প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধা বঞ্চিত জনগণের দৌরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে চালু করা হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় যেমন চিকিৎসা সেবা ব্যহৃত হচ্ছে।তেমনি যারা দায়িত্বে আছেন তাদের আবার বাড়তি চাপ পোহাতে হচ্ছে।এমন অবস্থা নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।আবার এ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় চত্বরে বসে নিয়মিত মাদকের আড্ডা।
এছাড়া নওগাঁ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র উপ-পরিচালকের কার্যালয়সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রগুলোর প্রায় একই অবস্থা।দ্রুত জনবল নিয়োগসহ নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণের দাবী জানিয়ে স্থানীয়রা।জানা গেছে,বর্ষাইল ইউনিয়নের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পদসংখ্যা পাঁচটি।যা সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো), পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি),ফার্মাসিস্ট,অফিস সহায়ক ও আয়া।
এর মধ্যে আছেন মাত্র দুইজন।তারা হলেন-এফডব্লিউভি এবং অফিস সহায়ক।২০১৬ সাল থেকে স্যাকমো,১৯ বছর থেকে ফার্মাসিস্ট এবং এক বছর থেকে আয়ার পদ ফাঁকা রয়েছে।এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এফডব্লিউভি ফিরোজা আক্তার বানু একাই নিজেরসহ স্যাকমো ও ফার্মাসিস্ট এর দায়িত্ব পালন করছেন।আর অফিস সহায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক তার নিজের সহ আয়ার দায়িত্ব পালন করছেন।প্রতিদিন প্রায় শতাধিক মানুষ এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্যাকমো না থাকায় মাসে চারদিন স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ থাকে।এ চারদিন এফডব্লিউভি ফিরোজা আক্তার বানু বিভিন্ন এলাকায় স্যাটেলাইট (গর্ভবর্তী ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবায় আলোচনা) সেবা দিয়ে থাকেন।স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ থাকায় সেবা নিতে গিয়ে ফিরে যান রোগীরা।এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি ওটি লাইট ছিল।বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সে সময় ব্যাটারিরি সাহায্যে লাইটটি জ্বালানো হতো।২০১৫ সালে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।
কিন্তু এরপর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওটি লাইটটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ায় গর্ভবর্তী নারীদের জরায়ু পরীক্ষার জন্য এখন টর্চ লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এফডব্লিউভি।আশির দশকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করা হলেও নেই চারিদিকের নিরাপত্তা বেষ্টনি।তারকাটা দিয়ে কিছুটা ঘিরে রাখা হলেও মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে।প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মাদক সেবীদের আড্ডা বসে।দায়িত্বরত এফডব্লিউভি ভয়ে তাদের কিছু বলতেও পারেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা আতোয়ার রহমান ও মিজানুর বলেন,এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিশেষ করে গর্ভবর্তী ও শিশুরা চিকিৎসা নিয়ে থাকে।এলাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র হওয়ায় চিকিৎসা পেয়ে উপকৃত হচ্ছে।দীর্ঘদিন থেকে দেখে আসছি এফডব্লিউভি তিনি মাঠে এবং কেন্দ্রেবসে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।তিনি যখন মাঠে যান সেদিন রোগীরা সেবা পান না।এছাড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় সন্ধ্যার পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চত্বরে বসে মাদকের আড্ডা।চিকিৎসা সেবা আরো বৃদ্ধির লক্ষে দ্রুত জনবল নিয়োগসহ নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরীর করার দাবী জানান তারা।
বর্ষাইল ইউনিয়নের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এফডব্লিউভি ফিরোজা আক্তার বানু বলেন,প্রায় ১৯ বছর থেকে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকরি করছি।আসার পর থেকেই দেখছি ফার্মাসিস্ট নাই।গত পাঁচ বছর থেকে নেই স্যাকমো।নিজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ দুটোর দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে।প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০- জন চিকিৎসা নিয়ে থাকে।মাসে চারদিন বাহিরে থাকায় ওইদিনগুলো স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হয়না।রোগীরা এসে ফিরে যেতে হয়।
অতিরিক্ত চাপ পড়ায় মানষিক বিষ্ণন্নতা এবং কাজ বিরক্ত লাগে।একার পক্ষে কাজ করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করি।এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় প্রতিদিন মাদকসেবীরা সন্ধ্যার পর জানালার পাশে ও টয়লেটের হাউসের ওপর বসে গাঁজা সেবন করে।গাঁজার তীব্র গন্ধে অতিষ্ট।তাদের অনেক বার নিষেধ করার পরও কোন কাজ হয়না।গরু-ছাগল এসেও নোংরা করে।কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণ ও জনবল শূন্যের বিষয়টি অনেকবার অবগত করা হয়েছে।
অফিস সহায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,জনবল কম থাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিস্কার পরিচ্ছনতা নিজেকেই করতে হচ্ছে।আয়ার কাজটা আমাকে করতে হয়।নওগাঁ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ দৈনিক কালজয়ীকে বলেন,জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।এছাড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণের বিষয়টি হেলথ ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ দেখেন।তারপরও কয়েকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণে একটা তালিকা করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
নওগাঁ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কস্তুরী আমিনা কুইনের সাথে মুঠো ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।