নিজস্ব প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁঁয়ের বিষনাদী এলাকায় স্কুলের জমিদাতার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এঘটনায় জমিদাতার পরিবার নিরাপত্তাহীণতায় ভূগছে। এব্যাপারে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বিষনাদী এলাকার কান্দাপাড়া গ্রামের মৃত. সাহেব আলীর ছেলে মোঃ ইলিয়াস মোল্লা পৈত্রিকসূত্রে ৩০ শতাংশ জমি স্থানীয় ২৫ নং বিষনাদী সরকারী প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের নামে লিখে দেন, বর্তমানে স্কুলের নতুন কমিটিতে ইলিয়াস মোল্লাকে দাতা সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করলেও উক্ত বিদ্যলয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম তা মানতে নারাজ। এরপর থেকেই সে বিভিন্ন সময় ইলিয়াছ মোল্লাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউপি’র বিষনাদী এলাকার কান্দাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইলিয়াস মোল্লা তার পিতার মৃত্যুর পর একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েন। পিতার নিকট থেকে পাওয়া কিছু জমি এলাকার ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য ২৫ নং বিষনাদী সরকারী প্রার্থমিক বিদ্যালয়ের নামে লিখে দেন তিনি। আর সেই বিদ্যালয়ের কমিটিতেও তিনি দাতা সদস্য হিসেবে রয়ে যান। দীর্ঘদিন যাবত তিনি দাতা সদস্য হিসেবে থাকলেও স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহলের বর্তমানে এর বিরোধীতা করে আসছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দূর্ণীতিমূলক কর্মকান্ডে বিদ্যালয়ের বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম তার স্ত্রী মনিরা সুলতানাকে সাথে নিয়ে সেই কুচক্রীমহলের সাথে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন দূর্ণীতি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তারা বিগত ১০ বছর যাবৎ তাদের মন গড়া মত বিদ্যালয়ে আসেন এবং বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় অগ্রীম সই করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রি, গাছ বিক্রি ও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আয় থেকে নেয়া মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎসহ একাধীক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরূদ্ধে। আর এসব অবৈধ কর্মকান্ডের কেউ কোন প্রতিবাদ করলেই তাদের বিরূদ্ধে শুরূ হয় মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে ফাঁসানোর পাঁয়তারা। আর এমনই কিছু ঘটনার হয়রানীর শিকান হোন জমিদাতা ইলিয়াস মোল্লা ও তার স্ত্রী নিলুফা বেগম।
বর্তমানে ইলিয়াস মোল্লা তার পিতার মৃত্যুর পর থেকে একেবারেই অসহায় জীবণযাপন করছেন। এখন তিনি রিকশা চালিয়ে তার সংসার খরচ চালাচ্ছেন। তবে কি ইলিয়াছ মোল্লা রিক্সাচালক ও গরীব বলেই তাকে এধরনের অমানবিক ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে?
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ইতিপূর্বে অত্র এলাকায় গত ২০ নভেম্বর বুধবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী স্থানে স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ওই স্কুলের পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি আনিছুজ্জামান মুকুল ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়ে স্কুল মাঠ থেকে ওই দোকানগুলো সরিয়ে দেয় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম। এসময় স্থানীয় ৫-৭জনের একটি সন্ত্রাসী দল লাঠিসোটা নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম ও সহকারী শিক্ষক মনিরা সুলতানাকে পিটিয়ে আহত করে। পরে এ ঘটনায় স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম ও তার স্ত্রী মনিরা সুলতানা একটি কুচক্রীমহলে ইন্ধনে নীরিহ ইলিয়াছ মোল্লা, তার স্ত্রী নিলুফা বেগমসহ কয়েকজনের নামে সোনারগাঁ থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এলাকাবাসী আরও জানায়, মূলত বিষয়টি হলো বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি থেকে জমিদাতা নীরিহ ইলিয়াছ মোল্লাকে বাদ দেয়া। তাই তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে জমিদাতা ইলিয়াছ মোল্লাকে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। এদিকে