দুধকুমার নদের ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের দাবীতে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক,সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছিল।সম্প্রতি একনেকে দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় দুধকুমার নদের ভাঙন কবলিত মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।প্রকল্প অনুমোদনে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করে দুধকুমার নদের তীরে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়,কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে।দুধকুমার নদের ভাঙনে নিঃস্ব চর ভূরুঙ্গামারী ইউপির ইসলামপুর গ্রামের ফজলুল হক ও জাহিদুল ইসলাম জানান,নদী এ পর্যন্ত দশবার বাড়িভিটা খাইছে,জায়গায় জমি সৌউগ (সব) নদীর প্যাটোত (পেটে)।দ্বীপ চরোত (চরে) বাড়ি করি (করে) আছি।সেটেও (সেখানেও) নদী ভাঙা শুরু হইছে।শুনছি নদী বান্দার (বাঁধার) বাজেট হইছে।
এখনা (একটু) তাড়াতাড়ি নদী বান্দার কাজ শুরু হইলে বাড়ি ভাঙার হাত থাকি (থেকে) রেহাই পাইলোংহয় (পেতাম)।মোস্তফা কামাল নামে নদী ভাঙনের শিকার আরেকজন জানান,দারিদ্র এই এলাকার প্রধান সমস্যা।নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হলে এই এলাকার দারিদ্রের হার কমবে।মাওলানা ভাসানী কৃষক সমিতির সভাপতি আজাদ খান ভাসানী জানান,ভূরুঙ্গামারীর আপামর জনতার প্রাণের দাবি ছিল দুধকুমারের ভাঙন রোধ করা।দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন৩৯ প্রকল্প গ্রহণ করায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
দারিদ্র পীড়িত ভূরুঙ্গামারীর মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দুধকুমার নদের ভাঙন রোধ করা যেমন জরুরী তেমনি সোনাহাট স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে দুধকুমার নদের তীরে একটি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করা হলে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসার ঘটবে।এতে করে অর্থনৈতিক মুক্তি তরান্বিত হবে।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাস্টার বলেন,চীনের দুঃখ ছিল হোয়াংহো আর ভূরুঙ্গামারীর মানুষের দুঃখ হলো দুধকুমার নদ।দুধকুমার কালজানী নামে ভারত থেকে ভূরুঙ্গামারীর শিলখুড়ীর ইউপির পশ্চিম ধলডাঙ্গা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।দুধকুমারের ভাঙনে ভূরুঙ্গামারীর অসংখ্য পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন।এছাড়া প্রতিবছর ভাঙন অব্যাহত থাকায় উপজেলার শিলখুড়ী,তিলাই,ভূরুঙ্গামারী,পাইকেরছড়া,চর ভূরুঙ্গামারী,আন্ধারীঝাড়,বঙ্গ সোনাহাট ও বলদিয়া ইউনিয়নের শত শত বিঘা ফসলি জমি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ অসংখ্য স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভূরুঙ্গামারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে দুধকুমারের ভাঙন রোধ করে নদীর তীরে একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।এই প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমান কৃষি পণ্য ও প্রাণী সম্পদ (পশু ও মৎস) আহরণ করা সম্ভব হবে।দুধকুমার নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহানারা বেগম মীরা জানান,প্রকল্পটি পাশ হওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নদী তীরবর্তী হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি,সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও অসংখ্য বাড়ি-ঘর ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।এছাড়া বিপুল পরিমান অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে।প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ায় তিনি একনেক সভাপতি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান,জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) নির্বাহী কমিটি গত ১০ আগস্ট ৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।প্রকল্পের আওতায় ১৫টি স্থানে প্রায় ২৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজ করা হবে।নতুন করে ৪ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে।এছাড়া ৩৩ কিলোমিটার পুরনো বাঁধ সংস্কার করা হবে।আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩ লাখ মানুষ উপকৃত হবে।