায় ৭০০টাকা। দুপুরের পর আবার নামবেন।
গোল্টিজাল দিয়ে মাছ ধরেন সদরের হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের আল-আমিন ও জহির রাঢ়ী। আল-আমিন জানান, মধ্যরাতে তারা নেমেছেন মেঘনায়। প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০জন জেলে থাকেন। একবার নদীতে নামলে খরচ হয় প্রায় ৩হাজার টাকা। ইলিশ খুবই কম পাওয়া যায়। পাঙ্গাসের আসায় নদীতে নেমেছেন। কারণ গোল্টিজালে ইলিশ, পাঙ্গাসসহ সব ধরণের মাছ পাওয়া যায়।
জহির রাঢ়ী জানান, অভিযানের সময় এক শ্রেনীর জেলে নিষেধাজ্ঞা মানেনি। তারা অবাধে ইলিশ ধরেছে। এখন অভিযান শেষ হওয়ায় হাজার হাজার জেলে নদীতে। ভাগ্য ভালো হলে ইলিশ কিংবা পাঙ্গাস সবই পাওয়া যায়। মধ্যরাতে নেমেছি। আবার দুপুরের পরে নামা হবে।
একই ধরণের কথা জানালেন ওই গ্রামের জেলে খলিল গাজী ও হান্নান সৈয়াল। সব জেলেরাই এখন পাড়ে এসে জাল পরিস্কার ও পরবর্তীতে নদীতে নামার জন্য প্রস্তুত করছেন।
হরিণা ঘাটের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল জানান, ভোর থেকেই আড়তে বসে আছি। আমার যেসব জেলে আছে তারা এখনো আসেনি। তবে ইলিশের দাম বাড়েনি। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায়। ছোট সাইজের ইলিশের হালি ৫০০-৫৫০টাকা। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ খুবই কম। ছোট এবং বড় সাইজের ইলিশই বেশী পাওয়া যাচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, নদীতে পানি কমেছে। ২২ দিনের অভিযানও শেষ। কি পরিমান ইলিশ ডিম ছেড়েছে তা মৎস্য বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার তথ্য বের হলে জানাযাবে। তবে ইলিশ মাছ বারো মাসই ডিম ছাড়ে। তবে জেলা টাস্কফোর্স ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য গত ২২ দিন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।