নীরিহ ইলিয়াছ মোল্লা উল্লেখিত মিথ্যে মামলার হয়রানী থেকে রক্ষা পেতে আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসেন। জামিনের সংবাদটি মামলার বাদী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম গংও অবগত হয়। তবে তাদের ইচ্ছে ছিলো মিথ্যে মামলার আসামী ইলিয়াছ মোল্লা তাদের সাথে গোপনে আপোষ হবেন। কিন্তু জমিদাতা ইলিয়াছ মোল্লা গোপনে আপোষ মিমাংশায় যেতে রাজি নন। তাই এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা জমিদাতা ইলিয়াছ মোল্লার বাড়ীঘরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে আতংক সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যপারে জানতে জমিদাতা নীরিহ ইলিয়াছ মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার পিতা মারা যাওয়ার পর আমি আমার গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার কথা চিন্তা করে একটি বিদ্যালয়ের জন্য পৈতৃকসূত্রে পাওয়া জমি থেকে কিছু জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করি এবং আমি সেই বিদ্যালয়ের কমিটির একজন দাতা সদস্যও। দীর্ঘদিন ধরেই দাতা সদস্য হিসেবে আছি। কিন্তু স্থানীয় একটি কুচক্রীমহলের ইন্ধনে আমাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
তিনি অভিযোগে আরও জানান, বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম স্থানীয় একটি কুচক্রীমহলের ইন্ধনে আমাকেসহ আমার স্ত্রীর নাম উল্লেখ করে কিছুদিন পূর্বে ঘটে যাওয়া একটি মামলায় আসামী করা হয়। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ঘটনার দিন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমার স্ত্রী বাড়ীতে ছিলো এবং সে ঐ ঘটনার সময় বিদ্যালয়টির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম ও তার স্ত্রী মনিরা সুলতানার উপর হামলাকারীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও হামলা করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম সেদিনই অন্যের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে আমাকেসহ আমার স্ত্রী নামে থানায় মিথ্যে মামলা করেন। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। আমি এলাকায় কখনোই কোন খারাপ কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না বা কারো সাথেই আমার কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। তবুও আমার পরিবারসহ আমাকে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। আমি উক্ত মিথ্যে মামলা থেকে অব্যহতি নিতে আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসি। কিন্তু মামলার বাদীপক্ষ আমাকে গোপনে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মিমাংশা করার জন্য অনুরোধ জানায়। কিন্তু আমি প্রকাশ্যে সকলের উপস্থিতিতে ঘটনাটি মিমাংশা করার জন্য জানালেও তারা তা মানতে রাজী নন।
কিছুদিন পর গত ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে আমাদেরকে পূণরায় হয়রানী করতে আমার বাড়ীতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ক্ষতিগ্রস্থ করার পাঁয়তারা করছে। তাদের নিক্ষেপ করা এই ইট পাটকেল ছোড়ার বিকট শব্দে আশেপাশের বাড়ী-ঘরে থাকা মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এসময় বাড়ী-ঘরে থাকা মানুষ তাৎক্ষনিক বাড়ীর বাইরে বের হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এখন মামলার বাদী পক্ষ কোন উপায়ন্তর না পেয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজু মন্ডলকে দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকী প্রদান করছে।
এ ব্যাপারে জানতে মামলার বাদী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নোয়াগাঁও ইউপি’র চেয়ারম্যান মাওলানা ইউসুফ দেওয়ান বলেন, ইলিয়াস মোল্লা এলাকায় অতি গরীব ও সাধারণ খেঁটে খাওয়া মানুষ। তার বাবা ৩০ শতাংশ জমি উক্ত স্কুলের জন্য দান করেন। আমরা সবাই তাকে থাকার জন্য তিন শতাংশ জমি দেই। বর্তমানে সে রিকশা চালিয়ে তার সংসার চালায়। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক খোরশেদ আলম ও তার স্ত্রী মনিরা সুলতানা সময়মত বিদ্যলয়ে আসেনা। আমিও তাদেরকে স্কুল পরির্দশনে গিয়ে পাইনি। তাই আমি প্রশাসনের উর্দ্ধতনমহলের নিকট তাদের বিরূদ্ধে আইনের মাধ্যমে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।